স্টাফ রিপোর্টার: উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অন্তর্বর্তী উপাচার্য পদ পূরণে আটজন শিক্ষাবিদকে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েও শনিবার দেখা করলেন না রাজ্যপাল-আচার্য সি ভি আনন্দ বোস (C. V. Ananda Bose) । পরিবর্তে তাঁদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন রাজভবনের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
এই ঘটনাকে 'লজ্জাজনক' আখ্যা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) এক্স হ্যান্ডলে মন্তব্য লেখেন, "জানা গিয়েছে, আচার্য শনিবার কয়েকজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে আচার্য তাঁর অতিথিদের সঙ্গে দেখা করেননি বলেই জানা গিয়েছে। পরিবর্তে তাঁদের আচার্যর ক্ষমতার উপর দীর্ঘয়িত বক্তব্য শুনতে হয়েছে কোনও আধিকারিকের থেকে। তিনি (আচার্য) কেবল ভারতীয় আতিথেয়তার শিষ্টাচারকে কলুষিত করেছেন তাই নয়, রাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদেরও অপমান করেছেন। এভাবেই উনি বাংলার শীর্ষ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আচরণ করেন!"
রাজভবনের তরফে বৈঠক সম্পর্কে জারি বিবৃতিতে অবশ্য বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আচার্য উপাচার্যহীন ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই মতো রাজ্যের সুপারিশ করা তালিকা থেকে আটজনকে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে তিনজন আলোচনার জন্য রাজভবনে যাননি। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনজন নিজেদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় চান। সেখানে অন্তর্বর্তী উপাচার্য রয়েছে। দুইজন উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হতে রাজি বলে জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌরিন বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন রাজভবনে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হতে রাজি বলে জানিয়েছেন ভাস্কর গুপ্ত। জানা গিয়েছে, বাকিদের মধ্যে তিনজনই কলকাতার কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি বলে জানান। রাজভবনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২২ এপ্রিল রাজ্য সরকারের সুপারিশ করা আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে আলোচনার জন্য ডাকা হবে।
[আরও পড়ুন: ভোটের দিন তোলা যাবে সেলফিও! ভোটারদের বুথমুখী করতে পুরুলিয়ায় প্রচারে ‘পলাশমণি’]
আচার্য বোসের আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে প্রাক্তন উপাচার্য ও শিক্ষাবিদদের 'দ্য এডুকেশনিস্ট ফোরাম' ও শাসক দলের অধ্যাপক সংগঠন 'ওয়েবকুপা'। ফোরামের তরফে অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র ও দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিবৃতিতে বলেছেন, "আচার্য কয়েকজন শিক্ষাবিদকে আলাপ-আলোচনার জন্য রাজভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, আচার্যর সঙ্গে তথাকথিত মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিবর্তে, আমন্ত্রিত শিক্ষাবিদরা আচার্যর ক্ষমতা সম্পর্কে রাজভবনের একজন আধিকারিকের বক্তৃতা শুনতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা মনে করি, এটা একেবারেই অনুপযুক্ত এবং অপমানজনক। এটা রাজ্যের বরিষ্ঠ শিক্ষাবিদদের অপমান।" গোটা প্রক্রিয়াটি 'প্রতারণা', 'বিভ্রান্ত করার চেষ্টা' বলে মত প্রকাশ করে ফোরাম।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারের সঙ্গে হকারির তুলনা! দিলীপের পর কুকথা বিতর্কে আলুওয়ালিয়া]
'ওয়েবকুপা'র সহ-সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল ও সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় যৌথ বিবৃতিতে বলেন, "বিষয়টি অসৌজন্যমূলক, প্রথাবিরোধী ও অপমানজনক বলে মনে করি। বিষয়টি রাজ্যের গুণী ও বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ-সহ সমগ্র শিক্ষা সমাজের অপমান। সন্দেহ নেই যে, পুরো বিষয়টি একটি উদ্দেশ্যমূলক চক্রান্ত, ঘোরতর প্রতারণা এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সুচতুরভাবে এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে। আমরা সার্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত করার রাজনৈতিক চক্রান্তে আচার্যর অনুঘটকের ভূমিকা পালন করার তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।"