সৌরভ মাজি, বর্ধমান: আইন পাশ হওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও কেন লাগু হচ্ছে না নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)? প্রশ্ন তুলে এবার কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিঁধলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর (Santanu Thakur)। রবিবার কালনার শ্রীরামপুরে মতুয়া মহাসংঘের মহা সম্মেলনে মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের উদ্দেশে শান্তনু বলেন, “২০১৯ সালে আইন হলেও তা কার্যকর করতে এত ভয় কিসের? বিরোধিতার ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। দাঙ্গার ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। কেউ দাঙ্গা করলে সেটা আমরা বুঝে নেব।”
এটাই প্রথম নয়, এর আগে দ্রুত নাগরিকত্ব আইন লাগু করতে চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন বনগাঁর সাংসদ। কারণ, বনগাঁ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি মতুয়াদের বসবাস। CAA লাগু হলে সবচেয়ে উপকৃত হবেন তাঁরাই। আর তা নিয়ে চাপে মতুয়াদের প্রতিনিধি শান্তনু ঠাকুরও। তাই তিনি বারবারই কেন্দ্রের কাছে আইনটি কার্যকর করার আবেদন জানাচ্ছেন। এমনকী এই ইস্যুতে মাঝে দলের সঙ্গে তাঁর সাময়িক দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। পরে অবশ্য বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে মানভঞ্জন করেন। অমিত শাহও জানিয়ে দেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে, ভ্যাকসিন আসার পরই CAA কার্যকর করা হবে।
[আরও পড়ুন: ‘দিদির সঙ্গে আছি’ বার্তা দিয়েও অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে জিতেন্দ্র, তুঙ্গে জল্পনা]
এই অবস্থায় এদিন কালনার সভায় নাগরিকত্ব ইস্যুতে বক্তব্য রাখলেন শান্তনু ঠাকুর। কেন্দ্রের পর এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারেরও সমালোচনা করেন তিনি। CAAর বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার জানিয়েছেন, এ রাজ্যে আইন কার্যকর করতে দেবে না তাঁর সরকার। সম্প্রতি বনগাঁর জনসভা থেকে তাঁর বার্তা, ”ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা রেশন কার্ড রয়েছে, মতুয়ারা ভারতেরই নাগরিক।” এ নিয়ে বিজেপি সাংসদের সতর্কবাণী, “আপনি ভারতবর্ষের নাগরিক হতে পারছেন না যতক্ষণ না সিটিজেনশিপ কার্ড হাতে পাচ্ছেন। তার দাবিতে লড়াই, আন্দোলন করব আমরা।”
[আরও পড়ুন: ‘দেড়জনে সরকার চালায়, আমি ল্যাম্পপোস্ট ছিলাম’, তৃণমূলকে আক্রমণ শুভেন্দুর]
সভায় তিনি জানান, ২০০৩ সালের আইন অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা অন্য দেশ থেকে ভারতে এসেছেন, তাঁরা ভারতবর্ষের নাগরিক নন। আর এই মানুষদের অধিকারের জন্যই মতুয়া মহাসংঘ লড়বে। তিনি বলেন, “৫০ বছর পর এই কেন্দ্রীয় সরকার নাও থাকতে পারে। সামনের টার্মে এই রাজ্য সরকার নাও থাকতে পারে। ৫০ বা ১০০ বছর পর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনও সরকার বলবে তোমাদের পূর্ব পুরুষ ভারতীয় ছিল না। তোমরা ভারতে থাকতে পারবে না তা হবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দায়িত্ব কে নেবে, কেন্দ্র সরকার না রাজ্য সরকার। সিটিজেনশিপ কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই করব।”