ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: পুলিশের সাহায্য পেতে ১০০ ডায়াল। সেরকম আচমকা অ্যাম্বুল্যান্স দরকার পড়লে এবার ১০৮ ডায়ালের বন্দোবস্ত হতে চলেছে রাজ্যে। সরকারি এই পরিষেবা মিলবে সম্পূর্ণ নিখরচায়। উল্লেখ্য, ১০২ ডায়াল করে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকার সংস্থান এই মুহূর্তে আছে বটে, তবে তা শুধু শিশু ও প্রসূতিদের চিকিৎসার জন্য। প্রসূতি ও শিশুমৃত্যু ঠেকাতে নিখরচায় এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে বহুদিন ধরে। কিন্তু দুর্ঘটনা বা হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদিতে আক্রান্তকে আচমকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়লে আপৎকালীন কোনও নম্বর ছিল না।
সেই ঘাটতি পূরণ হতে চলেছে। এবার ১০৮ ডায়াল করলেই পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এবং অন্য অসুস্থদের নিখরচায় দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হবে, বিনিময়ে লাগবে না এক পয়সাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নতুন বছরের শুরুতেই স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিবহণ শাখা এই পরিষেবা চালু করতে চলেছে। স্বাস্থ্যভবনের খবর, প্রথম দফায় ১১০টি অ্যাম্বুল্যান্স রাজ্যজুড়ে চালু হবে। ক্রমশ প্রয়োজন অনুযায়ী সংখ্যা বাড়বে। গাড়ির মধ্যে ভেন্টিলেটর, এমনকী রক্তসঞ্চালনের ব্যবস্থাও থাকবে। অ্যাম্বুল্যান্সে চালক ও সহকারী হিসাবে নিয়োগ করা হবে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারীদের, যাতে অসুস্থের প্রাথমিক চিকিৎসায় ত্রুটি না থাকে। দরকারে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির বডি কেটে আটকে পড়া আরোহীকে দ্রুত উদ্ধারের জন্য গ্যাস কাটার বা করাতের মতো যন্ত্রও মজুত রাখা হবে অ্যাম্বুল্যান্সে।
[আরও পড়ুন: শিশির অধিকারীকে প্রণামের ‘শাস্তি’! শোকজের পর সুবল মান্নাকে ইস্তফার নির্দেশ তৃণমূলের]
এত দিন গুরুতর আহত বা হঠাৎ অসুস্থদের হাসপাতালে পাঠাতে হলে ভরসা মূলত বেসরকারি অ্যাম্বু্ল্যান্স, যার ভাড়া নিয়ে যথেচ্ছাচারের অভিযোগ অন্তহীন। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের ‘দাদাগিরি’র শিকার হয় বিপদগ্রস্ত পরিবার, বাধ্য মর্জিমাফিক ভাড়া মেটাতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এর প্রতিকারে স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিবহণ শাখা উদ্যোগী হয়। তারই ফলশ্রুতি, ১০৮ ডায়ালে নিখরচায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কোন সংস্থাকে বরাত দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে কেপিএমজি’র মতো পরার্মশদাতা সংস্থার সাহায্য নেওয়া হয়েছে। শেষমেশ ওড়িশার একটি অ্যাম্বুল্যান্স সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলার স্বাস্থ্য দপ্তর।
২০১৪ সালে পুলিশ, স্বাস্থ্য ও পরিবহণ দপ্তরের চালানো সমীক্ষা রিপোর্ট মোতাবেক, জাতীয় ও রাজ্য সড়ক মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৫৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা রয়েছে। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোর ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ট্রমা কেয়ার তৈরির কাজ সম্পূর্ণ। এবার ওখানে অ্যাম্বুল্যান্সগুলোকে রাখা হবে। কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা বা হাসপাতাল বা টোলপ্লাজায় মোতায়েন থাকবে অ্যাম্বুল্যান্স। তেলের খরচ, চালক ও সহকারীর মাস মাইনে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে পরিচালক সংস্থাকে মেটানো হবে। কোন অ্যাম্বুল্যান্স কত তেল খরচ করল, সংস্থাটি ফি-মাসে স্বাস্থ্য দপ্তরকে তার হিসাব দেবে। ১০৮ ডায়াল চালু হবে প্রথমে জেলায়, তার পরে কলকাতায়।