অর্ণব আইচ: পথ দুর্ঘটনার শিকারের মধ্যে ৪৫ শতাংশই পথচারী। তাই এবার পথচারীদের নিরাপত্তার উপরই গুরুত্ব দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ (Calcutta Traffic Police)। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’। এদিন পার্ক সার্কাসে এর উদ্বোধন করেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল (Vinit Goel)।
পুলিশ কমিশনার জানান, দুর্ঘটনায় যত ব্যক্তি আহত বা নিহত হন, তাঁদের মধ্যে ৪৫ শতাংশই পথচারী। ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, সাধারণভাবে দেখা গিয়েছে, রাস্তা পারাপার করতে গিয়েই বিপদে পড়েন বড় অংশের পথচারী। তার মূল কারণ, তাঁদের কারও কানে থাকে ইয়ার ফোন, আবার কেউ কানে ইয়ার পড গুঁজেই পারাপার করেন রাস্তা। ওই অবস্থায় মোবাইলে কথা বলতে বলতেও রাস্তা পারাপার করা সত্ত্বেও পুলিশের বোঝার উপায় থাকে না। এমনকী, এও দেখা গিয়েছে যে, কানে ইয়ারপড লাগিয়ে গান শোনার জন্য হর্নও শুনতে পাননি অনেকে। তাই পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের শুরু থেকেই এই ব্যাপারে পুলিশ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ছাড়াও দেখা গিয়েছে যে, জেব্রা ক্রসিংকে আমল না দিয়েই নিজের ইচ্ছামতো রাস্তা পার হচ্ছেন বহু পথচারী। অনেকেই ইচ্ছামতো দৌড়ে পার হন রাস্তা। আর তাতেই বাড়ছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা।’
[আরও পড়ুন: ‘ভারতের জাতীয় সংগীতের সময়ে দাঁড়ালে তবেই হিজাব পরব’, ইরানের মাটিতে দাবি শাটলারের]
অভিযোগ উঠেছে, রাস্তা পারাপারের সুবিধার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ‘বুম ব্যারিয়ার’ থাকলেও তা কাজ করছে না। ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা সেই খারাপ ব্যারিয়ারগুলি শনাক্ত করছেন। গাড়ি চলাচল করার সময় যাতে ‘বুম ব্যারিয়র’ ব্যবহার করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাস্তা পারাপার রোখার ব্যবস্থা করছে ট্রাফিক পুলিশ। এ ছাড়াও যাতে সারা বছরই দড়ি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক রাস্তাগুলি পথচারীদের জন্য আটকে তাঁদের পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়, সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও পথচারীরা যাতে আরও সচেতন হন, সেই ব্যাপারেও ট্রাফিক পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছে। পথচারীদের সতর্ক করতে সোশ্যাল মিডিয়া ও রাস্তায় লাগাতার প্রচার চালাবে লালবাজার।
[আরও পড়ুন: শিল্পের জন্য পতিত জমি ফেরানোর সময়সীমা বেঁধে দিল নবান্ন, বিকল্প কাজে লাগানোর ভাবনা]
এদিন পুলিশ কমিশনার জানান, বাইক দুর্ঘটনা মূলত তিনটি কারণে হয়। মদ্যপান করে বাইক চালানো, হেলমেট না পরা ও অতিরিক্ত গতি। রাতে টানা নাকা চেকিংয়ের ফলে বাইকের দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব হয়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনাও বেশ কিছু কমেছে। সমীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে যে, ৯৪ শতাংশ বাইক চালক ও আরোহী এখন হেলমেট পরেন। গত বছর জানুয়ারিতে পথ দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই বছর সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাত। ট্রাফিকের সূত্র জানিয়েছে, তবু বেশি রাতে কলকাতার কিছু জায়গায় বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই পথচারী, গাড়ির চালকদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাতের ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট ও পুলিশকর্মীদেরও টহল বাড়াতে বলেছে লালবাজার (Lalbazar)। নিয়ম না মেনে রাস্তা পার হলে বা ‘জে ওয়াকিং’ করলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে পুলিশ অন্য রাস্তা নিয়েছে। এদিন হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ড-সহ বেশ কয়েকটি ট্রাফিক গার্ডের পুলিশকর্মী ও আধিকারিকরা নজর রাখেন, কোন পথচারীরা নিয়ম না মেনে রাস্তা পার হচ্ছেন বা যেখানে সেখানে বাস থেকে ওঠানামা করছেন। ওই পথচারীদের শাস্তি হিসাবে ‘পুলিশগিরি’ অর্থাৎ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য রোদের মধ্যে রাস্তায় ট্রাফিক সামলে পুলিশকে সাহায্য করতে হবে।