স্টাফ রিপোর্টার: যেমন ‘সন্দেহজনক’ ক্রিকেট। ঠিক তার সঙ্গে ততটাই মাননসই ‘অযৌক্তিক’ সাফাই। সিএবির প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে মহামেডান বনাম টাউন ম্যাচে ‘গড়াপেটা’র অভিযোগকে ঘিরে বৃহস্পতিবার বঙ্গ ক্রিকেটে যা চলল, যেভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে গেল ক্লাব এবং সিএবি দু’পক্ষ, তার বিবরণে একটাই শব্দ বসে। প্রহসন!
বৃহস্পতিবার থেকে মহামেডান-টাউন ম্যাচে মহামেডান ব্যাটারদের ‘অলৌকিক’ সমস্ত আউটের ভিডিও ময়দানে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। রাতের দিকে বাংলা ক্রিকেটার শ্রীবৎস গোস্বামীর বিস্ফোরক ফেসবুক পোস্টের পর যে মহাবিতর্ক দানবীয় গতি পায়। ফেসবুক পোস্টে দু’জন মহামেডান ব্যাটারের আউট হওয়ার ভিডিও দিয়েছিলেন শ্রীবৎস (Shreevats Goswami)। যেখানে ব্যাটার বোলারের প্রতি অসীম ‘মহানুভবতা’ দেখিয়ে নির্বিষ বল ছেড়ে বোল্ড হচ্ছেন! শ্রীবৎস লিখে দেন, তিনি ক্রিকেট খেলেছেন বলে তাঁর আজ লজ্জা হয়! সঙ্গে বলেন, ক্লিপিংসে যা দেখা যাচ্ছে, তাকে ‘গটআপ’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। সহজ বাংলায় যা কি না গড়াপেটা।
[আরও পড়ুন: ঢাকার সাততলা বাড়িতে ভয়াবহ আগুন, পুড়ে মৃত অন্তত ৪৪]
সিএবি-র অনেকের মতে, এটা ‘গড়াপেটা’ নয়। এটা ‘ব্ল্যাকমেলিং’! স্থানীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে যা কখনও ঘটেনি। ঘটল এই প্রথম। কারণ, এক্ষেত্রে মহামেডান (Mohammedan Sporting) কিংবা টাউন–দু’টো টিমের একটারও ওঠা-নামার কোনও ব্যাপার ছিল না। কিন্তু অভিযোগ ধরলে, তার পরেও মহামেডান হর্ষিত সাইনি নামক এক ‘অবৈধ’ ক্রিকেটার খেলাচ্ছে ধরতে পেরে টাউনের পক্ষ থেকে পয়েন্ট ছাড়ার জন্য যে ‘চাপ’ দেওয়া হয়! যাকে ‘ব্ল্যাকমেলিং’ বলে! ময়দান বলছে, কেউ ‘ব্ল্যাকমেল’ করলে তার কী শাস্তি হয়, সিএবি পদাধিকারীদের জানা উচিত। সঙ্গে বলছে, সেই ‘ব্ল্যাকমেল’ করার অভিযোগ উঠছে যাঁর বিরুদ্ধে, সেই সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস (Debabrata Das) স্রেফ নিজের ‘স্বার্থসিদ্ধি’র জন্য এই ‘কুকীর্তি’ করলেন। দেবব্রত মহামেডানকে দশ পয়েন্ট ছাড়ার জন্য চাপ দিলেন, কারণ তিনি বর্তমানে অত্যন্ত ‘নিয়ন্ত্রণলোভী’ হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া তাঁর নাকি এখন উদ্দেশ্য বছর কয়েকের মধ্যে নিজের ছেলেকে (ময়দান বলছে যিনি ‘দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ’) সিএবিতে ঢোকানো! সে কারণেই নাকি নিজের ক্ষমতার ‘আস্ফালন’ বারবার দেখাচ্ছেন দেবব্রত! সর্বত্র চলে যাচ্ছেন। অনধিকার চর্চা ঘটিয়ে হুটহাট নানান বৈঠকে ঢুকে পড়ছেন। বলা হল, মহামেডানকে ‘চোখ রাঙানো’ও নাকি তাঁর সেই কারণে। দেবব্রত নাকি জানেন যে, তাঁর মেয়াদ ফুরোচ্ছে। তাই ছেলের সিএবি-রাজপথ প্রশস্ত করতে হলে, করতে হবে এখন। তার জন্য ‘বাহুবলী’ হতে হলে, হবে!
যাক গে যাক। এবার মহামেডানের সাংবাদিক সম্মেলনে আসা যাক। এ দিন সামগ্রিক পরিস্থিতি ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হচ্ছে যখন, সাংবাদিক সম্মেলন ডাকে মহামেডান। দুপুরের দিকে। কোচ অয়নশুভ্র মুখোপাধ্যায় ও অধিনায়ক দীপ চট্টোপাধ্যায়-সহ কয়েকজন ক্রিকেটারকে মিডিয়ার সামনে বসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে যা তাঁরা বলে গেলেন, তাতে সন্দেহ কমল কম, বাড়ল বেশি! মহামেডান অধিনায়ক দীপ বলছিলেন, “বিভিন্ন দিক থেকে খবর আসছিল যে, অবৈধ ক্রিকেটার খেলানোর জন্য আমাদের দশ পয়েন্ট কেটে নেওয়া হবে। সেটাই আমাদের মনোবল ভেঙে দিয়ে যায়। টাউন ম্যাচটা আমাদের কাছে ভীষণ সম্মানের। আমরা জেতার জন্য সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়েছিলাম শুরুতে। কিন্তু ওই খবরটা জানার পর সবাই এতটাই হতাশ হয়ে পড়ে যে, কারও আর তাগিদ নিয়ে ব্যাট করার ইচ্ছে ছিল না। তবে ‘গটআপে’র প্রসঙ্গ কেন উঠছে, বুঝতে পারছি না।’’ ‘অবৈধ’ প্লেয়ারকে নিয়ে অয়ন আবার বলে দেন, ‘‘আমরা জানতাম না যে, হর্ষিত গতবছর রনজি খেলেছে। ম্যাচ রেফারি পরে আমাদের এসে বলেন যে ওর ছাড়পত্র লাগবে। কিন্তু হর্ষিত তা নিয়ে আসতে রাজি ছিল না। চতুর্দিক থেকে হাজার রকম কথা শুনছিলাম। পরে বুঝে যাই যে দশ পয়েন্ট চলে যাবে। সেটা শোনার পরই টিমের মনোবল একেবারে ভেঙে যায়।’’
[আরও পড়ুন: ২ দিনের সফরে আজই বাংলায় মোদি, আরামবাগের সভা থেকে মুখ খুলবেন সন্দেশখালি নিয়ে?]
প্রশ্ন দুটো। এক, পৃথিবীর কোন খেলায় আজ পর্যন্ত এমন হয়েছে যে, পয়েন্ট কাটা যাবে বুঝে প্লেয়ার ‘দৃষ্টিকটু’ ভাবে ব্যর্থ হওয়ার চেষ্টা করেছে? আরে, ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল সাত গোল খাওয়ার পরেও তো গিয়ে একখানা গোল করে এসেছিল! বিশ্বকাপ অভিযান শেষ জেনেও। তা হলে? দশ পয়েন্ট চলে যাওয়া সে তুলনায় কত বড় ক্ষতি? দুই, মহামেডানের যে দশ পয়েন্ট চলে যাচ্ছে, সেটা খেলা চলাকালীন তাদের বললেন কে? যুযুধান দুই টিমের তো সেটা নিশ্চিতভাবে জেনে যাওয়ার কথা নয়! তার জন্য তো সিএবি আছে। শাস্তি কী হবে, আদৌ হবে কি না, সে নিদান তো সিএবি শোনাবে। ক্লাব তো খেলার ফাঁকে ‘তপস্যা’ করে জেনে যেতে পারে না। কেউ না কেউ নিশ্চিত মহামেডানকে সেটা বলেছে। প্রশ্ন হল, তা হলে কে বলেছে? মাঠে তো একজনই সিএবি কর্তা সে দিন উপস্থিত ছিলেন। দেবব্রত। সেই ছবিও আছে। তা হলে? উত্তেজিত ময়দান বলছে, এর পরেও যদি সিএবির নড়েচড়ে বসতে অসুবিধে হয়, যদি দুইয়ে-দুইয়ে চার করতে হাত কাঁপে, ‘কলঙ্কিত’ কর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠা হয়, তা হলে এ রাজ্যে ক্রিকেট চালানোর চেয়ে একটা কাজ করে দেওয়া ভালো। ক্রিকেট বন্ধ করে, সিএবিতে তালাচাবি ঝুলিয়ে দেওয়া ভালো!