মুম্বই পুলিশ, এনকাউন্টার, আরব সাগরের তীরে আটের দশকের আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের নৈরাজ্য.. যাবতীয় বিষয় নিয়ে নেটফ্লিক্স-এ মুক্তি পেল ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’। কেমন হল? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক- অতুল সভরওয়াল
অভিনয়ে- ববি দেওল, অনুপ সোনি, জয় সেনগুপ্ত, ভূপেন্দ্র জাদাওয়াদ।
আটের দশকের মুম্বইয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের দাপাদাপি ঠিক কতটা ছিল? তা নিয়েই একটি বই লিখেছিলেন সৈয়দ হোসেন জায়দি- ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি: পানিশারস অফ মুম্বই পুলিশ’। খুন, স্মাগলিং, বিদেশি দ্রব্যের কালোবাজারি, রাহাজানি… অন্ধকারজগতের ছায়া মায়নগরীর পুলিশ প্রশাসনে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলেছিল, সেই সম্পর্কিত মোটামুটি একটা আন্দাজ পাওয়া যায় এই বই থেকে। আর জায়দির লেখা সেই বাস্তব দলিলের আঁধারেই তৈরি হয়েছে অতুল সভরওয়ালের ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’। জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যে কতটা কঠিন, একাধিক সৎ পুলিশ অফিসারকেই তা হাড়ে হাড়ে টের পেতে হয়েছে। সেই বইয়ের নির্যাস রেখেই আঁকা হয়েছে ববি দেওলের অভিনীত বিজয় সিং চরিত্রটি।
সে সময়ে অপরাধজগতের একাধিক চক্রের পাণ্ডাদের শায়েস্তা করতে পুলিশ আধিকারিকদেরও কখনও কখনও গিরগিটির ভেক ধরতে হত। নকলি এনকাউন্টারের গপ্পো ফেঁদে খতম করতে হত স্মাগলার চক্রের একের পর এক পাণ্ডাকে। একদিকে সিস্টেমে থেকে সিস্টেমের সঙ্গে লড়াই, স্বার্থান্বেষী প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন… আর অন্যদিকে গ্যাংস্টারদের দাপট, এমকাউন্টারের পর হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রবল সমালোচনা, কটাক্ষ… খাকি উর্দি গায়ে সবদিকই সামাল দিতে হত। হাজার হলেও দেশের নুন খাওয়া পুলিশ অফিসাররা আর যাই হোক ‘গদ্দারি’তে স্বভাবসিদ্ধ হতে পারবে না! যার জেরে কখনও পরিবার, আপনজনের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হত, আবার কখনও বা কপালে জুটত পানিশমেন্ট পোস্টিং, সেরকমই এক পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসার বিজয় সিংয়ের চরিত্রে দেখা গেল ববি দেওলকে। সঙ্গে তাঁর ব্যাচের পাঁচ খারাপ ছাত্রকে নিয়ে অসাধ্যসাধন। এই হল ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’র মূল গল্প। তবে কী সেই অসাধ্যসাধন, তা জানতে হলে ছবি দেখতে হবে।
[আরও পড়ুন: ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’ রিভিউ: ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ পাইলটের ভূমিকায় বেমানান জাহ্নবী]
মুম্বই পুলিশ, আন্ডারওয়ার্ল্ড দুনিয়া, প্রশাসনিক ফাঁক-ফোকড়, ঘুণ ধরা কাঠামো… ডন-পুলিশ ইঁদুর-বিড়াল দৌঁড়াদৌড়ি রোমাঞ্চ, সব উপকরণ মজুত থাকলেও কেমন যেন ঘেঁটে গেল ছবিটা। আর ঘেঁটে যাওয়ার ত্রিশ শতাংশ দায় অনায়াসে চাপিয়ে দেওয়া যায় ববি দেওলের আড়ষ্ট অভিনয়ের উপর। চ্যালেঞ্জিং জায়গাগুলোতে যেখানে আরও কিছু আবেগ-অনুভূতি ডিমান্ড করছিল, কীরকম যেন ভাবলেশহীন মনে হল অভিনেতাকে। পরিচালকও বইয়ের বাইরে গিয়ে একটু অন্য ধারার ভাবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে লাভ কিছুই হল না! ভরাডুবিসম ঠেকল!
তবে হ্যাঁ, একথা উল্লেখ করতেই হয় যে, সিনেমায় কাস্টিংয়ের চাকচিক্য না রেখেই গল্প তুলে ধরেছেন পরিচালক। জাকজমকের থেকে তিনি বেশি ফোকাস করেছেন গল্পে। তবে মনে ধরল না ববি অভিনীত চরিত্রটি। কোথায় সেই চ্যালাঞ্জ, পোড় খাওয়া প্রতিশোধস্পৃহ সেই পুলিশি দাপট? সবটাই অনুপস্থিত। চাইলেই পরিচালক আরও নিপুণ বুনোট করতে পারতেন। পুলিশি পাঠের ছবি হয়ে উঠতে গিয়েও মধ্যমমানের পারফর্মেন্সের জন্য মুখ থুবড়ে পড়ল ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’।
[আরও পড়ুন: ‘খুদা হাফিজ’ রিভিউ: রসদ মজুত থাকলেও ঠিক জমল না]
The post ‘ক্লাস অফ 83’ ফিল্ম রিভিউ: আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব বারুদ মজুত থাকলেও আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ ববি appeared first on Sangbad Pratidin.