স্টাফ রিপোর্টার: ন্যক্কারজনক বললে কিছুই বলা হয় না। চরম লজ্জাজনক বললেও না। সিএবি (CAB) প্রথম ডিভিশন লিগে টাউন বনাম মহামেডান (Mohammedan Sporting) খেলায় যা হল মঙ্গলবার ও বুধবার জুড়ে, তা ক্রিকেট নামক মহান খেলাটাকেই চরম অসম্মানে ডুবিয়ে চলে গেল। যেখানে একের পর এক মহামেডান ব্যাটার ‘দৃষ্টিকটুভাবে’ আউট হলেন। কেউ দেখেশুনে বল ছেড়ে বোল্ড হলেন! কেউ লাফাতে-লাফাতে এগিয়ে স্টাম্পড হলেন! কেউ আবার ‘ক্লোজ ইন’ ফিল্ডার যাতে ঠিকভাবে ক্যাচটা ধরতে পারে, তা সুনিশ্চিত করে এলেন! যা দেখে অসহ্য রাগে ফেটে পড়লেন বাংলার ক্রিকেটার শ্রীবৎস গোস্বামী (Shreevats Goswami)। লিখে দিলেন, তিনি নিজে ক্রিকেটার বলে তাঁর লজ্জা হয়!
শ্রীবৎস বলবেন না কেন? পুরো ঘটনায় তো মুখ পুড়ল বাংলা ক্রিকেটের। মুখ পুড়ল সিএবির। কারণ, ময়দানি অভিযোগ অনুযায়ী এই ‘গড়াপেটা’ কলুষিত ম্যাচে যুক্ত সিএবির যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসের টিম টাউন। অভিযোগ, তারাই নাকি চাপ দিয়ে মহামেডানকে পয়েন্ট ছাড়তে বলে! কারণ মহামেডান হর্ষিত সাইনি বলে একজন ‘অবৈধ’ প্লেয়ার খেলাচ্ছিল।
[আরও পড়ুন: বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে অভিনবত্ব, কোন গ্রেডে কোন ক্রিকেটার? কে কত টাকা পাবেন?]
দেবব্রতবাবুর বিরুদ্ধে অতীতে নানা অভিযোগ এসেছে। কখনও বলা হয়েছে, তিনি নিজের ক্লাবের প্লেয়ার বাংলা টিমে ঢোকাতে সচেষ্ট হয়েছেন। পদের আস্ফালন দেখিয়ে তিনি দুমদাম নির্বাচনী বৈঠকেও ঢুকে পড়তেন। কিন্তু সব ছাপিয়ে গেল বোধহয় সিএবি লিগের এই ম্যাচ। যে ম্যাচের ব্যাটারের লজ্জাজনক আউটের ভিডিও পোস্ট করে শ্রীবৎস লিখে দিয়েছেন, ‘কেউ বলতে পারবে, এটা কী চলছে এখানে? এটা কলকাতা ক্লাব ক্রিকেটে সুপার ডিভিশন ম্যাচের ছবি। দুটো বড় টিম এ জিনিস করছে! ক্রিকেট আমার হৃদয়ে থাকে। কিন্তু এই জিনিস দেখার পর ক্রিকেট খেলেছি বলে নিজের লজ্জা হচ্ছে আমার। বাংলা ক্রিকেটের হৃদয় ও আত্মা দুটোই হল ক্লাব ক্রিকেট। সেটাকে এভাবে প্লিজ নষ্ট করবেন না। আমার মনে হয় এটাকে গটআপ বলে।’
মহামেডান কর্তাদের কাউকে কাউকে ‘মাঠের বাইরের চাপ’ নিয়ে গতকাল জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা মানতে চাননি। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, মহামেডানের অবৈধ ক্রিকেটার হর্ষিতের বিরুদ্ধে সবার আগে সরকারি অভিযোগ জমা করে টাউন। বলা হয়, সিএবির আইন না মেনে হরিয়ানার হর্ষিতকে খেলাচ্ছে মহামেডান। শোনা গেল, এরপর থেকেই আসল ‘খেলা’ শুরু হয়। মহামেডানকে কোণঠাসা করতে পেরে নাকি সিএবি যুগ্ম সচিবের ক্লাবের তরফে পয়েন্ট ছাড়ার ‘প্রস্তাব’ দেওয়া হয়! না হলে দেবব্রতর ক্ষমতাবলে যে অনেক কিছু করে ফেলা সম্ভব, তা নাকি মনে করিয়ে দেওয়া হয়! চোখের সামনে ক্রিকেটের নামে সে ‘প্রহসন’ দেখে মাঠ ছেড়ে চলে যান অন ফিল্ড আম্পায়ার। দুঃখের হল, গতকালই এই ঘটনা ঘটার পর সিএবির উচ্চপদস্থদের কাছে খবরটা যায়। কাউকে কাউকে বলা হয় যে, গড়াপেটা চলছে। কিন্তু তারপরেও কোনও প্রতিকার হয়নি। বরং বাংলার ক্লাব ক্রিকেটের সবচেয়ে অসম্মানজনক বিজ্ঞাপনটা দেখা
যায় এদিন।
এখানেই শেষ নয় আরও আছে। সিএবি নিয়ম অনুযায়ী প্রথম সুপার ডিভিশন লিগে প্রথম ইনিংসে কোনও টিম এগিয়ে থাকলে সাত পয়েন্ট পেয়ে যায়। কিন্তু প্রতিপক্ষ আবার যদি দ্বিতীয় ইনিংসে আড়ইশো করে দেয়, তাহলে বোনাস হিসাবে এক পয়েন্ট পায় তারা। সেক্ষেত্রে প্রথম ইনিংসে লিডের জন্য বিজয়ী টিম পাবে ছয় পয়েন্ট। তেমনই আবার দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষের পাঁচ উইকেট ফেলে দিতে পারলে বাড়তি এক পয়েন্ট বোনাস হিসাবে পাওয়া যায়। এদিন মহামেডানের যখন চার উইকেট পড়ে, তখন দিনের খেলা শেষ হতে আর কিছুটা সময় বাকি ছিল। মহামেডানের লিডও প্রায় দু’শোর কাছাকাছি ছিল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তখন ডিক্লেয়ার না করে মহামেডান ডিক্লেয়ার করে তার পরের ওভারে আরও একটা উইকেট চলে যাওয়ার পর! এখানেই প্রশ্ন উঠছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, টাউনকে বাড়তি এক পয়েন্ট দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। এটাও শোনা গেল, মহামেডানের এক ক্রিকেটারের কাছে নাকি খোলাখুলি প্রস্তাব দেওয়া হয়, টাউনে সই করার জন্য। তাহলেই তাঁকে পুরস্কার হিসাবে বাংলা নির্বাচক করে দেওয়া হবে!
প্রশ্ন এবার একটাই। খেলার নামে এই নোংরামির সঙ্গে সিএবি যুগ্ম সচিবের ক্লাব জড়িয়ে যাওয়ায়, এবার তাঁর কী হবে? রাতে দেবব্রতকে ফোন করে পাওয়া গেল না। তাঁর ফোন বন্ধ। কিন্তু সিএবি কী করবে? যুগ্ম-সচিবকে কি তাঁর মেয়াদ শেষের আগে সরে যেতে বলবে? তাঁর পদত্যাগ চাইবে? সিএবির প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় কি ক্রিকেটার জীবনের মতো কঠোর মানসিকতা দেখিয়ে প্রতিকার করতে পারবেন? পারলে ভাল। না পারলে কিন্তু বাংলা ক্রিকেটের পাশে একটাই লাইন লেখা পড়ে থাকে।
রেস্ট ইন পিস!