চেইলের উপত্যকা৷ চেইলের আনাচে-কানাচে ঘুরে অভিজ্ঞতার কথা লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী৷
হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম। হিমাচলের নৈসর্গিক প্রকৃতি ট্যুরিস্টদের আকর্ষণের কেন্দ্র। এখানে অজস্র নাম না জানা ট্যুরিস্ট স্পট যেমন রয়েছে, তেমনই একডাকে চেনা যায় এমন স্থানও রয়েছে। এখানকারই একটি ছোট্ট সুন্দর হিল স্টেশন হল চেইল। ২,২৭৬ মিটার উঁচুতে এর অবস্থান। নির্জন, নিরালা চেইল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চেইল প্যালেসটির জন্য। ‘থ্রি ইডিয়ট্স’ ছবির শুটিং হয়েছিল এখানে। এই ছবিতে র্যাঞ্চোর প্রাসাদোপম যে বাড়িটি দেখানো হয়েছিল, সেটা এই চেইল প্যালেস। ছবির সাফল্যের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও এই প্রাসাদের কদর বাড়তে থাকে। এই প্যালেসের স্থাপত্যও নজরকাড়া।
[সিঙ্গাপুর-ব্যাংককের মতো টানেল অ্যাকোয়ারিয়াম এবার শিলিগুড়িতেও]
ব্রিটিশ আমলে চেইল প্যালেস তৈরি করেছিলেন পাতিয়ালার মহারাজা। একটি ক্রিকেট গ্রাউন্ড আর পোলো গ্রাউন্ডও রয়েছে পাতিয়ালার রয়্যাল ফ্যামিলির। ক্রিকেট গ্রাউন্ডটি পৃথিবীর উচ্চতম গ্রাউন্ড হিসেবে জনপ্রিয়। ২,২৫০ মিটার উচ্চতায় রয়েছে গ্রাউন্ডটি। সিমলা থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে স্থিত চেইল যাওয়ার রাস্তায় পড়বে সুন্দর সবুজ উপত্যকা, যার নাম সাধুপুল। চেইলের অভয়ারণ্য ওক, পাইন, রডোডেনড্রন, দেবদারু গাছে ঘেরা। রয়েছে বহু প্রজাতির পাখি। গোল্ডেন ইগল, গ্রে হেডেড ফ্লাইক্যাচার, খালজি পিসান্ট, চির পিসান্ট ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে বাদামি ভালুক, কালো ভালুক, হরিণ, বানর, পাহাড়ি ছাগল, লেঙ্গুর, বুনো শুয়োর, ফ্লাইং স্কুইরেল, ভারতীয় শজারু ইত্যাদি। সারা বছর খোলা থাকে এই অভয়ারণ্য। মার্চ থেকে অক্টোবর সবচেয়ে ভাল সময় এখানে আসার। বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে। চেইলের অন্য একটি চুড়োয় রয়েছে সেনাবাহিনীর উপনিবেশ। পাহাড়ের প্রান্তদেশে রয়েছে গুরুদ্বারা সাহিব। বিপরীত দিকের পাহাড় চূড়ার নাম কালী কা টিক্কা। ওখানে কালীমন্দির রয়েছে বলে নামটা এমন। সিধ্ব বাবা কা মন্দির চেইলের আরও একটি দর্শনীয় স্থান। মহারাজা ভূপিন্দর সিং স্বপ্নাদেশে এই মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন। হিমালয়ান নেচার পার্ক, যা চেইলের বন্য জগতে প্রবেশের মুখ্যদ্বার। এখানে ভাল্লুক ছাড়া চিতাবাঘ, তিব্বতি নেকড়েও দেখতে পাবেন। এপ্রিল থেকে জুন চেইলে আবহাওয়া মনোরম থাকে। তাপমাত্রা ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এই সময় সাধারণ সুতির পোশাকেই কাটাতে পারবেন দিন। রাতে তাপমাত্রার পারদ নামলে একটা জ্যাকেটের বেশি দরকার পড়ে না। এই সময়সীমার মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন চেইল। সেপ্টেম্বর মাসও চেইল ঘোরার জন্য আদর্শ। তখন বর্ষাও শেষ, আবার শীতও পড়েনি। এখানে সাধুপুল উপত্যকা থেকে চেইল একটা ছোট্ট ট্রেকিং পয়েন্ট। চাইলে ট্রেক করতে পারেন নিশ্চিন্তে।
[সাধ্যের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ, ঘুরে আসুন ইন্দোনেশিয়ার দু’টি আকর্ষণীয় স্থান]
কোথায় থাকবেন
গোনাগুনতি কয়েকটি হোটেল রয়েছে। হিমাচল প্রদেশ ট্যুরিজমের হোটেলও রয়েছে। চেইল প্যালেসেও থাকতে পারেন।
কী খাবেন
চেইলের আলাদা কোনও কুইজিন নেই বা বিশেষ নামজাদা পদ পাওয়া যায় না। মূলত নর্থ ইন্ডিয়ান ফুড পাবেন এখানে। চেইলের মার্কেট প্লেসে বাজেটের মধ্যে নানা ধরনের খাবার পেয়ে যাবেন।
কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে কালকা মেলে কালকা পৌঁছে শিমলা এক্সপ্রেস ধরে শিমলা এসে বাস বা গাড়ি যাতে খুশি পৌঁছে যান চেইল। কালকা থেকে বা চণ্ডীগড় থেকে সড়কপথে বাস বা গাড়িতেও আসতে পারেন। চেইলের সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট হল জুবারহাটি এয়ারপোর্ট, যা শিমলায় স্থিত। চণ্ডীগড়েও রয়েছে মূল এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্টে নেমে বাস বা গাড়িতে চেইল পৌঁছতে পারেন।
The post নির্জন পাহাড়ি পথের বাঁকে রাজপ্রাসাদেই কাটুক রাত, রইল ঠিকানার খোঁজ appeared first on Sangbad Pratidin.