সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার এক যুবনেতার। পেশায় নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওই নেতা কোথায় শিক্ষকতা করেন তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি ‘ভুয়ো শিক্ষক’, দাবি দলেরই একাংশের। অভিযোগ, তিনি কখনও নিজেকে হাইস্কুলের শিক্ষক, কখনও অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিলেও কোন স্কুল বা কলেজে শিক্ষকতা করেন তা বলতে পারেন না!
বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পদক দেবজ্যোতি সিনহারায়। তিনি তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে সরস্বতী পুজো ও প্রজাতন্ত্র দিবসে ছবি পোস্ট করেছিলেন। লিখেছিলেন তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে উৎসব উদযাপনের কথা। কিন্তু হুগলির সেই স্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সকলেই দাবি করেছেন ওই নামে কোনও শিক্ষক সেখানে নেই। তাহলে বিষয়টা কী? গোটাটাই এখন প্রশ্ন। বিষয়টাকে নিয়ে তোলপাড় বর্ধমান।
সম্প্রতি বিজেপির এক কর্মী কেশব কোনারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে জেলা যুব মোর্চার সভাপতি পিন্টু (পুরব) সাম ও দেবজ্যোতি সিনহারায়ের বিরুদ্ধে। আদি বিজেপি তথা বর্তমান জেলা পদাধিকারীদের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাকর্মীরা প্রতিবাদে সরব হন। তখনই দেবজ্যোতি আদৌ শিক্ষক কি না সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। আদি বিজেপি গোষ্ঠীর বলে পরিচিত কেশব কোনার, ইন্দ্রনীল গোস্বামী, পিন্টু সাহা, অভিজিৎ সিকদাররা দেবজ্যোতি সিনহারায়কে ভুয়ো শিক্ষক দাবি করে অপসারণের আবেদন করেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, “শিক্ষক পরিচয় দিয়ে দলে থেকে অসামাজিক কাজ করে এইসব নেতারা। তাতে মদত দিচ্ছে নেতাদের একাংশ। যা দলের বদনাম। সংগঠন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: দুই ধাপে মে ও জুলাইতে স্কুল ইউনিফর্ম দেবে রাজ্য, পাবে ১ কোটি ১০ লক্ষ পড়ুয়া]
ইন্দ্রনীল গোস্বামীরা জানান, কয়েকদিন আগে নিজেকে শিক্ষক প্রমাণ দিতে হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া শশীভূষণ সাহা হাই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে সরস্বতী পুজোর বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন দেবজ্যোতি। তাতে লিখেছেন, “সরস্বতী পুজোয় স্কুলে আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে দশম শ্রেণির অরিত্র, সুভাষ, একাদশ শ্রেণির বিক্রম ও আসিফ। আর অল্পনা দিচ্ছে দশম শ্রেণির পারভীন, নাজিরা ও একাদশের ঈশানী, অমৃতা, বৈশাখী ও শ্রেয়া।” কিন্তু ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পড়ুয়ারা দাবি করেছেন, দেবজ্যোতি তাঁদের স্কুলের শিক্ষকই নন। স্কুলের পড়ুয়া সোনক পাল আবার চাঞ্চল্যকর কথা জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমে। সৌনকের কথায়, “সরস্বতী পুজোর দিন ওই ভদ্রলোক এসেছিলেন। আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পরিচয় দেন। বর্তমানে কোনও কলেজের অধ্যাপনা করেন বলে জানান। তারপর আমাদের অনেকের সঙ্গে ছবি তুলে চলে যান।” ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মলয় ঘোষও সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেবজ্যোতি সিনহারায় নামে কোনও শিক্ষকই নেই তাঁদের স্কুলে।
তাহলে কেন দেবজ্যোতি ওই স্কুলের ছবি পোস্ট করেছিলেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইন্দ্রনীলরা দাবি করেছেন, আসলে উনি ভুয়ো শিক্ষক। ওনাকে জিজ্ঞাসা করা হলেও বলেন না কোন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। একজন ওনাকে প্রশ্ন করেছিলেন কোন স্কুলে শিক্ষকতা করেন, জবাবে বলেছিলেন দলীয় নেতৃত্ব নিরাপত্তার কারণে তা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। রবিবার দেবজ্যোতির সঙ্গে মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিজেপির জেলার মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যপাধ্যায় এদিন বলেন, “আমরা ওনাকে শিক্ষক হিসেবেই জানি। কোন স্কুলে তা বলতে পারব না। তবে ওনাকে নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে সেই ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে। তারপরই বলতে পারব।”