রমেন দাস: একটা সময় সিগারেট ছাড়া থাকতে পারতেন না। ফুসফুসের সমস্যা হওয়ার পরও চিকিৎসকদের পরামর্শ ফুৎকারে উড়িয়ে সুখটান চলতই। কিন্তু 'গভীর অসুখ'-এ শয্যাশায়ী হওয়ার পর থেকে ধূমপান থেকে বিরত করা হয় তাঁকে। সিওপিডি কাবু করে ফেলেছিল তাঁকে। বারবার হাসপাতালে যাওয়া, বাড়ি ফেরা, নিজের ঘরকেই প্রায় হাসপাতালে পরিণত করে ফেলা - এভাবেই কাটছিল জীবনের শেষদিকটা। ৮০ বছর বয়সি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সর্বক্ষণ দেখভাল করতেন হরেন অধিকারী। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে তিনিই শোনালেন বুদ্ধবাবুর দিনযাপনের খুঁটিনাটি। শোনালেন শেষ মুহূর্তগুলোর কথাও।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ঘরেই মিনি ওয়ার্ড তৈরি হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র।
ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার রাতে? বৃহস্পতিবার সকালে কীভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি? সবটাই জানালেন সেবক হরেন। তাঁর কথায়, ''গতকাল রাতে ওঁর একটু শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। আমরা চিকিৎসকদের পরামর্শমতো Bi-Pap দিয়েছিলাম, তাতে উনি একটু সুস্থ বোধ করেন। রাতে আর কোনও সমস্যা হয়নি। তার পর আজ সকালেও শ্বাসকষ্ট হয়। বাইপ্যাপ দেওয়া হয়েছিল। তার মাঝেই উনি মারা যান।'' হরেন আরও জানালেন, প্রতিদিন সকালের মতো আজও চা দেওয়া হয়েছিল। তার পর জলখাবার। ওষুধ দেওয়া হয়, কিন্তু ওঁর এতটাই সমস্যা হচ্ছিল যে ওষুধটা খেতে পারেননি, ফেলে দেন।
[আরও পড়ুন: ‘বিতর্কিত’ বুদ্ধ থেকে ‘ভদ্রলোক’ মুখ্যমন্ত্রী, অমলিনই রয়ে গেল সেই সাদা ধুতি]
কী খেতে ভালোবাসতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)? সারাদিন কেমন কাটত? হরেন জানান, ডিম আর মিষ্টি দই ছিল বিশেষ প্রিয়। আগে সারাদিন বই পড়তেন। চারদিক বইয়ে ভর্তি থাকত তাঁর। কিন্তু ইদানিং আর ততটা বই পড়তে পারতেন না। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতেন।
ঘরভর্তি দেশি-বিদেশি নানা বিষয়ের বই। নিজস্ব চিত্র।
খাওয়াদাওয়ার নির্দিষ্ট রুটিন ছিল। রোজ রাতে ডিম দেওয়া হতো। বুধবার রাতে আলু-পটলের তরকারি, ডিমের তরকারি আর মিষ্টি দই দিয়ে খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। সেটাই ছিল শেষবারের মতো খাওয়া। সকালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এতদিন ধরে সর্বক্ষণ সেবা করছেন, আজ সব ফাঁকা। হরেন বলছেন, ''বাবার মতো সেবা করতাম তাঁকে। উনিও আমাদের ভালোবাসতেন। তাঁর মতো মানুষ হয় না। আমি এতদিন ধরে সেবা করে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।'' আজ শূন্য-ভাব তাঁদের চারপাশেও।
দেখুন ভিডিও: