গৌতম ব্রহ্ম: ক্যানসার চিকিৎসা ও গবেষণার ‘রিজিওনাল সেন্টার’। প্রতিবেশী রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, সিকিম থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন ক্যানসারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসা পেতে। কিন্তু চূড়ান্ত অব্যবস্থার নজির সেই চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটেই। কার্যত ব্লক স্তরের সরকারি পরিকাঠামো নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে চলা স্বশাসিত এই হাসপাতাল। এমনই অভিযোগ রোগীদের।
হাজরার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে হাজার হাজার মানুষ যান ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে। অথচ, রোগনির্ণয়ের অত্যাধুনিক কোনও যন্ত্রই নেই সেখানে। নেই পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। ফলে বহু ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের সদিচ্ছা থাকলেও রোগ নির্ণয় সঠিকভাবে হচ্ছে না। ফাঁক থাকছে চিকিৎসাতেও। এমনই অভিযোগ করলেন ডাক্তারদের একাংশই।
[আরও পড়ুন: সাসপেন্ডেড অফিসারের সমর্থনে ডিজিকে হুমকি, রেল কর্তার টুইটে বিতর্ক]
আধুনিক রেডিওথেরাপি সিটি স্ক্যান নির্ভর। সূত্রের খবর, সিএনসিআই-তে একটি নতুন মেশিন আনা হয়েছে। কিন্তু, সেটি ১৬ স্লাইসের। অথচ, বাজারে ১২৮ স্লাইসের মেশিন চলে এসেছে। কলকাতা তথা ভারতের বেশিরভাগ সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল এখন ৬৪ বা তার থেকে বেশি স্লাইসের সিটি স্ক্যান মেশিন ব্যবহার করছে। তাছাড়া চিত্তরঞ্জনের মেশিনটি রেডিওথেরাপি ইউনিটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে, রোগ নির্ণয়ে মেশিনটি যখন ব্যবহৃত হয়, তখন বন্ধ রাখতে হয় রেডিওথেরাপি।
রাজ্য তথা দেশে কোলন ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। অথচ, এখানে কোলনোস্কোপ যন্ত্রই নেই। ‘আপার জিআই এন্ডোস্কোপ’ নেই। খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ক্যানসার নির্ণয়ে এই মেশিন অপিরহার্য। এমআরআই মেশিনও নেই। আছে শুধু কিছু রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা। টিসি, ডিসি, ইএসআর, হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেট, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, লিভার ফাংশন পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলো ব্লক পর্যায়ের যেকোনও সরকারি হাসপাতালেই হয়।
[আরও পড়ুন: আসছে দাবদাহের দিন, বিদ্যুতের রেকর্ড চাহিদা মেটাতে প্রস্তুতি শুরু নিগমের]
ব্লাড ব্যাঙ্ক থাকলেও তা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে না। রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থাও নেই। এখনও ‘হোল ব্লাড’ দেওয়া হয় চিত্তরঞ্জনে। অথচ, এখানে রক্তের ক্যানসারের চিকিৎসা হয়। আরও অবাক করা বিষয় হল, এখানে কোনও হেমাটোঅঙ্কোলজিস্ট নেই। রেডিওথেরাপিস্টরাই লিউকোমিয়ার চিকিৎসা করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সিএনসিআই-এর অধিকর্তা ডা. জয়ন্ত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “৩০ জনের জায়গায় ২১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়েই মেডিক্যাল অফিসাররা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ভূমিকা পালন করছেন।”
[আরও পড়ুন: মাল্টিপ্লেক্সের দাপট, দর্শকের অভাবে বন্ধ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মিত্রা]
ক্যানসার রোগ নির্ণয়ের এবং চিকিৎসার অত্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি ‘টিউমার মার্কার স্টাডি’। পিজি, এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো সরকারি হাসপাতালে এগুলো ২ বছর আগে থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে এখনও চালু করা যায়নি। ‘নেই’-এর তালিকা দীর্ঘ। জয়ন্তবাবু পরিষেবার ঘাটতির কথা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, “জায়গার অভাবে এমআরআই-সহ অনেকগুলি পরিষেবা হাজরায় শুরু করা যায়নি। তবে ফাঁকফোকরগুলি ভরাট করেই রাজারহাটে শুরু হবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস।” কতদিনে হাল ফিরবে হাসপাতালের, সেই অপেক্ষায় রোগীরা।
The post নেই আধুনিক চিকিৎসার কোনও সরঞ্জাম, চূড়ান্ত অব্যবস্থা চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে appeared first on Sangbad Pratidin.