সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধান বন্দর নগর চট্টগ্রামে পাওয়া নমুনার সঙ্গে ৬টি দেশের করোনা ভাইরাসের মিল পাওয়া গিয়েছে। চট্টগ্রাম শহর ও জেলা থেকে পাওয়া করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন বিন্যাস উন্মোচন করার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
তাঁদের দাবি, এখানকার করোনা ভাইরাসের (Corona Virus) সঙ্গে মিলে যাওয়া এই ছটি দেশ হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইটালি, চেক রিপাবলিক, সৌদি আরব ও তাইওয়ান। চট্টগ্রামে করোনা নিয়ে ব্যাপক আকারে পরিচালিত গবেষণা এটিই প্রথম। আট মাস আগে অন্য এক গবেষণায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের করোনার সঙ্গে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ার ভাইরাসের সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছিল।
[আরও পড়ুন: করোনা কালে পুরনির্বাচনের পথে বাংলাদেশ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সোমবার প্রথম দফার ভোট ]
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিটি জেলার করোনা ভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বিভাগের প্রতিটি জেলার প্রতিটি উপজেলা ও থানায় ঘুরে ঘুরে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবে তারা পরীক্ষা করে। পুরো গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রোক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহম্মদ ওমর ফারুক রাসেল এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক ও ড. এইচএম আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এছাড়াও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, মো. আরিফ হোসাইন ও সজীব রুদ্র, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী শান্তা পাল, এবং বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ছাত্র মহম্মদ ওমর ফারুক সম্পৃক্ত ছিলেন।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগের ভাইরাসটির সঙ্গে আমেরিকা, ইউরোপ, সৌদি আরব, তাইওয়ান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ভাইরাসের প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। তবে এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলায় করোনার ধরনে বেশ কিছুটা কিছুটা ভিন্নতা আছে। করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, চেক রিপাবলিক, সৌদি আরব ও তাইওয়ানের করোনা ভাইরাসের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানের করোনার সঙ্গে মিলেছে আমেরিকা, সিয়েরা লিওন, জার্মানি, ইতালি, তাইওয়ান ও চেক রিপাবলিকের ধরন। তবে খাগড়াছড়িতে বেশি সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও তাইওয়ানের নমুনার সঙ্গে। এছাড়াও নোয়াখালি, লক্ষীপুর ও ফেনী জেলার করোনার সঙ্গে মিলেছে আমেরিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের ধরন। কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলায় মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে আবার আমেরিকা, জার্মানি, চেক রিপাবলিক, ভারত ও জাপানের সঙ্গে।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা আবদুল কাদের]
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (Chittagong University) -এর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রোক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, ‘কিছু প্রশ্নকে সামনে রেখে আমাদের এই গবেষণার কাজ সাজানো হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো চট্টগ্রামে ভাইরাসটি সম্ভাব্য কোন পথে প্রবেশ করে থাকতে পারে এবং এর মিউটেশন সম্পর্কে জানা। আমাদের একটি উদ্দেশ্য ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো কাজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন করা। এটি সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরনের লজিস্টিকস, টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যেমন অত্যাবশ্যক ছিল, তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট, কেমিক্যাল এবং বিভিন্ন ধরনের কিটসের সরবরাহ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এই বিষয়গুলোর ওপর যথাযথভাবে নজর দিতে গিয়ে আমাদের কাজটি শেষ করতে প্রচুর সময় লেগেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা কাজটি শুরু করেছিলাম গত জুলাই মাসে এবং আগস্টের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল।