শুভঙ্কর বসু: বাবা-ছেলের সম্পর্কের মাঝেও এবার করোনার থাবা! স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের বিষে অবশ্য আগেই তাতে ছেদ পড়েছিল। বাঁধন যেটুকু ছিল তাও আদালতের সৌজন্যে। কিন্তু মারন ভাইরাসের দাপটে সেটুকুও ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে সেই আদালতের হস্তক্ষেপেই ফের জোড়া লাগল পিতা-পুত্রের সম্পর্ক।
বছর খানেক আগের কথা। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণে নিজের একরত্তি ছেলেটার সঙ্গে সাক্ষাতের অধিকার হারিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার শান্তনু ঘোষ। প্রাক্তন স্ত্রী অধ্যাপিকা সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় চাননি ছেলের সঙ্গে বাবার কোনও সম্পর্ক থাকুক। অগত্যা পিতার অধিকার ফিরে পেতে আদালতে দৌড়ন শান্তনু। বারাসত জেলা আদালতের মধ্যস্থতায় অবশ্য সেই অধিকার ফিরে পান তিনি। ঠিক হয়, প্রতি শনিবার বারাকপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছেলেকে নিয়ে আসবেন সংঘমিত্রাদেবী। দুপুর ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত সেখানেই বাবা-ছেলের দেখা হবে। গত বছর আগস্টে আদালতের এই নির্দেশের পর সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বাধ সাধল করোনা। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই আর ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ।
সংঘমিত্রাদেবী ছেলেকে নিয়ে আসতে পারছেন না ঠিকই, কিন্তু এই জেনারেশন নেক্সট-এর যুগে ভারচুয়ালি বা ভিডিও কলের মাধ্যমেও তো সাক্ষাৎ করা যায়। এমনটা ভেবে প্রাক্তন স্ত্রীকে ফোন করে ভিডিও কলের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চান শান্তনু। কিন্তু বেঁকে বসেন সংঘমিত্রা! জানিয়ে দেন, এমনটা তো আদালতের নির্দেশ ছিল না। ফলে ভিডিও কলের মাধ্যমে সাক্ষাৎ সম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই পিতার অধিকার ফিরে পেতে আরও একবার সেই আদালতেরই দ্বারস্থ হন শান্তনু। এবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদের এজলাসে জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি নিষ্পত্তির আবেদন জানান তিনি। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মামলার শুনানিতে তাঁর আইনজীবী সাকেত শর্মা দাবি করেন, এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সাক্ষাতের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অথচ তাঁর মক্কেলকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: কথা রাখলেন না বাস মালিকরা, কলকাতায় কন্ডাক্টরের খেয়ালখুশিতে ভাড়া গুনলেন যাত্রীরা]
সংঘমিত্রার আইনজীবী কল্লোল বোস পালটা দাবি করেন, নিম্ন আদালতের ওই নির্দেশ ইতিমধ্যেই সংশোধনের আবেদন জানিয়েছেন সংঘমিত্রাদেবী। ফলত সংবিধানের ২২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শান্তনুবাবুর এই আবেদন গ্রহণযোগ্যই নয়। নিম্ন আদালত থেকেই তাঁকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগের ছাড়পত্র আদায় করতে হবে। এ ব্যাপারে এখনই হাই কোর্ট রায় দিতে পারে না। যদিও দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর শান্তনুর পক্ষেই রায় দিয়ে পিতৃত্বের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ রায়ে জানিয়ে দিয়েছেন, এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ভারচুয়ালি অর্থাৎ ভিডিও কলের মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাতের অধিকার থেকে পিতাকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন পিতা। এ ব্যাপারে মা আপত্তি করতে পারবে না। হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনও ভিডিও লিংকের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে এই ব্যবস্থা করতে হবে বলেও রায়ে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি প্রসাদ।
[আরও পড়ুন: অজানা নম্বর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ২২ বার ফোন! পুলিশ কমিশনারকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ]
The post করোনার থাবায় বাবা-ছেলের সাক্ষাতে ছেদ, মুশকিল আসান করল হাই কোর্ট appeared first on Sangbad Pratidin.