বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীকে (Sukanta Majumdar)কার্যত তুলোধনা করলেন দলেরই সাংসদরা। গোষ্ঠীকোন্দল ও নেতৃত্বের একতরফা মনোভাবের জন্যই বাংলায় ডুবছে বিজেপি (BJP)। এমনই সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা (JP Nadda), পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল, অমিত মালব্যদের কাছে নালিশ জানালেন একাধিক সাংসদ। সোমবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের বাসভবনে বাংলার সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানেই বঙ্গ নেতাদের বিরুদ্ধে সাংসদরা ক্ষোভ উগড়ে দেন বলে সূত্রের খবর।
বৈঠকে ঢোকার আগেই দলের অভ্যন্তরে গোষ্ঠীকোন্দলের কথা স্বীকার করে নেন সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তিনি জানান, আলোচনা অনেক বিষয় নিয়ে হলেও গোষ্ঠীকোন্দল অনেকটাই মিটে যাবে বলেই আমি মনে করি। সূত্রের খবর সাংসদদের একাংশের অভিযোগ, দু’বছরের ব্যবধানে সংগঠন তলানিতে। তবে দিল্লিতে সাংসদদের বৈঠকে শুভেন্দুর থাকা নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। শুভেন্দুকে নিশানা করে আসানসোলে পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে কুণাল ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু আসানসোলে মৃতদের ও আহতদের পরিবারের পাশে না দাঁড়িয়ে কোন লজ্জায় দিল্লিতে পা রেখেছেন? ওঁর ও ওঁদের জন্য ঘটনা ঘটার সময় কাছাকাছি থাকলেও ঘটনাস্থলে আসেনি। পালিয়ে গিয়েছিল। তৃণমূলের নেতানেত্রী ও সাধারণ মানুষকে উদ্ধার কাজ করতে হয়েছে।”
শীতের রাতে বৈঠকের উত্তাপ ছড়াল বঙ্গের গেরুয়া শিবিরে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, রাজ্যের পর্যবেক্ষক, সাংসদ ও রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠক যেন পরিণত হলো মেছো হাটে। চললো দোষারোপ, পালটা দোষারোপের পালা। সূত্রের খবর, সাংসদদের নিশানায় ছিলেন সুকান্ত (Sukanta Majumdar), শুভেন্দু ও রাজ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। দলের সঙ্গে সাংসদ ও বিধায়কদের কোনও সমন্বয় নেই বলে অভিযোগ তোলেন এক সাংসদ। সমন্বয় রক্ষায় শীর্ষনেতৃত্বের কাছে উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানান হয় বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও দলের শীর্ষনেতৃত্ব যেভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন, তাতে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। কর্মীরা দিশাহীন হয়ে পড়ছেন। কর্মীদের ধরে রাখতে এখনি গোষ্ঠী রাজনীতি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানান হয় নাড্ডার কাছে। সেইসঙ্গে সংগঠন মজবুত করতে জনসংযোগে জোর দেওয়ার আবেদন জানান সাংসদরা।
[আরও পড়ুন: গ্যাস সিলিন্ডার মিলবে মাত্র ৫০০ টাকায়! বড় ঘোষণা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর]
সংগঠন মজবুত করতে না পারলে লোকসভায় ভরাডুবি হবে। আর পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayet Election) অর্ধেকের বেশি আসনেই প্রার্থী দেওয়া যাবে না। দুর্বল সংগঠনের পাশাপাশি সংরক্ষণের গেরোয় প্রার্থী খুঁজে পাওয়া কার্যত অসম্ভব হবে বলে আগেভাগেই নাড্ডাকে অনুযোগ জানিয়ে রাখলেন সাংসদরা। এক সাংসদের প্রস্তাব, যেখানে প্রার্থী দেওয়া যাবে না, সেখানে তৃণমূল বিরোধী কোনও প্রার্থীকে সমর্থন করুক দল। সেক্ষেত্রে অন্যদলের প্রতীকে জিতে আসা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের সদস্যকে পরে দলে টেনে নেওয়া যাবে। পঞ্চায়েতের তিনস্তরেই যেখানে দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভব হবে না সেখানে দলের প্রার্থীকে নির্দল হিসাবে লড়াইয়ের কৌশল নেওয়া যেতে পারে। শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন একাধিক সাংসদ বলে সূত্রের খবর। সবদিক বিবেচনা করেই পঞ্চায়েত ভোটের কৌশল ঠিক হোক বলে দাবি জানান এক সাংসদ।
[আরও পড়ুন: অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা রুখতে নয়া কৌশল? পুরনো হত্যামামলায় দুবরবাজপুর আদালতে পেশ]
সূত্রের খবর, অভিযোগ ও অনুযোগ শোনার পরই দলের অভ্যন্তরে কোনওরকম গোষ্ঠী করা যাবে না বলে স্পষ্ট করেন নাড্ডা। তিনি জানান, দিল্লি থেকে সবরকমের সাহায্য করা হবে। জনসংযোগ বাড়াতে কেন্দ্রের মন্ত্রীরা ধাপে ধাপে রাজ্যে যাবেন। কিন্তু দলে আরও নেতা ও কর্মী বাড়াতে পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদের গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই লোকসভা ভোটে আশানুরূপ ফল হবে বলে জানান তিনি।