সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রক্তাক্ত মণিপুরে (Manipur) লুকিয়ে রয়েছে কোন রহস্য? ভয়াবহ জাতিদাঙ্গার নেপথ্যে কি তবে মাদক সন্ত্রাস? গোটা তাণ্ডবের নীল নকশা কি আগে থেকেই তৈরি ছিল? এমন একগুচ্ছ প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটির থমথমে বাতাসে। এহেন পরিস্থিতিতে সত্য উদ্ঘাটনে আসরে নামল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে সিবিআই জানিয়েছে, মণিপুর হিংসায় ছ’টি এফআইআর দায়ের করেছে তারা। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) তৈরি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, কুকি-মেতেই জাতিদাঙ্গার ছ’টি মামলায় সিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। গত বৃহস্পতিবারই উল্লিখিত মামলাগুলিতে সিবিআই তদন্ত চেয়ে অমিত শাহের (Amit Shah) মন্ত্রকে চিঠি পাঠায় মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সরকার। সূত্রের খবর, মণিপুর হিংসায় ৩ জুন পর্যন্ত সবমিলিয়ে অন্তত চার হাজার এফআইআর দায়েক করা হয়েছে। তারমধ্যে ছ’টি মামলায় তদন্তভার নিজেদের হাতে নিয়েছে সিবিআই। এই হিংসা কি পূর্বপরিকল্পিত ছিল, তা জানতে তদন্ত করবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
[আরও পড়ুন: ‘আদানির রথ থামিয়েছিলেন লালু, মোদিকে আটকাবেন নীতীশ’, গর্জন তেজস্বীর]
উল্লেখ্য, কুকি-মেতেই সংঘর্ষে মণিপুর এখন অশান্ত, হিংস্র। সেখানকার ‘মেতেই’ সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতির তফসিলি জাতির স্বীকৃতির দাবি নিয়ে আন্দোলন ওই ছোট্ট রাজ্যে নাগা-কুকি জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে পালটা প্রত্যাঘাতের জন্ম দিয়েছে। অতএব, রক্তাক্ত লড়াই। কারফিউ। পুলিশের গুলি। দিল্লির যন্তরমন্তরে মেতেই হিন্দু-বৈষ্ণব গোষ্ঠীর নজরকাড়া আন্দোলন, নাগা-কুকিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের শ্রীবৃদ্ধি। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ঘোরাল। তাছাড়া, মায়ানমার থেকে কুকি জঙ্গিরা এসে আগুনে ঘি ঢালছে। বিগত দিনে, মণিপুর থেকে একটি ছোটখাটো যুদ্ধ চালনা করার মতো অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনা।
প্রসঙ্গত, মণিপুরে ট্রাইবাল বা আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই নতুন কিছু নয়। কয়েকশো বছর ধরে তা চলছে। তবে এবার তা ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেতেইরা তফসিলি উপজাতির তকমা দাবি করে বারুদের স্তূপে আগুন দিয়েছে।গত এপ্রিল মাসে রাজ্য সরকারকে মেতেইদের দাবি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপর ৩ মে ‘ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ’ শুরু করে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’। মেতেইদের তফসিলি উপজাতির তকমা না দেওয়ার দাবিতেই ছিল এই মিছিল। ক্রমেই তা হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। মেতেই সংখ্যাগুরু ইম্ফল উপত্যকায় বেশকিছু বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এর প্রতিক্রিয়াও হয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে হিংসা।