স্টাফ রিপোর্টার: যতই গগনচুম্বী ফ্ল্যাট, শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স গড়ে উঠুক। এখনও উত্তর কলকাতার অলিগলিতে সাবেকিয়ানার ছোঁয়া বজায় রয়েছে। কালের পরিবর্তন হলেও বনেদি বাড়ির সেই সাবেকি পুজো, আচার-আচরণে কোনও বদল আসেনি। উত্তর কলকাতার লাহা বাড়ির প্রতিটি ইটে যেন ইতিহাস কথা বলে। মহানন্দ লাহাকে লাহা পরিবারের আদিপুরুষ বলা হয়ে থাকে। তাঁদের বংশধর মধুমঙ্গল লাহা। তাঁর হাত ধরে লাহা পরিবারে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছে।
প্রায় ২২৫ বছর ধরে লাহা বাড়িতে দুর্গাপুজো (Bonedi Bari Durga Puja in Kolkata) হয়ে আসছে। লাহাদের আদিবাড়ি চুঁচুড়ায়। সেখানে প্রথম একচালায় দুর্গাপুজো করেছিলেন মধুমঙ্গল লাহা। তাঁর পুত্র রাজীবলোচন লাহার তিন পুত্র প্রাণকৃষ্ণ, নবকৃষ্ণ ও শ্রীকৃষ্ণ লাহা এই তিন পরিবারের সদস্যরা পালা করে পুজো করে থাকেন। চুঁচুড়া থেকে কলকাতায় আসার পর কলুটোলার জাকারিয়া স্ট্রিটের ভাড়া বাড়িতে পুজো শুরু হয়। ১৮৫৭ সালে লাহা পরিবার ১ নম্বর বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিটে বাড়ি কিনে ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন করে।
[আরও পড়ুন: ছুরি মেরে স্ত্রীকে খুনের পর আত্মঘাতী স্বামী, হাড়হিম হত্যাকাণ্ড হরিদেবপুরে!]
এ বছর পুজোর পালা মেজো তরফের, নবকৃষ্ণ লাহার পরিবারের। ঠনঠনিয়া ১ নম্বর লাহাবাড়িতে এখন সাজ সাজ রব। জন্মাষ্টমীর পর নন্দোৎসবে কাঠামো পুজো হয়। সেই সঙ্গে গণেশ বন্দনা। ছোট্ট গণেশ দুর্গার সঙ্গে থাকা গণেশের মূর্তির ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তৈরির সময়। লাহা বাড়ির পুজোয় একচালার প্রতিমা থাকে। এখানে প্রতিমা ত্রিশূল হাতে অসুরসংহারী নন। গৌরী এখানে শিবঠাকুরের কোলে বসে থাকেন। বামদিকে সরস্বতী, কার্তিক, ডানদিকে লক্ষ্মী-গণেশ। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে লাহা পরিবারের কুলদেবী হিসাবে শ্রী শ্রী জয় জয় মাতার পুজো করে থাকেন। ঠাকুরদালানে হরপার্বতীর সামনে অষ্টাধাতুর মূর্তটি রাখা হয়।
লাহা পরিবারের বংশধর সুস্মেলী দত্ত বলেন,”সপ্তমীর দিন কুলদেবীকে স্নান করিয়ে ঠাকুরঘর থেকে নিয়ে এসে ঠাকুরদালানে একটি রুপোর সিংহাসনে বসানো হয়। লাহা বাড়িতে পুজোর দিনগুলি নিরামিষ। সন্ধিপুজোয় কুমড়োর সঙ্গে শশা বলি দেওয়া হয়। দশমীর দুপুরে আমিষ খাওয়া হয়। এখানে পুজো ক’দিনে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। ভোগে লুচি, আলুনি, বেগুনভাজা, তরকারি, ফুলুরি-সহ বিভিন্ন মিষ্টি থাকে।” লাহা বাড়িতে প্রতিপদ থেকে ভিয়েন বসে। তারপর থেকে একের পর এক মিষ্টি তৈরি হয়। যেমন – তিলের নাড়ু, মুগের নাড়ু, চুম্বের নাড়ু, ছোলার নাড়ু, মোয়া, দরবেশ, বেলা পিঠে, গজা, লবঙ্গলতিকা, প্যাঁড়া, ক্ষীর ইত্যাদি।
দশমীর দিন শুধুমাত্র লাহা পরিবারের ছেলেরাই পুষ্পাঞ্জলি দেন। সেদিন সকালে পুরুষরা ঠাকুরদালানে গিয়ে দোয়াত কলম দিয়ে বেলপাতায় শ্রী শ্রী দুর্গা সহায় লিখে প্রতিমার কাছে রাখে। বিসর্জনের সময় সেগুলিকে প্রতিমার সঙ্গে জলে ফেলে দেওয়া হয়। বাড়ি থেকে প্রতিমা বের করার সঙ্গে সঙ্গে সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিসর্জনের পর ঘট নিয়ে ফিরে এলে বাড়ির কর্তা সদর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। মা আছেন ঘরে? তিনবার জিজ্ঞেস করেন তিনি। ‘হ্যাঁ আছি’ বলে ভিতর থেকে গৃহকর্ত্রী উত্তর দিলেই তবেই সদর দরজা খোলা হয়।