টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: পঞ্চায়েতের রণকৌশল কী হবে তাই নিয়েই সিপিএমের দলীয় বৈঠক চলছিল। বৈঠকে সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রমের মতো দুই হেভিওয়েট ছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকেই বিজেপির মণ্ডল সহ-সভাপতির উপস্থিতি পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে জোর বিতর্ক তৈরি করে দিয়েছে। শুক্রবার বাঁকুড়ার খাতড়ায় সিপিএমের দলীয় এই সভায় ওই বিজেপি নেতার উপস্থিতি ফাঁস হতেই বাম-বিজেপি আঁতাঁত নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে।
বিজেপি ও সিপিএম, দু’পক্ষই এই ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে। এদিন খাতড়ায় একটি বেসরকারি লজে সিপিএমের এই বৈঠক হয়। জঙ্গলমহলে দলীয় সদস্যদের নিয়ে সিপিএমের এই বৈঠকে বিজেপির রানিবাঁধ মণ্ডলের সহ-সভাপতি লব মণ্ডলকে বৈঠক করতেও দেখা গিয়েছে। যদিও ওই বিজেপি নেতা লব মণ্ডল এদিন সিপিএমের দলীয় বৈঠকে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘সিপিএমের এই বৈঠকে ছিলাম। এটা সিপিএমের দলীয় সদস্যদের নিয়ে বৈঠক। বৈঠকে আমি লোক নিয়ে এসেছিলাম। তাই এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম।’’
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে কুরুচিকর আক্রমণ, বাড়িতে তল্লাশির পর গ্রেপ্তার কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি]
সিপিএম ও বিজেপির আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। জঙ্গলমহল বাঁকুড়ার খাতড়ায় সিপিএমের ওই বৈঠকের পর ফের তা নিয়ে সরব হয়েছে ঘাসফুল শিবির। দলীয় সভায় বিজেপি নেতার এহেন উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিপিএমের জেলা সম্পাদককে অজিত পতির সাফাই, কীভাবে ওই বিজেপি নেতা আমাদের এই দলীয় সভায় উপস্থিত হলেন তা নিয়ে জানতে চাওয়া হবে রানিবাঁধ এরিয়া কমিটির সদস্যদের কাছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে পদ্মফুল শিবিরের সঙ্গে সিপিএমের আঁতাঁতের অভিযোগ মানতে নারাজ অজিতবাবু।
তবে বিজেপির রানিবাঁধ মণ্ডলের ওই সহ-সভাপতি লব মণ্ডলের কথায়, ‘‘২০০৮ সাল থেকে আমি সিপিএম করি। ২০০৯ সালে আমি সিপিএমের সদস্যপদ পাই। তারপর স্থানীয় রানিবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএমের প্রতীকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও হয়েছিলাম। তবে ২০১৯ সালে রাজ্য বিজেপির উত্থান দেখে বিজেপিতে যোগদান করেন লববাবু। বিজেপিতে নাম লেখানোর পরেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে সিপিএম।
তারপর জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ ব্লকে বিজেপির একাধিক মিটিং-মিছিল করেছেন তিনি। গত ২০২২ সালের মে মাসে দলীয় রদবদলের পর বিজেপির রানিবাঁধ ব্লকে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তিনি বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছেন। এদিকে দলীয় নেতার এহেন ঘটনা ফাঁস হতেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিজেপির রানিবাঁধ মণ্ডলের সভাপতি তপন মণ্ডল। এই প্রসঙ্গে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীল রুদ্র মণ্ডল নানা কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।
এদিকে তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘সিপিএম বিজেপির আঁতাত আরও একবার প্রমাণিত হল খাতড়ায়। ২০১৯ সাল থেকে সিপিএমের ভোটেই সমৃদ্ধ হচ্ছে বিজেপি। এই দুই দলের নেতা,কর্মীরা ভুলে গিয়েছেন কে কোন দলের কর্মী। সেটা এদিনের ঘটনায় পরিষ্কার।