shono
Advertisement
Buddhadeb Bhattacharjee

'সততার পথ কঠিন', বুদ্ধ-বাণী মনে করে গাড়িচালক বলছেন, 'একফোঁটা কালির দাগ নেই'

ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত ওসমান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পেয়েই পদ্মপুকুর থেকে পাম অ্যাভিনিউ পর্যন্ত হেঁটে 'বুদ্ধদা'কে শেষ দেখা দেখতে যান।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 03:10 PM Aug 08, 2024Updated: 04:15 PM Aug 08, 2024

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: এ রাজ্যে বামশাসনের মেয়াদ ছিল ৩৪ বছর। ঠিক ততটাই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর গাড়িচালকের। শুধু চালক আর সওয়ারি তো নয়, তাঁদের মধ্যে এতদিনকার একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধা-স্নেহের সম্পর্ক। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণ সংবাদ পেয়ে তাই অসুস্থ শরীরে ছুটে এসেছেন তাঁর একসময়ের গাড়িচালক মহম্মদ ওসমান। নিজে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত, হাঁটতে গেলে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। তবু আজকের শোক সমুদ্রের কাছে এই প্রতিকূলতা তুচ্ছ! পদ্মপুকুর থেকে পাম অ্যাভিনিউ পর্যন্ত হেঁটে সাদা ধুতির 'বুদ্ধদা'কে শেষ দেখা দেখতে গেলেন ওসমান। বারবার বলছিলেন বুদ্ধবাবুর সততার কথা। যে পথ সদাই বন্ধুর, তা দিব্যি বুঝেছেন গাড়িচালক ওসমান। আজ সেই পথ শেষ হয়ে গেল, মনে করছেন তিনি।

Advertisement

১৯৮২ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর (Buddhadeb Bhattacharjee) গাড়িচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন মহম্মদ ওসমান। সেই থেকে শুরু। বাম আমলে সিপিএমের (CPM) রাজ্যদপ্তরে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৬ সালে সরকারি কর্মী পদে অবসর নেন। তার মধ্যে ২০১১ সালে পরাজয়ে বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কমে গিয়েছিল। কিন্তু দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা হতোই। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পথেঘাটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর (Ex CM) সঙ্গী বলতে ছিলেন মহম্মদ ওসমান। আজ, তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে অশক্ত শরীরে অপরের হাত ধরে ছুটে এসেছেন তিনি, শেষবারের জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখতে। ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা ছুঁইছুঁই। শেষযাত্রাতেও তাঁর সঙ্গী রইলেন ওসমান।

[আরও পড়ুন: বিজ্ঞানে মিলায় বুদ্ধ! গবেষণায় দেহদান, কবে শেষযাত্রা? জানালেন সেলিম]

সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, মোটা ফ্রেমের চশমা, পক্ককেশ - রাশভারী চেহারার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পরনের সাদা পোশাকের মতোই তাঁর গোটা জীবনটাই সততার শুভ্রতায় ভরা, একফোঁটা কালির দাগ লাগাতে দেননি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই বলছেন ওসমান। বলছেন, ''আদ্যন্ত ভদ্রলোক তিনি। আমাকে 'আপনি' ছাড়া সম্বোধন করতেন না। বলতেন, অসততা করে বেশিদিন কিছু করা যায় না। সততার পথ কঠিন কিন্তু সেটাই সঠিক পথ। আমিও খেয়াল রাখতাম, যাতে কোনওভাবে তাঁর কোনও অসম্মান না করে ফেলি।''

[আরও পড়ুন: ‘বিতর্কিত’ বুদ্ধ থেকে ‘ভদ্রলোক’ মুখ্যমন্ত্রী, অমলিনই রয়ে গেল সেই সাদা ধুতি]

কর্মজীবনে বহু সিপিএম নেতার গাড়ি চালিয়েছেন ওসমান। কিন্তু সকলের মাঝে স্পেশাল ছিলেন 'বুদ্ধদা'। ২০১৬ সালের পর থেকে যোগাযোগ কমে গেলেও নিয়মিত খবরাখবর রাখতেন। এই তো দিন কয়েক আগেও পাম অ্যাভিনিউ দিয়ে যাওয়ার সময় ওসমান একবার দেখতে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সেবারও ওসমান চলে যাওয়ার সময় তাঁকে বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, ''আমি ভালো আছি, আপনি ভালো থাকবেন।'' সেই ভালো থাকার বার্তা বিনিময় এবার শেষ। আর কেউ কাউকে ভালো থাকার কথা বলবেন না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • গাড়িচালকের স্মৃতিচারণায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
  • নিজে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত, কিন্তু বুদ্ধবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে পদ্মপুকুর থেকে হেঁটে পৌঁছে যান পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে।
  • সততার কথা বলা 'বুদ্ধদা'র কথাতেই তাঁকে মনে করলেন মহম্মদ ওসমান।
Advertisement