সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুজনে দুই ক্ষেত্রের তারকা। আর সেটাই বোধহয় ছিল 'কমন'। একে অপরের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা আর মুগ্ধতায় ভরপুর ছিলেন তাঁরা। কমবয়সি তরুণের জয়ে-পরাজয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত হতেন বর্ষীয়ান ব্যক্তিটি, তেমনই প্রবীণের প্রয়াণ সংবাদ পেয়ে যুবকের মনে জমে মেঘ। বলা হচ্ছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee) ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা। প্রথমজন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বাম রাজনীতির অন্তিম নক্ষত্রসম। দ্বিতীয়জন জাতীয় স্তরের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক। তুল্যমূল্য বিচার হয় না। তবে তাঁদের মধ্যে কী এক বন্ধন ছিল, তা অনুভব করতেন তাঁরাই! আর আমজনতা দেখতেন দুই প্রজন্মের দুই প্রতিনিধির অমলিন বন্ধুত্ব। বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধবাবুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন মহারাজ। মুম্বইয়ে বসেই স্মরণ করেন তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের কথা। বলেন, পুরোপুরি খেলাপাগল মানুষ ছিলেন। যতবার কথা হয়েছে, ততবার শুধু সমসময় নয়, ক্রিকেটের অতীত নিয়েও আলোচনা হয়েছে দুজনের।
ছোট্ট সানাকে কোলে নিয়ে ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
একদশকের বেশি সময় ধরে অসুস্থতায় কাবু ছিলেনে। তবে বৃহস্পতিবার জীবন তাঁকে চিরতরে হারিয়ে দিল। সকাল ৮.২০ নাগাদ প্রয়াত হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুম্বইতে থাকা বেহালার ছেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে সেই খবর পৌঁছতে বেশি দেরি হয়নি। সেখান থেকে ছুটে আসতে না পেরে যেন আরও বেশি করে বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন।
পাম অ্য়াভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বেরচ্ছেন চিরঘুমে শায়িত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: সায়ন্তন ঘোষ।
এমনিতেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বিশেষ স্নেহধন্য ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক। যে কোনও ম্যাচের আগে-পরে সৌরভের সঙ্গে কথা বলতেন বুদ্ধবাবু। বলতেন আজকের পারফরম্যান্স, ক্রিকেট ইতিহাসের কথা। সৌরভ বলছেন, ''আমার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে বিস্তর আলোচনা হত। আমি তখন ক্যাপ্টেন ছিলাম। যতবারই কথা হয়েছে, ক্রিকেট নিয়েই উনি কথা বলে গিয়েছেন। শুধু সমকালীন ভারতীয় ক্রিকেট নয়, পঙ্কজ রায়ের ব্যাটিং নিয়েও আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে। খেলাপাগল মানুষ ছিলেন।'' একইসঙ্গে সিনেমার প্রতি তাঁর আবেগের কথাও বললেন সৌরভ।
[আরও পড়ুন: বিজ্ঞানে মিলায় বুদ্ধ! গবেষণায় দেহদান, কবে শেষযাত্রা? জানালেন সেলিম]
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের কথা। সেবার রানার্স হয়ে ফিরেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। রাজ্যে তখন বামশাসন। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সৌরভদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় সরকারের তরফে। বুদ্ধবাবুর উপস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠান হয়। সেখানে সৌরভের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন: ‘বিতর্কিত’ বুদ্ধ থেকে ‘ভদ্রলোক’ মুখ্যমন্ত্রী, অমলিনই রয়ে গেল সেই সাদা ধুতি]
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর থেকে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। কিন্তু যখনই সৌরভের সঙ্গে দেখা বা কথা হতো, একেবারে আপনজনের মতো খবরাখবর নিতেন বুদ্ধবাবু। তবে একটি দিনও ক্রিকেটার সৌরভকে রাজনীতির কথা বলেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এটাই ছিল তাঁর বিশেষত্ব। ইদানীং ক্রীড়াবিদ বা খেলোয়াড়দের কাছে রাজনীতির ময়দানে নামার প্রস্তাব আসে অহরহ। কিন্তু বুদ্ধ-আমলে কখনও এই সংস্কৃতি ছিল না বলেই জানাচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। সেই ভদ্রতা, সৌজন্যের ইতি ঘটল আজ।