রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: দলের জাতীয় কর্মসমিতির আমন্ত্রিত সদস্য করা সত্ত্বেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি ছেড়ে তাঁর পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। তা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে বিজেপি। দল ছাড়ার প্রবনতা রয়েছে, এরকম কাউকে রাজ্য কমিটির কোনও শীর্ষ পদে রাখা নিয়ে এবার সতর্ক গেরুয়া শিবির। একইসঙ্গে দলের আদর্শ মেনে চলা ও পার্টির ইতিহাস জানার পাঠও নব্যদের দেওয়ার ভাবনাচিন্তা চলছে বলেই খবর।
দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এপ্রসঙ্গে জানান, “দল ছাড়ার প্রবনতা রয়েছে এরকম কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভাবনাচিন্তা করা হবে। আর নতুনদের পাঠ দিতে পার্টিতে তো প্রশিক্ষণ হয়। নতুনরা এসেছে, এটা দিতেই হবে। তবে যারা ক্ষমতার লোভে দলে এসেছিলেন স্বার্থ সিদ্ধি না হওয়ায় তাঁরা থাকতে পারছেন না। দলের পুরনো কর্মীরা নীতিআদর্শ মেনে ঠিকই রয়েছেন।”
একুশের ভোটে দলের বিপর্যয়ের পর নিচুতলায় তো বটেই একাধিক জনপ্রতিনিধি এবং নেতারা বিজেপি ছেড়ে ফের তাঁদের পুরনো দল তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে অন্যতম দুই নাম মুকুল রায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। আর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক মাস আগেই দলের শীর্ষ কমিটি জাতীয় কর্মসমিতির আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছিল। আবার দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক পদে থাকা সব্যসাচী দত্তও পদ্মশিবির ছেড়ে ফের তৃণমূল শিবিরে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাত ধরে এঁরা প্রত্যেকেই গেরুয়া শিবিরে এসেছিলেন। তাঁদেরকে দলে গুরুত্বপূর্ন পদেও বসানো হয়। কিন্তু তারপরও মুকুল রায়, রাজীব ও সব্যসাচীদের দল ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মুখই পুড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: Coronavirus Update: কলকাতায় অনেকটাই কমল দৈনিক করোনা সংক্রমণ, নিম্নমুখী পজিটিভিটি রেটও]
দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, রাজীব-সব্যসাচীরা বেসুরো ছিলেন। রাজীব তো নয়ই, সব্যসাচীকে সেরকম সক্রিয়ভাবে দেখা যায়নি ভোটের পর দলের কর্মসূচিতে। তাঁদের কেন গুরুত্বপূর্ন পদ দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ রাজ্য বিজেপির নেতা-কর্মীদের বড় অংশই। দলীয় সূত্রে খবর, দলীয় নেতারা দল ছেড়ে বিরোধী শিবিরে একের পর এক চলে যাওয়ার ধাক্কার পর রাজ্য কমিটির কোনও পদেই বিরোধী শিবিরে যাওয়ার প্রবনতা রয়েছে এরকম কাউকে না রাখারই ভাবনাচিন্তা নিয়েছে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এক রাজ্য নেতার কথায়, অন্য দল থেকে আসা নেতারা বিজেপির গুরুত্বপূর্ন পদ পেয়েও দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন। এটা সাধারণ কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা খাচ্ছে। দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের এর থেকে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে আনাটা অনেক ভাল।
দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অনেক দালাল নির্বাচনের আগে দলে ঢুকে গিয়েছেন। তাঁদের সকলকে বাদ দেওয়া হবে। কালীপুজো মিটলেই নভেম্বর মাসের মধ্যে বঙ্গ বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি গঠন হতে চলেছে। অন্য দল থেকে আসা ও তাদের বহু অনুগামী এখনও বিজেপিতে আছেন। তাঁদের অনেকেই পদের দাবিদারও। তাই দল ছাড়ার প্রবনতা রয়েছে এবং দলে নব্য আসাদের বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা দেওয়ার আগে সতর্ক শীর্ষ নেতৃত্ব। অনেককেই বলা হতে পারে, দলের নীতি-আদর্শ মেনে আরও কিছুদিন কাজ করতে। বিজেপির আদর্শ মেনে তিনি চলছেন, এই প্রমান দিতে হবে। তারপর তাঁদের পদে নিয়ে আসা হবে। একইসঙ্গে দলে আসা নব্যদের পার্টির ভাবধারার সঙ্গে খাপখাওয়াতেও তৎপর গেরুয়া শিবির। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, আমাদের যারা নেতা-কর্মী তাদের পার্টির ইতিহাসটা পড়া উচিত। হরিপদ ভারতীর মতো নেতা অনেক অফার পেয়েও কখনও দল বদল করেননি। রাজ্য বিজেপিতে বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী, তপন শিকদারের মতো নেতারা যেভাবে দলের আদর্শ মেনে কাজ করেছেন সেই ইতিহাসও নতুনদের জানা উচিত বলে মনে করেন শমীকবাবু।