সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'হেলথ ড্রিঙ্কে'র তকমা হারাল বোর্নভিটা! কেবল বোর্নভিটা নয়, একই ধরনের একাধিক পানীয়কে ‘হেলথ ড্রিঙ্ক’ ক্যাটেগরি থেকে সরানোর নির্দেশ দিল কেন্দ্র। এই বিষয় ওই সংস্থাগুলিকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তরফ। কিন্তু বোর্নভিটা 'হেলথ ড্রিঙ্কে'র তকমা হারাল কেন?
'হেলথ ড্রিঙ্কে'র বিজ্ঞাপনে জোয়ার দেখা গিয়েছিল নয়ের দশকের গোড়ায়। সৌজন্যে টেলিভিশন। 'বোকাবাক্সে'র অধিপত্য যত বেড়েছে দেশে, তত জনপ্রিয় হয়েছে হরলিক্স, ভিভা, বুস্ট, বোর্নভিটা, কমপ্ল্যানের মতো 'হেলথ ড্রিঙ্ক'গুলি। কপিল দেব থেকে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তদের মতো বিখ্যাত খেলোয়াড়দের দিয়ে যেমন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, তেমনই টিভিপর্দার নকল চিকিৎসকরা গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে নিজের নিজের ব্র্যান্ডের তুমুল প্রচার চালিয়েছেন। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে। সব বাড়ির রান্নাঘরে কিংবা ডায়নিং টেবিলে শোভা পায় জনপ্রিয় ড্রিঙ্কগুলি। সেই রেওয়াজ কমবেশি চলছিলই। যদিও ‘ন্যাশনাল কমিশন অফ প্রোটেকশন ফর চাইল্ড রাইটস’ চিন্তার কথা জানাল।
[আরও পড়ুন: সৌদির জেলে ১৮ বছর বন্দি, মৃত্যুদণ্ড এড়াতে প্রয়োজন ৩৪ কোটি! জোগাড় করল কেরলবাসী]
সিআরপিসি অ্যাক্ট ২০০৫ এর সেকশন ১৪ এর আওতায় এক তদন্ত চালিয়েছিল শিশুর অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংস্থাটি। তারা তদন্ত চালিয়ে দেখেছে, বোর্নভিটায় রয়েছে মাত্রারিক্ত চিনি। হেলথ ড্রিঙ্কে যে পরিমাণ চিনি থাকা উচিত, তা পেরিয়ে গিয়েছে বোর্নভিটা। ফলে তা কখনই স্বাস্থ্যকর পানীয়ের তালিকায় থাকতে পারে না, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, এর আগে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’কে ‘ন্যাশনাল কমিশন অফ প্রোটেকশন ফর চাইল্ড রাইটস’ তরফে এই সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল। যদিও সেই সময় অভিযুক্ত কোম্পানিটি জানিয়েছিল, তাদের পানীয় ছোটদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। পানীয়ে কী কী উপকরণ রয়েছে তাও জানিয়েছিল কোম্পনিটি।
তদন্ত রিপোর্ট অন্য কথা বলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, বিপজ্জনক মাথা চিনি ছাড়াও, ক্ষতিকারক রং, অতিরিক্ত কোকো ব্যবহার করা হয় বোর্নভিটায়। যা শিশুদের শরীরের জন্য বিষের সমতুল্য। প্রতি চামচে এত পরিমাণ চিনি ঢোকে বাচ্চার শরীরে যা পরবর্তী সময়ে নানারকম অসুখের কারণ হয়ে উঠতে পারে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বর্নভিটার ২ চামচ মানে ২০ গ্রামে সাড়ে সাতগ্রামেরও বেশি চিনি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রামে চিনি থাকে ৭৩.১ গ্রাম।
[আরও পড়ুন: ‘খবরদার!’, ইজরায়েলের বুকে হামলার আশঙ্কা নিয়ে ইরানকে কড়া হুঁশিয়ারি বাইডেনের]
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এখনকার বাচ্চাদের ছোট থেকেই ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, লিভারের অসুখ দেখা দিচ্ছে। বেশিরভাগই ভুগছে ওবেসিটিতে। তার অন্যতম কারণ বাজারচলতি হেলথ ড্রিঙ্ক। বাবা-মায়েরা বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলে বাজার থেকে হেলথ ড্রিঙ্কই কিনে আনছেন। এতে লাভের বদলে ক্ষতি হচ্ছে বেশি। উল্লেখ্য, পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের জেরে সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন যোগগুরু রামদেব। নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পরেও শীর্ষ আদালত রেয়াত করেনি। বোর্নভিটা-সহ অন্যান্য 'হেলথ ড্রিঙ্কের বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধেও কি একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল না, সেই প্রশ্ন উঠছে।