নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: রাজ্যের মতুয়ারা যে তাদের উপর একেবারেই সন্তুষ্ট নয়, তা ভালই বুঝতে পারছে বিজেপি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) কার্যকর করে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি পাকা না করলে মতুয়া ভোটব্যাংক যে বিজেপির থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে, তার আভাসও পেয়ে গিয়েছেন বিজেপির (BJP) কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে মতুয়া ভোট ধরে রাখতে মরিয়া তাঁরা। তাই চলতি বছরের মধ্যেই যাতে অমিত শাহর দপ্তরের পক্ষ থেকে সিএএ চালু করার বিষয়টি পাকা করা হয়, সেদিকে নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।
আবার যদি একান্তই তা সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প পথে কীভাবে মতুয়াদের (Motua) ‘নাগরিকত্ব’ দেওয়ার যায় সে নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বিজেপির অন্দরে। এ প্রসঙ্গে, বিজেপির এক কেন্দ্রীয় শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, “মতুয়াদের মধ্যে নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে ক্ষোভ যে তৈরি হয়েছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি। তবে, এই ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা চলছে। এ বছরের মধ্যেই কোনও না কোনও ব্যবস্থা অবশ্যই করা হবে।”
এদিকে চলতি বছরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (WB Panchayet Election) হওয়ার কথা। পঞ্চায়েত নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। বরং তাঁরা যে এখন থেকেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ রেখে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন, সেটাই উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় নেতার কথায়। তিনি বলেছেন, “পঞ্চায়েতের বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্ব দেখছে। দেখা যাক কী হয়। আমরা লোকসভা নির্বাচনে বাংলার জন্য ৩০ থেকে ৩২টি আসন টার্গেট করেছি। গতবার আমাদের ১৮টি আসন ছিল, এবার সেটা বাড়বে। মোদিজির ম্যাজিক সেখানে চলবে। যে সমস্ত লোকসভা আসনে সংখ্যালঘু ভোটের আধিক্য রয়েছে সেগুলি আমাদের লক্ষ্য নয়। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় আসন পাওয়ার উপর জোর দিচ্ছি আমরা।”
[আরও পড়ুন: একটা গরুও যেন ঠান্ডায় না মরে, আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ যোগীর]
মতুয়ারা যে নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে অসন্তুষ্ট, সে কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে একাধিকবার তুলে ধরেছেন বনগাঁর বিজেপির সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর (Santanu Thakur)। নাগরিকত্ব ইস্যু তো রয়েইছে, সঙ্গে মতুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আরও অনেক কারণেই। মতুয়া নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এমনকী, এখনও পর্যন্ত যে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কমিটিই তৈরি হয়নি, সেই বিষয়টি তুলে ধরে সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার (JP Nadda) সামনেই সরব হয়েছিলেন শান্তনু।
[আরও পড়ুন: বাংলাকে বদনামের চেষ্টা বরদাস্ত নয়, বন্দে ভারতে পাথর ছোঁড়া ইস্যুতে ফুঁসে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী]
বনগাঁর সাংসদ নাড্ডার বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন, শুধু জেলা সভাপতি আর তার নিচে একজন আহ্বায়ককে অস্থায়ী দায়িত্ব দিয়ে কতদিন চলবে? মতুয়াদের যে সমস্ত নেতার উপর ভর করে বিজেপি সেখানে ভাল করেছে তাঁদের বাদ দিয়ে অন্যদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও নাড্ডার সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শান্তনু। নাম না করলেও শান্তনুর অভিযোগের তির যে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর দিকেই ছিল তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারও।