কারও কাজ তো কারও সাজ, কারওর আবার টিকা-টিপ্পনি, নিমেষে ভাইরাল নেটদুনিয়ায়। যা নিয়ে কখনও তর্ক বেঁধেছে, তো কখনও আবার তুমুল বিতর্ক তৈরি করেছে। কিছু ঘটনাকে কুর্নিশ জানিয়েছে নেটিজেনরা তো কোনও ভিডিও দেখে হেসে খুন। সেই সব ঘটনার সালতামামি রইল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে।
কাকুদের চা-তেষ্টা
‘আমরা কি চা খাব না? খাব না আমরা চা?’ কলকাতার মৃদুলবাবুর এই নির্বিষ মন্তব্যই এবছরের সবচেয়ে ভাইরাল। জনতা কারফিউর দিন চা খেতে বেরিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে পালটা প্রশ্নে করেছিলেন মৃদুল দেব। তার পর বাকিটা ইতিহাস! ওই দিনই ভাইরাল হয় আরেক চা-উক্তি। ঠিক যেন ‘ভিনি, ভিসি, ভিডি’ অর্থাৎ ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ গোছের- ‘চা খেতে এসেছিলাম, চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার চলে যাব।’ বছরভর আমজনতা নানাভাবে ব্যবহার করে গিয়েছেন এই মন্তব্যকে।
গো করোনা গো
করোনা তাড়ানো নিনজা টেকনিক! বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানী-চিকিৎসকরা যখন করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠল ভারতে। এ যেন রাজনৈতিক শত্রু! কখনও হাতে মশাল নিয়ে কেউ বললেন, ‘গো করোনা গো’, তো কেউ বললেন, ‘গো ব্যাক চিনা ভাইরাস’। সর্বপ্রথম এই স্লোগান তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আটাওয়ালে। পরে অবশ্য তিনি নিজেই করোনা আক্রান্ত হন। করোনা ভাইরাস ভারত ছাড়ুক, না ছাড়ুক, বছরভর নেটদুনিয়া জুড়ে রাজত্ব করল ‘গো করোনা গো’ স্লোগান।
রিয়েল-মোকাবিলা
এ বছরের সুপার হিরো কোভিড যোদ্ধারা। যাঁরা সারা বছর পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছে। টানা ১২ ঘণ্টা মাস্ক-ফেস শিল্ডে মুখ ঢেকে, পিপিই পরে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তাতেও তাঁদের মুখে সামান্যটুকু বিরক্তির লেশ নেই। বরং পিপিই পরেই নাচে-গানে নেটিজেনদের মন কেড়েছেন তিনি। যেমন দিল্লির এইমসের এক চিকিৎসক পিপিই কিট পরেই ‘মোকাবিলা’ রিমিক্সে কোমর দুলিয়ে নজর কেড়েছেন নেটিজেনদের।
ড্রাগ-আতুর
‘ড্রাগ দো মুঝে ড্রাগ দো’, না কোনও নেশাতুরের কাতর আর্তি নয়। বরং টিভির নিউজ শোয়ে এরকম মন্তব্য করেছিলেন জনপ্রিয় সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামী। রিয়া চক্রবর্তী ড্রাগ আসক্তির কথা বলতে গিয়ে অর্ণব ‘ড্রাগ দো মুঝে ড্রাগ দো’ মন্তব্যটি করে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ওই অঙ্গভঙ্গি ও মন্তব্য নেটদুনিয়া তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
ড্রিম গার্ল টুম্পা
এ বছরের ড্রিম গার্ল কে বলুন তো? যার জন্য সবাই হা-পিত্যেস করে বসে আছে, অথচ তাঁর দেখা নেই, শুধু নামটাই শোনা যাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরে সবাই একবাক্যে উত্তর দেবেন ‘টুম্পা সোনা’। দুর্গাপুজো হোক কিংবা কালি পুজো অথবা বর্ষশেষের উৎসব, এবার এমন কোনও পাড়া নেই যেখানে ‘টুম্পা সোনা’ চলেনি। ‘রেস্ট ইন পিস’ নামক এক ওয়েব সিরিজে প্রথমে টুম্পা সোনা গানটি ব্যবহার হয়। গায়কের নাম আরব। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ভাসান থেকে পাড়ার ফাংশন, পিকনিক থেকে ডিস্কো থেক- সবেতেই হিট টুম্পা সোনা।
অমর প্রেম
‘টুম্পা সোনা’র প্রতি বাঙালি জাতির ফিলিংসটা এক কথায় কী বলে যায়, বলুন তো? এই উত্তরটা পেতেও আরেক ভাইরাল ভিডিওর দ্বারস্থ হতে হবে। দাঁত ফোকলা বাচ্চাটার কয়েক সেকেন্ডের ভিডিওটা এতটা ভাইরাল হয়ে যাবে, কখনও বোধহয় কেউ ভাবেওনি। প্রেমিক-প্রেমিকাদের নিয়ে মজা করতে গিয়ে নতুন শব্দবন্ধ তৈরি করেছিল সে-টুরু লাভ (Turu Love)। ২০২০ সালের ভাইরালের দৌড়ে বাকিদের অনেকটাই পিছনে ফেলেছে এই শব্দবন্ধ।
বাবা কা ধাবা
রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপর ছোট্ট দোকান। গাছের তলায় টিনের চালা দিয়ে ঢাকা। ‘বাবা কা ধাবা’য় অল্প কিছু টাকা দিলেই ধোঁয়া ওঠা চায়ের পাশাপাশি গরম গরম পরোটা, ভাত, সবজি মেলে। যার যা পছন্দ। সারাদিন পরিশ্রমের বিনিময়ে যা উপার্জন হয় তাতেই দিন চলে বৃদ্ধ দম্পতির। সামান্য সেই রোজগারেও বাধ সাধে করোনা ভাইরাস (Coronavirus)। প্রথমে লকডাউন তারপর নিউ নর্মাল, পাত্রে তৈরি সুস্বাদু মটর পনির থাকলেও গ্রাহক কিংবা রোজগার ছিল না কিছুই। কান্নায় ভেঙে পড়েন দক্ষিণ দিল্লির মালভিয়া নগরের অশীতিপর বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রী। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন ইনস্টাগ্রামার এবং ইউটিউব ফুড ব্লগার গৌরব ওয়াসন। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এখন সেই ধাবার মালিক আস্ত একটি রেস্তরাঁ খুলে ফেলেছেন।
খুদের দেশপ্রেম
লাদাখের ইন্দো-তিব্বত সীমান্তের একটি ভিডিও এই মুহূর্তে ‘ভাইরাল’ নেটদুনিয়ায়। ভিডিওটি অবশ্য বেশ কয়েকমাসের পুরোনো। এর শিকড়ের হদিশ পেতে হলে ফিরে তাকাতে হবে গত অক্টোবরে। লাদাখের ইন্দো-তিব্বত সীমান্তের সেনাদের (আইটিবিপি) সম্মান জানিয়ে একটি পাঁচ বছরের বাচ্চা স্যালুট করছে। আর তারই ভিডিও এই মুহূর্তে ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পেয়েছে। লাদাখের চুষুল এলাকার একটি গ্রামের ছেলে নাভাং। কিন্ডারগার্টেনে পড়া এই পুচকে ছেলেটি গত অক্টোবরে সৈন্যদের সম্মান জানাতে ড্রিল পরিবেশন করে। প্যারা মিলিটারি ফোর্সের কর্মকর্তারা নাভাংকে আইটিবিপির পোশাক দিয়ে সম্মানিতও করেন। নাভাংয়ের ড্রিলের সেই ভিডিও এই মুহূর্তে ইন্টারনেটে বিপুল সাড়া ফেলেছে। ‘
সিরিয়াল ‘কিলার’
গল্পের গরু কি গাছে উঠতে পারে? আলবাত পারে! বাংলা ধারাবাহিকের পরিচালক-প্রযোজকরা চাইলে সব কিছু হতে পারে। নায়িকা ‘জবা’ পারে খালি হাতে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে পারে, ‘কৃষ্ণকলি’ ওরফে ‘শ্যামা’র দুনিয়ায় আবার বাথরুম স্ক্রাবার দিয়ে ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমে মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা যেতে পারে। বোকাবাক্সের এমনই কল্পকাহিনির তালিকায় এবার যুক্ত হল ‘তিতলি’ (Titli)। বধির হয়েও বিনা প্রশিক্ষণে দিব্যি চালিয়ে ফেলল আস্ত বিমান। আর এই সব দৃশ্য নিয়ে গোটা বছর মশকরা করেছেন নেটিজেনরা। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন মিম।
হাসি দিয়ে যায় চেনা
এক যুবকের হাসি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিল। তাকে সকলে জোমাটো বয় হিসেবেই চেনে। সেই যুবকের হাসি রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে নেট দুনিয়ায়। ওই যুবক খাবার ডেলিভারি সংস্থার সাথে জড়িত। ওই যুবকের নাম সোনু, সে দিল্লির বাসিন্দা। তার হাসিতে মুগ্ধ নেট নাগরিকরা। সে জোমাটোর কাছে এখন বিশেষ পরিচিত মুখ। তাকেই সবাই চাইছে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। তার সারাদিনের উপার্জন ৩৫০ টাকা, তা নিয়েই সে বেশ খুশি।
দেখুন ভিডিও
