সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক দিনের। ওই প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের উপর জিনপিং প্রশাসনের নিপীড়ন ক্রমে বেড়েই চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মুসলিম বিশ্বের তাবড় নেতাদের সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে রীতিমতো চোখের জল ফেলছে বেজিং। মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করতে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে কমিউনিস্ট দেশটি।
সোমবার দুদিনের সফরে বেজিং পৌঁছেছেন মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিরা। এই মহা সম্মেলনে রয়েছেন সৌদি আরব, জর্ডন, মিশর, প্যালেস্তাইন জাতীয় প্রশাসন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি এবং মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের প্রধানও। এদিন তাঁদের স্বাগত জানান চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। একই সঙ্গে গাজা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে কমিউনিস্ট দেশটি। অতিথিদের ওয়াং বলেন, “গাজায় সংঘাত থামাতে দ্রুত পদক্ষেপ করুক আন্তর্জাতিক মঞ্চ। এই ট্র্যাজেডি যাতে আরও ভয়াবহ আকার না নেয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্যালেস্তিনীয়দের অধিকার রক্ষায় বরাবর সরব হয়েছি।” এই প্রসঙ্গে সৌদি আরবের বিদেশমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বলেন, “বার্তা খুবই স্পষ্ট। যুদ্ধবিরতি হোক। এবং এক্ষুনি তা লাগু হোক। গাজায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতেই হবে।”
[আরও পড়ুন: হতে চলেছে যুদ্ধবিরতি! হামাস প্রধানের দাবিতে পণবন্দিদের মুক্তির আভাস]
ইজরায়েলের গাজা অভিযানের প্রেক্ষিতে এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে সচেষ্ট বেজিং। এর জন্য ‘জাতশত্রু’ সৌদি আরব ও ইরানের সঙ্গে রীতিমতো আলোচনা শুরু করেছে কমিউনিস্ট দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রভাব খর্ব করে নিজেকে ‘মহাশক্তি’ হিসাবে জাহির করতেই এই চাল চিনের। গত মাসেই মিশর, কাতার, সৌদি আরব-সহ আরব বিশ্বের দেশগুলোতে বিশেষ দূত পাঠায় চিন। রাষ্ট্রসংঘেও গাজায় ত্রাণ বিলি ও সংঘাত থামানোর পক্ষে দরবার করেছে দেশটি তবে একবারও হামাসের নিন্দা করেনি বেজিং।
এদিকে, উইঘুর মুসলিমদের উপর জিনপিং প্রশাসনের নিপীড়ন ক্রমে বেড়েই চলেছে। ২০১৭ সাল থেকেই ওই সংখ্যালঘুদের রোজা রাখা নিষিদ্ধ করেছে জিনপিং প্রশাসন। সেই সময় থেকেই ‘পুনর্শিক্ষা’ শিবির গড়ে উইঘুরদের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষাকে ধ্বংস করার প্রয়াস শুরু করে চিন। গত বছর চিনের তরফে সাফাই দেওয়া হয়েছিল, ওই প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের (Uyghur) বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগের কারণেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হয়েছে।
এদিকে গত বছর প্রকাশিত রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধর্ষণ, পুরুষদের জোর করে নির্বীজকরণের মতো ঘটনা ঘটেছে সেখানে। এমনকী, হঠাৎই নিজের বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে অনেকে। পরে যাঁদের আর কোনও খোঁজ মেলেনি। উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীর সদস্যদের সাধারণ নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জোর করে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হচ্ছে তাঁদের।