দীপঙ্কর মণ্ডল: করোনা আবহে লকডাউনে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা সাত মাস ধরে বন্ধ। তবে শিক্ষকদের বেতন এক টাকাও কমায়নি রাজ্য সরকার। বাড়িতে বসেই পূর্ণ বেতন পাচ্ছেন তাঁরা। তার পরেও শিক্ষকদের একটি অংশ চুটিয়ে টিউশন করে যাচ্ছেন! এমন অভিযোগ পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন (NCPCR) রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে।
শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, স্কুলশিক্ষকদের টিউশন (Private Tution) করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোভিড পরিস্থিতিতে বেসরকারি কর্মী, ছোট দোকানদার, হকার, পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশাপাশি প্রবল দুর্দশায় সাধারণ গৃহশিক্ষকরা। উচ্চশিক্ষিত এই বেকাররা অনেকেই ১০০ দিনের কাজ বা সবজি বিক্রির মতো পেশায় চলে যাচ্ছেন। জেলাগুলি থেকে বিক্ষিপ্তভাবে আত্মহত্যার খবরও আসছে। উলটোদিকে স্কুল শিক্ষকরা বাড়িতে বসে অনলাইনে বা কোচিং সেন্টার খুলে চুটিয়ে টিউশন পড়িয়ে যাচ্ছেন। বেতনের সঙ্গে যোগ হচ্ছে টিউশনের হিসাব বহির্ভূত টাকা। তারা ফুলেফেঁপে উঠলেও প্রায় না খেতে পেয়ে অবর্ণনীয় কষ্টে দিনাতিপাত হচ্ছে গৃহশিক্ষকদের।
[আরও পড়ুন: ‘লিফটে করে উঠিনি, ধাপে ধাপে এতদূর উঠেছি’, তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীর]
স্কুলশিক্ষকদের একাংশের এই ক্ষমাহীন দুর্নীতি ও গৃহশিক্ষকের দুর্দশার কথা জানতে পেরেছে এনসিপিসিআর। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন জানিয়েছে, বাংলার প্রত্যেকটি জেলায় তদন্ত হবে। প্রথমে বেছে নেওয়া হয়েছে বীরভূমকে। এই জেলায় সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন এক গৃহশিক্ষক। লকডাউনের কবলে প্রবল আর্থিক কষ্টে ছিলেন তিনি। আপাতত বীরভূমের সাধারণ গৃহশিক্ষকদের দুর্দশা ও স্কুল শিক্ষকদের বেআইনি টিউশনের রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন। ধাপে ধাপে সমস্ত জেলার রিপোর্ট চাওয়া হবে বলে কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন। গৃহশিক্ষক উন্নয়ন সমিতির রাজ্য সম্পাদক পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে পাশ করিয়ে দেওয়া হবে এই সরকারি ঘোষণায় অনেক বাবা-মা আমাদের কাছে ছেলেমেয়েদের টিউশন পড়াচ্ছেন না। তবে স্কুল শিক্ষকরা অনলাইনে অথবা অফলাইনে চুটিয়ে টিউশন করছেন। অন্যদিকে সাধারণ গৃহশিক্ষকরা কেউ সবজি বিক্রি করছেন, কেউ ১০০ দিনের কাজে নাম লেখাচ্ছেন আবার হতাশায় কেউ আত্মহত্যাও করছেন।”
[আরও পড়ুন: ‘কিছু পুলিশ কর্মীর শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছে’, ফের অগ্নিমিত্রার নিশানায় উর্দিধারীরা]
রাজ্যে গৃহশিক্ষকের সংখ্যা ৫ লক্ষেরও বেশি। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট টিউটরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর কোচবিহার জেলা সম্পাদক অমিতাভ কর জানিয়েছেন, “আমাদের দুরবস্থার কথা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। সামান্য কিছু আর্থিক সাহায্য পেলে লক্ষ লক্ষ মানুষ সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের আবেদনে সরকার এখনও কোনও সাড়া দেয়নি।”