স্কুল-কলেজ-জয়েন্ট বা চাকরির পরীক্ষায় ভালো ফল করার টিপস দিলেন বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায়। শুনলেন অনিন্দ্য সিংহ চৌধুরি।
মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। কিংবা জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট বা স্কুল-কলেজের গণ্ডি শেষে সরকারি চাকরি পাওয়ার পরীক্ষা। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি পরীক্ষাই আসলে ‘লড়াই বা যুদ্ধ’। আর এই লড়াইগুলি জেতা মোটেও সহজ কাজ নয়। কেননা, প্রতিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে। আর কেউ যদি ভাবে, সে মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রী বলে সব পরীক্ষায় বাজিমাত করবে, তা হলে মস্ত বড় ভুল হবে। বিশেষ করে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় দেখা যায়, মধ্যমেধার ছাত্রছাত্রীরাই দুর্দান্ত ফল করে। ভালো পড়ুয়ারা অনেকে শুধুমাত্র অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণে সফল হতে পারে না। তাই, ছাত্রছাত্রীদের বলব, যে কোনও পরীক্ষায় সফল হতে গেলে ‘শর্টকাট’ পদ্ধতি অবলম্বন করবে না। বরং পরীক্ষার অনেক আগেই প্রস্তুতি শুরু করে দেবে, লক্ষ্য স্থির রাখবে। ভালো ফল করতে হবে, এই প্রতিজ্ঞা রাখবে, দেখবে ভালো ফল হবেই। যে কোনও পরীক্ষায় সেরা হওয়ার
জন্য কয়েকটি দিকে নজর দিতে হয়, তা মানলে অন্যদের টেক্কা দেওয়া সহজ হয়।
জবরদস্ত প্ল্যানিং জরুরি
স্কুল বা কলেজের পরীক্ষা হোক বা চাকরির পরীক্ষা– সেই পরীক্ষায় কোন কোন বিষয় রয়েছে এবং সেগুলির মধ্যে তুমি কোন কোন বিষয়ে ‘স্ট্রং’ ও কোনটা একটু হলেও ‘দুর্বল’ তা দেখে নাও। একই সঙ্গে দেখে নেবে, পরীক্ষায় কেমন ধরনের প্রশ্ন আসে। মনে রাখবে, যে বিষয়ে তুমি একটু দুর্বল, সেটার দিকে আগে থেকে নজর দাও। কেন না, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হলে শুধুমাত্র যে বিষয়গুলিতে তুমি স্ট্রং, তাতে নম্বর পেলেও সামগ্রিকভাবে কিন্তু রেজাল্ট ভালো হবে না। তাই প্রতিটি বিষয়েই ভালো হতে হবে। তাই প্রথম থেকেই টার্গেট থাকবে, প্রতিটি বিষয়ের সব চ্যাপ্টারে তোমার ভালো দখল
যেন থাকে। না হলে ভালো রেজাল্ট করা অসম্ভব।
মক টেস্টের তুলনা নেই
পরীক্ষায় সফল হতে মাঝেমধ্যেই দেখতে হবে কতটা তুমি তৈরি? আর এ জন্য সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হল ‘মক টেস্ট’। দরকার হলে প্রতিমাসে বা ১৫ দিন অন্তর টেস্ট দিলে তুমি বুঝতে পারবে, কোন কোন প্রশ্নের তুমি সহজেই উত্তর দিতে পারছ, আর কোনটায় অসুবিধা হচ্ছে। আর বোঝা যাবে, বিষয়ের প্রতি কতটা দখল হয়েছে। কোথায় কোথায় এখনও ঘাটতি রয়েছে। সব চেয়ে বড় ব্যাপার এই টেস্টের মাধ্যমে শুধু যে নিজের পারফরম্যান্স গ্রাফটা বুঝতে পারবে তা নয়, পরীক্ষা নিয়ে যে আতঙ্ক থাকে, সেটাও দিবি্য দূর হয়ে যাবে। বাড়িতে ঘড়ি ধরে মক টেস্ট তো দেওয়াই যায়, প্রয়োজন হলে কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও তা দিলে ভালো হবে।
সঠিক গাইডেন্সের প্রয়োজন
এটা তো ঠিকই, প্রতিটি পরীক্ষা বা লড়াইয়ে জয়ের মুকুট পরতে হলে যেমন ভালো রণকৌশল কিংবা প্ল্যানিং প্রয়োজন, ঠিক তেমনই দরকার সঠিক গাইডেন্স। সঠিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যদি কোনও ছাত্র বা ছাত্রী পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়, তা হলে সে ভালো করতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই পড়ুয়া যদি মনে করে, ভালো ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারে। কেননা, সেখানে যেমন পরীক্ষায় ভালো করার কৌশল শেখানো হয়, ঠিক তেমনই সেখানে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে প্র্যাকটিস করার সৌজন্যে পরীক্ষায় সফল হওয়ার একটি প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতাও গড়ে ওঠে, যা খুব দরকার। পাশাপাশি বলব, যারা পরীক্ষায় আগে ভালো ফল করেছে, তাদের থেকেও টিপস নেওয়া জরুরি। তারা কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল, লিখিত পরীক্ষায় কোন কোন দিকে নজর দিলে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে – এই বিষয়গুলি জানলে ভালো হবে।
টেক্সট বই খুঁটিয়ে পড়া
পরীক্ষায় ভালো ফলের অন্যতম শর্তই হল টেক্সট বই খঁুটিয়ে পড়তে হবে। এখন যা প্রশ্নের ধরন, তাতে পাঠ্য-বই ভালো করে পড়লেই কেল্লা ফতে। নোটসের বদলে রেফারেন্স বই পড়া অবশ্যই জরুরি। অন্যদিকে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে আগেই সিলেবাস দেখে ভালো লেখকের বই খুঁজে নিয়ে পড়ে নিতে হবে। মনে রাখবে, ‘কনসেপ্ট’ যদি ভালো করে জানা থাকে, তাহলে পরীক্ষায় যে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে অসুবিধা হয় না।
কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই
ঠিকমতো পরিকল্পনা করে অনেকদিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করা যায়, তাহলে সাফল্য পাওয়া থেকে তোমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমার এতদিনের অভিজ্ঞতায় দেখছি, অনেক পিছনের সারির ছেলেমেয়ে শুধুমাত্র পরিশ্রমের বলেই আজ সাফল্যের মুখ দেখেছে। তাদের পুঁজি ছিল কেবলমাত্র পড়াশোনা শেষ করে একটা সরকারি চাকরি পেতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মানসিকতা, ব্যস, এর জেরে এখন অনেক ছাত্রছাত্রী সরকারি ক্ষেত্রে উচ্চপদে রয়েছে। তাই বলব, যদি তোমাদেরও কলেজ শেষ করেই সরকারি চাকরির টার্গেট থাকে, যদি তোমারও যদি নিশ্চিত জীবন কাটাতে চাও তাহলে স্কুলের গণ্ডি পার করেই কঠোর পরিশ্রমের পথ বেছে নাও। দেখবে এই খাটনি বৃথা যাবে না।
হতে হবে ‘আত্মবিশ্বাসী’
যে কোনও পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসী। সবসময় ‘পজিটিভ’ মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ আমি পারব–এই বিশ্বাস থাকলে অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেও ভালো ফল করা সম্ভব। হয়তো, পরীক্ষার আর বেশিদিন সময় নেই, সেভাবে প্রস্তুতি হয়নি। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভালোভাবে নিজেকে তৈরি করার জন্য নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন।
জেতার ‘প্যাশন’ থাকতেই হবে
অন্যদের থেকে তুমিও কিন্তু পিছিয়ে নেই। এই পরীক্ষার ‘লড়াই’য়ে জিততেই হবে। যে কোনও পরীক্ষায় সফল হওয়ার ‘প্যাশন’ না থাকলে কিংবা ‘স্বপ্ন’ দেখার ইচ্ছে না থাকলে কখনও ভালো করতে পারবে না। তাই পরীক্ষায় সফল হতেই হবে, এই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে নিজের মধ্যে। প্রয়োজনে সফল ব্যক্তিদের আত্মজীবনী পড়ে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এটা মনে রাখবে, জয়ীদের কথা মানুষ মনে রাখে। জানবে সফল হওয়ার সকল রসদ রয়েছে তোমার মধ্যেও। শুধু সেটাকে বুদ্ধি করে সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।