বাবুল হক, মালদহ: প্রাচীন পুজো বলে কথা। কখনওই থিমের চমক নয়, নিষ্ঠা আর ভক্তিই আসলে মাতৃ আরাধনার মূল ঐতিহ্য। যা আজও অটুট রয়েছে মালদহ (Maldah) শহরের দুর্গাবাড়ি মোড় এলাকার আদি কংসবণিক পরিবারের পুজোয়। ইংলিশবাজার শহর ঘেঁষেই বয়ে গিয়েছে মহানন্দা নদী। প্রায় ৩৫০ বছর আগে মহানন্দা নদীর নিমতলা ঘাটে পাওয়া গিয়েছিল মা দুর্গার (Durga Puja) চণ্ডী রূপের এক পাথরের মূর্তি।
এক বৃদ্ধা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মূর্তিটি মহানন্দা নদী (Mahananda River) থেকে সংগ্রহ করে নিমতলা ঘাটে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল দুর্গা পুজো। পরে সেই বৃদ্ধা প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর পর শহরের একটি জমিদার পরিবার মায়ের সেই পুজোর দায়িত্ব নিয়ে পাথরের মূর্তিটি নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই জমিদার বাড়িতে দীর্ঘ বছর পুজো হয়। তারপর সেই জমিদারের প্রয়াণের পর তাঁর পরিবার পুজোর দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল মালদহ শহরের আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যদের হাতে। মালদহ শহরের দুর্গাবাড়ি মোড়ে অতীতের সেই বৈদিক পৌরাণিক প্রথা মেনে ফি বছরই হয়ে আসছে আদি কংসবণিক পরিবারের দুর্গা পুজো। ঐতিহ্য বজায় রয়েছে আজও।
[আরও পড়ুন: আদালত অবমাননা মামলা: রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে রুল জারির নির্দেশ হাই কোর্টের]
পুজোর ঘট ভরতে এক সাজে পায়ে হেঁটে মহানন্দা নদীর সেই নিমতলা ঘাটেই যান আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যরা। পায়ে হেঁটে প্রায় আধ কিলোমিটার পথ। নিমতলা ঘাট থেকেই মহানন্দার জল তুলে এনে পুজোর ঘট ভরার রেওয়াজ অব্যাহত রয়েছে। মালদহের এই আদি কংসবণিক পরিবারের দুর্গাপুজোয় অন্যান্য ক্লাব ও সংস্থাগুলির মতো কোনও থিমের (Theme) চমক না থাকলেও নিষ্ঠা, ভক্তি ও ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীরা আজও প্রায় সাড়ে তিনশো’ বছর আগের সেই ইতিহাসের গন্ধ খুঁজে পান। মালদহ শহরের দুর্গাবাড়ি মোড়ে আদি কংসবণিক পরিবারের একটি দুর্গা মন্দির রয়েছে। প্রায় ১৫৭ বছর আগে সেটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন সেই নিজস্ব মন্দির গৃহেই মায়ের পুজো হচ্ছে। মন্দিরেই স্থাপিত রয়েছে মহানন্দা নদী থেকে পাওয়া পাথরের সেই প্রাচীন চণ্ডীমূর্তি। এখানে পূজিত হন মৃন্ময়ী সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা।
পুজোর দিনগুলিতে চলে নিয়মিত চণ্ডীপাঠ। আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্য তথা পুজো কমিটির এক কর্তা জয়ন্তকুমার দাস জানালেন, পুজোর দিনগুলিতে তাঁরা সকলেই দুর্গা মন্দিরেই থাকেন। পুজোর চারদিন মেতে ওঠেন পরিবারের তরুণ প্রজন্মের সদস্যরাও। দুর্গাবাড়ি মন্দিরে পুজোর প্রস্তুতি শেষ। আগমনীর শোভাযাত্রা ঘিরেও ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যায় আদি কংসবণিক পরিবারের এই পুজোয়।