বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, আমেঠি: ১৯৯৯ সালে দমদমে লাল দুর্গে ফাটল ধরায় গেরুয়া শিবির। ২০০৪ সালে দমদমে ফের পালাবদল। আসন ফিরে পায় সিপিএম। ২০১৯ সালে আমেঠিতে পালাবদল। গান্ধী পরিবারের হাত থেকে আমেঠি ছিনিয়ে নেন রাজনীতিতে আনকোরা ‘তুলসী’। ২০২৪ সালে আমেঠি উদ্ধারে চোয়াল শক্ত করে জানকবুল লড়াই কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির। ‘গান্ধীদের আমেঠি ফেরত চাই’- দরজা বন্ধ ঘরে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের। আগামী তিন দিন যেন চোখের পলক না পড়ে। অন্যদিকে, সতর্ক গেরুয়া শিবিরও। গতবারের তুলনায় ব্যবধান বাড়াতেই হবে। প্রতি মুহূর্তে কর্মীদের কড়া নির্দেশ পাঠাচ্ছেন আমেঠির ভোট মেশিনারির দায়িত্বে থাকা জয়প্রতাপ সিং।
বাংলার দমদম লোকসভা যেমন লালদুর্গ বলে পরিচিত ছিল, তেমন আমেঠি (Amethi) ছিল কংগ্রেসের দুর্গ। প্রথমবার দমদমে পরাজয়ের পর প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তাঁর প্রধান সেনাপতি প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর কাছ থেকে দমদম ফেরত চান। যোগ্য শিষ্যের মতো কাজ করেন সুভাষ। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দমদমে ভোট করান। রাজনৈতিক গুরু জ্যোতি বসুকে দমদম জিতিয়ে দক্ষিণা দেন শিষ্য সুভাষ।
[আরও পড়ুন: ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষকতা! বাগুইআটির নামী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ]
চায়ের দোকানের গুলতানি থেকে আমেঠির আনাচে কানাচে কান পাতলেই শোনা যায় এমন কিছু কথা, যার সঙ্গে দুদশক আগে দমদমের ঘটনার অনেক মিল পাওয়া যায়। শনিবার সকাল দশটা। আমেঠির গান্ধীগঞ্জের কংগ্রেসের (Congress) জেলা কার্যালয়। বাছাই নেতা-কর্মীর সঙ্গে বৈঠক করছেন গেহলট। বৈঠকের শুরুতেই বাইরে মুখ না খোলার কড়া নির্দেশ। প্রায় দুঘণ্টার বৈঠকে ভোটের কৌশল বাতলে দিলেন। পৌঁছে দিলেন সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) বার্তা। আমেঠি ফেরত চেয়েছেন ‘ম্যাডাম’। কোনও ভুল বরদাস্ত নয়। প্রচার শেষে দুরাত সকলকে জেগে থাকার নির্দেশ দিলেন গেহলট। জানালেন, শত্রু শিবিরের কাজকর্মের উপর নজর রাখতে হবে। সন্দেহজনক কিছু নজরে এলেই শীর্ষনেতৃত্বকে তৎক্ষণাৎ জানানোর নির্দেশ।
অন্যদিকে, বেলা দেড়টা। রেল কলোনির পাশে দলীয় কার্যালয়ে তুলসী স্মৃতি ইরানির অপেক্ষায় প্রধান সেনাপতি জয়প্রতাপ। কিছুটা চিন্তিত। কারণও আছে। মহিলাদের বছরে ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার বিজ্ঞাপনে কংগ্রেসের সুকৌশলে তুলসীকে ব্যবহার জনতার মনে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে মহিলাদের। কিন্তু মুখে স্বীকার করতে নারাজ। জানালেন, “এখনও খেলা অনেক বাকি। এমন খেলা হবে যে, অমেঠি ধরে রাখব আর রায়বরেলি ছিনিয়ে আনব। উত্তরপ্রদেশের মাটিতে চিরতরে গান্ধীরাজ শেষ করার সংকল্প নিয়েছি আমরা।” কিন্তু আদৌ কি সম্ভব? জবাব মিলবে ৪ জুন।