সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইতিহাস গড়ল ভারত। এই প্রথম কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখল। রাশিয়া বা আমেরিকা যে পরিকল্পনা করেও সাফল্য এখনও পায়নি, তাই এবার ভারতের মুঠোয়। কয়েক দিন আগেই রুশ মহাকাশযান লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাফল্য পায়নি ওই যান। গত রবিবারই সেটি ভেঙে পড়ে চাঁদের (Moon) বুকে। কিন্তু বুধবার চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) চাঁদের মাটি ছুঁতেই তৈরি হল ইতিহাস। নির্মিত হল এমন এক মুহূর্ত, যা মানুষের মহাকাশ বিজয়ের ইতিহাসে এক সোনালি অধ্যায় হয়ে চিরকাল থেকে যাবে।
এর আগে ২০১৯ সালে ইসরোর চন্দ্রযান ২-ও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার লক্ষ্যেই অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু সেবার সাফল্য আসেনি। এরপর গত ৪ বছর ধরে তিলে তিলে প্রস্তুত হয়েছে ইসরো। সেই প্রস্তুতি কতটা মজবুত ছিল, তারই প্রমাণ মিলল বুধবাসরীয় সন্ধেয়।
[আরও পড়ুন: হাতে চাঁদ পেল ভারত, ১৪০ কোটির স্বপ্ন নিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে ইসরোর ‘বিক্রম’]
ভারতের এই সাফল্য কতটা তাৎপর্যপূর্ণ? মহাকাশ রেসে প্রধান দুই সুপার পাওয়ার ছিল রাশিয়া ও আমেরিকা। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের রেষারেষির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার। পরবর্তী সময়ে তাদের টক্কর দিতে এগিয়ে এসেছে চিন। সম্প্রতি সৌদি আরবও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এই তালিকায় অন্যতম নাম অবশ্যই ছিল নয়াদিল্লিরও। কিন্তু বুধবারের পর তার গুরুত্ব বাড়ল অনেকটাই। কেননা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ মানব সভ্যতার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আসলে চাঁদের (Moon) দক্ষিণ মেরুতে নামার মূল কারণ, ওই অঞ্চলে চান্দ্র বরফের উপস্থিতির সম্ভাবনা। যা ভবিষ্যতে চাঁদে বসবাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ওই অঞ্চলে খননকার্য কিংবা মঙ্গলে অভিযানের রূপরেখাও তৈরি করে দিতে পারে দক্ষিণ মেরু অভিযান। চাঁদের ছায়াচ্ছন্ন গহ্বরগুলিতে জলের অস্তিত্বের প্রমাণ ইতিমধ্যেই পেয়েছেন নাসা, ইসরো ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীরা। যদি সত্যিই জল পাওয়া যায় এখানে, তাহলে তা পানীয় জলের প্রয়োজন মেটাবে। ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষের বসবাস শুরু করতে গেলে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। পাশাপাশি জলকে ভেঙে জ্বালানি হাইড্রোজেন ও নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনও উৎপাদন করা যাবে। কাজেই চন্দ্রযান ৩-এর এই পদক্ষেপ যে আগামির জন্য বিরাট এক মাইলফলক হতে চলেছে তাতে নিশ্চিত ওয়াকিবহাল মহল। আর সেই সাফল্যের সূত্রেই ভারতও হয়ে উঠল মহাকাশ রেসের ‘সুপার পাওয়ার’।