শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: বেঙ্গল সাফারি পার্কের সিংহী ‘সীতা’র নাম নিয়ে জোর টানাপোড়েন। এবার এই ইস্যুতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাইল হাই কোর্ট। বেঙ্গল সাফারি পার্কের সিংহীর নাম নিয়ে আপত্তি তুলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে মামলা দায়ের করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চে বুধবার মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি দুপক্ষের বক্তব্য শোনার পর রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার ফের মামলার শুনানি।
বিচারপতি বলেন, ‘‘সিংহের নামকরণের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন? কীভাবে সিংহের নামকরণ হল?’’ আইনজীবী বলেন, “আমাদের আবেদন, কোনও বন্যপ্রাণীর নাম ধর্মীয় দেবদেবীর নামে রাখা যাবে না।” বিচারপতি পালটা বলেন, “নামকরণ নিয়ে কী যায় আসে?” আইনজীবীর উত্তর, “এই ধরনের নাম ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে।” বিচারপতি বলেন, “কিন্তু এ ধরনের নামকরণ তো স্নেহ বা ভালোবাসা থেকে করা হয়ে থাকে। আপত্তি কোথায়?” আইনজীবী বিরোধিতার সুরে বলেন, “কিন্তু স্নেহ দেখাতে গিয়ে কারও অপবাদ করাও তো ঠিক নয়।” বিচারপতি বলেন, “আপনি এমন বলছেন ঠিকই। কিন্তু এটা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির মানসিকতা এবং তাঁর বিচক্ষণতার উপর।” আইনজীবী ফের বলেন, “এটা যদি অপবাদ না হয়, তবে তো আগামী দিনে গাধাকেও কোনও দেবতার নামে ডাকা হবে।” বিচারপতির প্রশ্ন, “সিংহের নাম সীতা হলে অসুবিধা কোথায়?” আইনজীবীর প্রত্যুত্তর, “আমরা সীতাকে পুজো করি। তাঁর স্থান মন্দিরে। জঙ্গলে নয়।”
[আরও পড়ুন: ‘ডাকলে আবার আসব’, প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে বললেন দেব]
দেবী দুর্গার প্রসঙ্গ তুলে বিচারপতি বলেন, “দেবী দুর্গার পায়ের নিচে তো সিংহ থাকে। দুর্গাকে পুজো করার সময় তো সিংহকেও পুজো করা হয়।” আইনজীবী বলেন, “সিংহের জন্য আলাদা কোনও মন্ত্র নেই। তা হলে এ ক্ষেত্রে পুরাণ টানতে হয়।” আইনজীবীকে পুরানের কথা বলার অনুরোধ করেন বিচারপতি। আইনজীবী বলেন, “দেবী দুর্গার ১০ হাত অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির জয়কে চিহ্নিত করে। অশুভকে ১০ হাত দিয়ে সব দিক ঘিরে আক্রমণ করা হয়। তবেই বিজয় আসে। রাক্ষসকে বধ করার জন্য আমাদের পশুর শক্তি বা সাহায্য দরকার। তাই সিংহ দেবী দুর্গার পায়ের নীচে থাকে।”
বিচারপতির পালটা, “মানুষের চিন্তাধারার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নামকরণে কেন সমস্যা হবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়! সিংহ ছাড়া কি আমরা দুর্গাকে কল্পনা করতে পারি?” আইনজীবী বলেন, “এই নাম রেখে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই নাম কে রাখল? ত্রিপুরার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন তাঁরা এই নাম রাখেননি।” এর পরই বিচারপতি রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করে। বৃহস্পতিবার ফের মামলার শুনানি।