সুকুমার সরকার, ঢাকা: গৃহযুদ্ধে জ্বলছে মায়ানমার। উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তও। ক্রমাগত পড়শি দেশ থেকে উড়ে আসছে গোলাগুলি। দিন তিনেক আগেই মর্টারশেলের আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল ২ জনের। এবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে দেখা গেল মর্টারশেল কুড়চ্ছে বাচ্চারা। মনে করা হচ্ছে, সেটির বিস্ফোরণ ঘটেনি। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে এবার সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগল বিএনপি।
জানা গিয়েছে, মর্টারশেলটি যে জায়গা থেকে পাওয়া গিয়েছে সেখান থেকে মায়ানমার সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার। এনিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকার বাচ্চারা কাঠ কুড়তে গিয়ে মর্টারশেলটি পায়। এর পর তারা বস্তায় ভরে সেটি নিয়ে আসে। খবর পেয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যরা সেটি নিজেরদের হেফাজতে নিয়ে যান। ঝুঁকি বুঝে বিজিবি মর্টারশেলটি এলাকা থেকে দূরে একটি পুকুরের মধ্যে রেখে দেন।
এদিকে উত্তপ্ত এই পরিস্থিতির জেরে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয় বিএনপি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “মায়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকেরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। সীমান্তে নারী-পুরুষ কেউ নিরাপদ নন। প্রাণহানি ঘটছে মর্টারের শেলে। বাংলাদেশের চারদিকে সীমান্ত এলাকায় এখন রক্তক্ষয়ী খেলা চলছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর ছোড়া অস্ত্রের আঘাতে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও দেশের মাটি অসুরক্ষিত। পড়শি দেশ থেকে দলে দলে লোক বাংলাদেশে ঢুকছে। কিন্তু দেশের সরকার নীরব রয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত সোমবার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের উপর মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে নিহত হন একজন বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা পুরুষ। মায়ানমারে জুন্টার সঙ্গে আরাকান আর্মির গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোতে অনবরত গোলা আছড়ে পড়ছে। এর আগেও কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর মিলেছিল।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য খালেদা বেগম জানিয়েছেন, “সোমবার থেকে স্থানীয় লোকজন কক্সবাজার ও ঘুমধুম এলাকায় যার যার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়ি থেকে কেউ বাইরে বেরচ্ছেন না। দোকান-পাট বন্ধ। রাস্তায় আগের মতো লোকজন।” মান্তঘেঁষা গ্রাম তুমব্রু কোণারপাড়া, তুমব্রু মাঝেরপাড়া, ভাজাবনিয়া পাড়া, তুমব্রু বাজারপাড়া, চাকমা হেডম্যান পাড়া, তুমব্রু পশ্চিমকূল পাড়া, ঘুমধুম নয়াপড়া, ঘুমধুম পূর্বপাড়া ও ঘুমধুম মধ্যমপাড়ার বাসিন্দাদের মাইকিং করে সরে যেতে বলা হচ্ছে। মায়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ধৈর্য ধরতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদ।