স্টাফ রিপোর্টার: হলদিয়ার দুই নিষ্প্রদীপ গ্রামে রাজ্য সরকারের তরফে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজে বাধা দিতে নেমে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধে শনিবার বিকেলে পিছু হঠল কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিষ্ণুরামচক ও সৌতনচক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পরপর খুঁটি পুঁতে ট্রান্সফরমার বসানোর কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চালাচ্ছেন বিদ্যুৎ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা। কিন্তু শনিবার দুপুরে আচমকা বন্দরের কয়েকজন অফিসার কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে খুঁটি পোঁতার কাজে বাধা দিতে যান।
অফিসাররা দাবি করেন, যে মাটিতে খুঁটি বসেছে তা বন্দরের এলাকায়। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আগের মতো এদিনও রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়ে দেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, জমির অধিকার নিয়ে মামলা চলতেই পারে। কিন্তু তার জন্য বিদ্যুৎ ও জল থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করা যাবে না। দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনেই ওই দুই গ্রামের যাঁরা ইতিমধ্যে টাকা জমা দিয়েছেন তাঁদের আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বদ্ধপরিকর।’’
[আরও পড়ুন: মিড ডে মিলের খিচুড়িতে সাপ! না জেনে খাবার খেয়ে অসুস্থ ২ শিশু, শোরগোল ঘাটালে]
কেন্দ্রীয় বাহিনী খুঁটি তুলে দিতে এসেছে এমন খবর দুপুরে ছড়াতেই দুই গ্রামের বাসিন্দারা দলমত নির্বিশেষে দলে দলে বেরিয়ে আসেন। রান্না বন্ধ রেখে, হেঁশেলে তালা দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন মহিলারা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পথ আগলে দাঁড়ান হাজারখানেক মানুষ। মানুষের ঢাল সামনে আসায় থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহুবছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়া সিপিএম
নেতা-নেত্রীরাই এখন বিজেপিতে। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক এখন বিজেপিরই বিধায়ক। এতদিন যারা বিদ্যুৎ দেয়নি সেই ‘অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডে’র উসকানিতেই এই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অভিযানে নেমেছেন বন্দরের অফিসারদের একাংশ। দল বেঁধে সবাই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও বিজেপির বিরুদ্ধে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। এসে পৌঁছন হলদিয়ার তৃণমূল নেতৃত্বরা। সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যান প্রাক্তন পুরপ্রধান দেবব্রত মণ্ডল। রাস্তায় বসে পড়ে আটকে দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
খবর পৌঁছয় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কাছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। অরূপ জানিয়ে দেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনার সার্থক রূপায়ণ করতে আমরা ওই দুই নিষ্প্রদীপ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর সংকল্প নিয়েছি। জমি নিয়ে পৃথক মামলা চলতেই পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না দুই গ্রামকে।’’ দলীয় মুখপাত্র কুণাল সরাসরি পূর্ব মেদিনীপুর জেলাপ্রশাসনকেও বিষয়টি নিয়ে অবগত করেন। ঘটনাস্থলে থাকা দলীয় কর্মীদেরও একই সঙ্গে কুণাল জানিয়ে দেন, ‘‘কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। বিজেপি চাইছে না এলাকার অন্ধকার কেটে আলো আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।’’
বন্দরের অফিসারদের একাংশেরও অবশ্য দাবি, এভাবে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে বিদ্যুতের খুঁটি তোলার চেষ্টা করা ঠিক নয়। বস্তুত গ্রামবাসীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পিছু হটে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিশাল নারীবাহিনীর স্লোগান আরও জোরে শোনা যেতে থাকে। কিছুক্ষণের জন্য ওই দুই নিষ্প্রদীপ গ্রামে বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ থমকে গেলেও ফের চালু করেন ইঞ্জিনিয়াররা। এরই মধ্যে খবর, নতুন বছরের প্রথম দিন দুপুরে ওই দুই গ্রামে আসছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। উল্লেখ, মাসখানেক আগে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দুই নিষ্প্রদীপ গ্রামের খবর পান তৃণমূল মুখপাত্র। ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তখনই তিনি বিষয়টি নিয়ে ফোন করেন বিদ্যুৎমন্ত্রীকে। বস্তুত পরদিন থেকে গ্রামে গ্রামে সমীক্ষা ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর।