শুভঙ্কর বসু: পঞ্চায়েত মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতেও সুরাহা মিলল না। কাটল না অচলাবস্থা, উঠল না স্থগিতাদেশ। আগামিকাল সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ফের এই মামলা উঠবে হাই কোর্টে।
এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি সুব্রত তালুকদার জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, দ্রুত এই মামলার নিস্পত্তি করতে হবে। তাই অন্যান্য রাজনীতিক দলগুলিকে হলফনামা জমা দিতে হবে না। সময় কম, তাই সকলের বক্তব্য শোনা হবে আইন মোতাবেক, মন্তব্য করেন বিচারপতি।
[পঞ্চায়েতে ভাল কাজের পুরস্কার, বিশ্বব্যাংকের ৪২৬ কোটি টাকা পাচ্ছে রাজ্য]
আদালতকে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কোন কোন ব্লকে প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি, তা জানাক বিরোধীরা। প্রশ্ন তোলেন, পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি, অথচ আদালতে এসে বিরোধীরা কি আদালতকেই প্রতারণা করছেন না? দ্বিতীয়ত, সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের ফুটেজ কখনও প্রমাণ বলে বিবেচিত হতে পারে না। তাই বিজেপির এই আবেদন কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিরোধীরা বলছে নির্বাচন কমিশন হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করেছে। তাহলে তাঁরা কেন কোর্টে এল না? মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে পুলিশের কাছে কটা অভিযোগ জমা পড়েছে, খোঁজ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন কল্যাণবাবু। এছাড়া বাম আমলে কজন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন, ও এবছর ক’জন জমা দিতে পেরেছেন সেটারও খোঁজ নেওয়া হোক বলে দাবি করেন রাজ্যের আইনজীবী। ২০০৩ ও ২০০৪-এ বাম আমলে বিজেপি নির্বাচনগুলিতে কতগুলি মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে ও এবারের নির্বাচনে কতগুলি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে, তার তুলনা করলেই গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন কল্যাণবাবু। বিরোধীরা মঞ্চে ও ঠান্ডা ঘরে বসে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন বলেও আজ জানান রাজ্যের আইনজীবী।
আদালত পালটা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করে, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন। এক্ষেত্রে, একজন সাধারণ ভোটারের মনের উপর কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?’ কল্যাণবাবু বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করছেন, যাঁরা বিডিও এবং এসপি অফিস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি বলে ধুয়ো তুলছে, তাঁরা কেন কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালো না? বিরোধীদের দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে বিজেপি কীভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল, প্রশ্ন করেন কল্যাণবাবু। রাজ্যের চাপে পড়ে নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করেও পরে তা প্রত্যাহার করেছিল বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে, তারও প্রমাণ পেশ করতে বলেন রাজ্যের আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘আমি যদি এসব কথা আগে বলতাম, তাহলে হাই কোর্ট কখনওই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে পারত না। আমি যদি বলি বিজেপির চাপেই মনোনয়ন জমা দেওয়ার মেয়াদ একদিন বাড়িয়েছিল নির্বাচন রাজ্য নির্বাচন কমিশন? নির্বাচন কমিশন নিজস্ব আইন প্রয়োগ করেই তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়।’ আদালতে রাজ্য জানায়, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন বাড়ানোর কোন আইনি অধিকার নেই কমিশনের। কমিশন যদি সময়সীমা বাড়ানোর নোটিশ না জারি করত, তাহলে এত সমস্যাই হত না বলে জানান কল্যাণবাবু।
[জিএসটি-র কোপে পড়ে ভোটের বাজারে বেজায় চটে ‘নির্বাচন’! ব্যাপারটা কী?]
এরপর সওয়াল জবাব করতে নেমে বিরোধীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের পুতুলে পরিণত হয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিট্রে করেছে তারা।’ কমিশনের জারি করা বিজ্ঞপ্তিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিকাশবাবু! তাঁর দাবি, আইন মেনে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। দুপক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর আদালত আরও একদিন স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে দেন। কাল ফের এই মামলার শুনানি। বিজেপি ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন কাল আদালতকে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারে। সবশেষে আরও একবার রাজ্যের বক্তব্য শোনা হবে। সম্ভবত তারপরই জানা যাবে, আদৌ পয়লা মে পঞ্চায়েত ভোট শুরু হবে কি না!