অভিরূপ দাস: ফি বছর সপরিবারেই গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হন৷ এবারই প্রথম ভোটের লাইনে অসম্পূর্ণ পাম অ্যাভিনিউয়ের ভট্টাচার্য পরিবার৷ বাড়ির কর্তা অসুস্থ, তাই ভোট দিতে গেলেন না৷ গৃহকর্ত্রী এবং মেয়ে শেষবেলায় গেলেন নির্ধারিত ভোটকেন্দ্র পাঠভবন স্কুল, জুনিয়রে৷ ফাঁকায় ফাঁকায় নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন৷
বলা হচ্ছে, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কথা৷ চলতি লোকসভা ভোটের শেষ দফায় ভোট কলকাতা দক্ষিণে৷ এই কেন্দ্রেরই ভোটার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তাঁর পরিবার৷ এবছর বুথমুখী হলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিকেলে, ভোট শেষ হওয়ার ঠিক আগে কেন্দ্রে গেলেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য, মেয়ে সুচেতনা৷ জানা হল, বুদ্ধদেববাবু অসুস্থ৷ ভোট দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই৷ তাই তাঁকে ছাড়াই ভোট দিলেন স্ত্রী, মেয়ে৷আর এবারই প্রথম নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে তিনি সবরকমভাবে দূরে সরে রইলেন৷
[আরও পড়ুন : নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ততা তুঙ্গে, ভোট দিতে পারলেন না সৌগত-নেপালদেব]
পরিবার সূত্রে যতই বুদ্ধবাবুর অসুস্থতাকে দায়ী করা হোক না কেন, রাজনৈতিক মহলের একাংশ একে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করছেন৷ ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়ে, ফলপ্রকাশের দিনই মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল, রাজনৈতিক সন্ন্যাসের পথে হাঁটতে চলেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ দুঁদে রাজনীতিকদের সেই ধারণা পুরোপুরি না মিললেও, সত্যিই প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরেই দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ একে একে পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটি-সহ সংগঠনের একাধিক দায়িত্ব ছেড়ে দেন৷ নেহাৎই বয়সের কারণ দেখিয়ে৷ কিন্তু তারপরও ২০১৬-এ দল তাঁকে প্রচার ময়দানে নামিয়েছিল৷ রাজ্যে ফের বামফ্রন্টকে ক্ষমতায় ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ সভা, মিছিলে ভিড় একেবারে পাতলা ছিল না৷ তবে কাস্তে-হাতুড়ির মরা সংগঠনে জোয়ার আসা দূর অস্ত, শক্তি ঠেকেছে একেবারে তলানিতে৷
তবু তিনি ছিলেন দলের পাশে পাশে, সর্বদা৷ ছিলেন আদর্শ কমিউনিস্ট হিসেবেই৷ শরীরও সময়ের সঙ্গে ভেঙে পড়েছে৷ ঘরবন্দি থাকতেই পছন্দ করতেন৷ দিনভর পড়াশোনা নিয়ে থাকতেন৷ চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বামেদের মেগা ব্রিগেডে দেখা গিয়েছিল দলের অন্যতম শীর্ষনেতাকে৷ তবে মঞ্চে নয়, ব্রিগেড ময়দানে তিনি গিয়ে গাড়ির ভিতরেই বসেছিলেন৷ আর অভিজ্ঞ চোখে পর্যবেক্ষণ করছিলেন সমর্থকদের স্বতস্ফূর্ততা৷ কিছুক্ষণ থাকার পর শুধু একটাই প্রতিক্রিয়া ছিল তাঁর – এই ভিড় যেন ভোটে যায়৷ সে কথার নিগূঢ় অর্থ আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক, রাজ্য বাম নেতৃত্ব তাতে যে গুরুত্ব দেয়নি, তা বোঝা গিয়েছে বেশ৷
[আরও পড়ুন : ভোট দিতে গিয়ে ‘আক্রান্ত’ বাবুল সুপ্রিয়, হেনস্তার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে]
ভোটব্যাংকের জরাজীর্ণ দশা বেশ টের পেয়েছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ৷ আর তৃণমূল বিরোধিতায় রাজ্যস্তরে বিজেপির সঙ্গে তলে তলে হাত মেলানোর খবরও কানে পৌঁছেছিল নির্ঘাত৷ ভোটপর্ব চলাকালীন তৃণমূল, বিজেপিকে ‘গরম কড়াই’ আর ‘জ্বলন্ত উনুন’এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে বলেছেন, উনি বিজেপি বিরোধী৷ সবমিলিয়ে, আসন্ন নির্বাচনী ফলাফলের আঁচ এখনই টের পেয়ে গিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তাই সেই প্রক্রিয়াতেই অংশ নিলেন না!
The post ভোট দিলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অসুস্থতার আড়ালে ভিন্ন বিশ্লেষণ রাজনৈতিক মহলের appeared first on Sangbad Pratidin.