ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: বিশ্বভারতীর (Vishva Bharati) অনুষ্ঠানে গিয়ে একাধিক বিতর্ক উসকে দিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। রবীন্দ্রনাথ ‘কালো’ ছিলেন বলে শৈশবে অবহেলিত হয়েছেন, এহেন মন্তব্য করে তিনি জড়ালেন নয়া বিতর্কে। এ নিয়ে তাঁকে পালটা জবাবও দিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
এছাড়া নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP 2021) নিয়ে তাঁর দাবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে শিক্ষার কথা বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি তারই প্রতিফলন। রাজ্য সরকারকেও এই নীতি গ্রহণ করতে হবে। অথচ নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া তেমন নয়। সবচেয়ে বড় কথা, যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিরোধিতায় রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির কোলে পাঠদানের জন্য বিশ্বভারতী তৈরি করেছিলেন, সেখানে জাতীয় শিক্ষানীতি কিন্তু নির্দিষ্ট করে বাঁধাধরা শিক্ষার কথাই বলে।
[আরও পড়ুন: Taliban Terror: আফগানিস্তানে কাজে গিয়ে বিপদের মুখে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা, উদ্বিগ্ন পরিবার]
বুধবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের (Subhas Sarkar) সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ”নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি রবীন্দ্রনাথের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ। তিনি যেভাবে শিক্ষাপ্রসারের চেষ্টা করেছিলেন, যার জন্য বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা এবং সেই শিক্ষার ভাবনা প্রয়োগ, সেভাবেই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারও তা মেনে নিতে বাধ্য হবে।” তাঁর এই বক্তব্য নিয়েই সমালোচনা শুরু হয়েছে শিক্ষামহলে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রবীন্দ্রনাথের মতো মুক্তচিন্তার ভাবধারা অনুযায়ী কি তৈরি হয়েছে নতুন শিক্ষানীতি? আবার ওয়াকিবহাল মহলের আরেকাংশের অভিযোগ, নয়া শিক্ষানীতির খসড়ায় দু, একটি নিয়ম বিশ্বভারতীর ধাঁচে হলেও, তা গোটা পদ্ধতির তুলনায় সামান্যই। বাঁধাধরা, প্রয়োগমূলক শিক্ষার পক্ষে যে নীতি, তা কীভাবে রবীন্দ্র ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ? এই প্রশ্নের উত্তর বোধহয় কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারই একমাত্র জানেন।
[আরও পড়ুন: Taliban Terror: আফগানিস্তান নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা প্রশংসনীয়, PM Modi-কে চিঠি দিব্যেন্দু অধিকারীর]
আরও একটি বিষয়ে এদিন বিশ্বভারতীততে বিতর্কের হাওয়া। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেন বিশ্বভারতীর অনু্ষ্ঠানে? এই প্রশ্ন উঠতেই অবশ্য জবাব দিয়েছেন ধ্রুব। তাঁর সাফাই, তিনি রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানাতেই এসে ছিলেন। এখানে কোনও রাজনীতিই নেই।
তবে এই সব ছাপিয়ে এদিনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের গাত্রবর্ণ নিয়ে সুভাষ সরকারের মন্তব্য। রবীন্দ্রনাথ কালো ছিলেন বলে মাও নাকি তাঁকে কোলে নিতেন না, এই মন্তব্য অবশ্য সামলেও নিয়েছেন তিনি। পরে বলেন, ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় কবিগুরুর গায়ের রং খানিকটা ভিন্ন ছিল। তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) বলেন, ”সুভাষ সরকার কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের থেকে বড়? তাই উনি দেখতে গিয়েছিলেন যে তাঁকে কারা অবহেলা করেছে? বিজেপি রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে কিছু জানেই না, কী আর বলবে?”