সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রথম দফা শেষ হওয়ার পর মেরুকরণের অংকে প্রচারে ঝড় তোলার শুরুটা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তাঁর দেখানো পথেই এবার ধর্মের বাঁশিতে ফুঁ দিতে শুরু করেছেন বিজেপির বাকি নেতারাও। ভোটপ্রচারে এবার মোদির মতোই বিজেপির (BJP) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের (Anurag Thakur) দাবি, "কংগ্রেস (Congress) আপনার সন্তানের প্রাপ্য সম্পত্তি মুসলিমদের হাতে তুলে দিতে চায়।"
শনিবার হিমাচলের হামিরপুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন অনুরাগ ঠাকুর। সেখানেই কংগ্রেসকে আক্রমণ শানাতে গিয়ে হিন্দু-মুসলিম ইস্যু তুলে ধরে তিনি বলেন, "কংগ্রেসের ইস্তেহারে কংগ্রেসের হাতের সঙ্গে বিদেশি শক্তির হাত স্পষ্ট চোখে পড়ছে। কংগ্রেস আপনাদের সন্তানের সম্পত্তি মুসলিমদের দিতে চায়। যারা দেশের পরমাণু অস্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়, যারা জাতির নামে দেশকে ভাঙতে চায়, সেই টুকরে টুকরে গ্যাং দ্বারা প্রভাবিত কংগ্রেস। আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই টুকরে টুকরে গ্যাং কংগ্রেসকে সমর্থন করবেন না কি এক ভারত গড়তে নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করবেন?" একইসঙ্গে বলেন, "সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে, আপনার সম্পত্তি মুসলিমকে দেবেন, না কি সন্তানকে দেবেন?"
[আরও পড়ুন: ব্যস্ত জিটি রোডের মাঝে চেয়ার পেতে বসে বাহাদুরি! রিলের নেশায় হাজতে ঠাঁই যুবকের]
এ ছাড়াও কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে অনুরাগ বলেন, "রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে দেশে আইন ছিল ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির ৫৫ শতাংশ সরকারের খাতায় চলে আসবে। যদিও সেই আইন পরিবর্তন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। নিজের সম্পত্তি বাঁচিয়ে নেন তিনি। এদিকে রাহুল গান্ধী নিজে তো বিয়ে করলেন না, তাই তিনি এবার সিদ্ধান্ত নিলেন আপনাদের সম্পত্তি নিয়ে নেওয়া হোক। আসলে গান্ধী পরিবারের যখন যেটা নিজেদের জন্য সুবিধাজনক মনে হয় তখন সেটা করেন।"
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানান মোদি। প্রথম দফা নির্বাচন শেষে গত রবিবার রাজস্থানের একটি সভায় গিয়ে তিনি বলেন, “সরকারে থাকাকালীন কংগ্রেস (Congress) বলেছিল দেশের সম্পদের উপর মুসলিমদের অধিকার সকলের আগে। অর্থাৎ দেশের সম্পদ বন্টন করা হবে তাদের মধ্যে, যাদের পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে দেশের সম্পদ। কংগ্রেসের ইস্তেহারেই বলা হয়েছে, মা-বোনদের সোনার গয়নার হিসেব করে সেই সম্পদ বিতরণ করা হবে। মনমোহন সিংয়ের সরকার তো বলেই দিয়েছে, দেশের সম্পদে অধিকার মুসলিমদেরই। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ দেবে না।”
[আরও পড়ুন: স্বামীর মৃত্যুর ১২ দিনের মাথায় চাকরিহারা, কোলের মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা মালদহের আবীরা]
ইতিমধ্যেই মোদির মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব কয়েছে কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনে মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, "কংগ্রেস বিজেপির তৈরি করে দেওয়া পিচে ব্যাট করবে না। বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধির পিচে খেলবে। মোদি চাইছেন এজেন্ডাটিকে অন্য অভিমুখে ঘুরিয়ে দিতে। প্রথমে আমাদের ইস্তেহারকে সাম্প্রদায়িক রং দিতে চাইলেন। তার পর এমন সব কথা বলতে লাগলেন, যেগুলো ‘ন্যায়পত্র’-তে আদৌ নেই! উনি আমাদের ইস্তেহারেরই প্রচার করছেন। তবে ভুল প্রচার দিচ্ছেন।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, "মোদি এখন ‘আব কি বার চারশো পার’ কিংবা ‘মোদি কি গ্যারান্টি’র মতো স্লোগান বলছেন না। বরং মেরুকরণের নতুন ভাষায় কথা বলছেন। মেরুকরণ বরাবরই তাঁর অস্ত্র। কিন্তু উনি এখন সেই ভাষা নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করছেন মনোযোগ আকর্ষণ করতে।” মোদির দেখানো পথেই এবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। এদিকে মোদির পাশাপাশি অনুরাগের বিরুদ্ধেও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে হাত শিবির।