গৌতম ব্রহ্ম: ডিভিসি-র দুই জলাধার থেকে জল ছাড়া নিয়ে ফের কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর শুরু হয়েছিল আগেই। শুক্রবার তা আরও উসকে উঠল প্রধানমন্ত্রীকে এবিষয়ে নালিশ জানিয়ে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে। দুপুরে এই চিঠির জবাব এল রাতে। মুখ্যমন্ত্রীকে পালটা চিঠি লিখে কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রক সাফ জানাল, একতরফাভাবে নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদের জানিয়েই জল ছেড়েছে ডিভিসি। দোষারোপ নয়, পারস্পরিক সহযোগিতা কাম্য। চিঠিটি লিখেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি আর পাটিল।
মুখ্য়মন্ত্রীকে পালটা চিঠি জলশক্তি মন্ত্রকের।
এদিন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ‘ম্যান মেড বন্যা’। মমতার দাবি, ডিভিসি আরেকটু সতর্ক হলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। ২০০৯ সালের পর বাংলায় এত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলেও চিঠিতে দাবি করেছিলেন তিনি। পরিসংখ্যান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ডিভিসি অপরিকল্পিতভাবে একক সিদ্ধান্তে মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে। যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলা, বিশেষ করে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জলের তলায়। দ্রুত নদীগুলির ড্রেজিং করানোর আবেদনও জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
তারই পালটা চিঠি এল শুক্রবার রাতে। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সিআর পাটিল নরমে-গরমে চিঠি লিখে বোঝাতে চাইলেন, যা যা অভিযোগ মমতা তুলছেন, তা সঠিক নয়। ঝাড়খণ্ড-বাংলার মধ্যে যেসব জলাধার রয়েছে, সেখান থেকে জল কখন কীভাবে ছাড়া হবে, তা ‘দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটি’ (DVRRC) নামক একটি কমিটির দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা সরকারের ইঞ্জিনিয়াররা রয়েছেন। এই কমিটির সম্মতি নিয়েই জল ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রকের দাবি, ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর যে পরিমাণ জল ছাড়ার পরিকল্পনা হয়েছিল, রাজ্যের অনুরোধে তার থেকে ৫০ শতাংশ কম জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ১৬ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারের সংস্কারের কথা বলেছিলেন মমতা। সেই প্রসঙ্গেরও উল্লেখ রয়েছে জলশক্তি মন্ত্রকের চিঠিতে। মন্ত্রকের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী যে সংস্কারের কথা বলেছেন তা প্রযুক্তিগতভাবে বা অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।