সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোনার বদলে টাকা দ্বিগুণ করার জালিয়াতি চক্রের তদন্তে নেমে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার তথা রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষের জমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করল সিআইডি। গত দু’দিনের মতো রবিবার ভোররাতেও সিআইডি অফিসাররা ভারতী ঘোষের মাদুরদহর ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান বলে সূত্রের খবর। গতকাল ভারতী ঘোষের স্বামী এম ভি রাজুর নাকতলা ও মুকুন্দপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও বেশ কিছু জমির নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ভারতী ঘোষের পালটা অভিযোগ, সিআইডি অফিসাররা কোনও নথি বা সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াও গত দুই-তিনদিন ধরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। হেনস্তা করা হয়েছে তাঁর স্বামীকে। টেলিফোনে তিনি বলেন, ”গত দু’দিন ধরেই ওরা আমার ফ্ল্যাটে যাচ্ছে-আসছে। কাউকে কিছু জানাচ্ছে না। পুলিশ রাতের দিকে আসছে। আমার মনে হয়, ওরা ফ্ল্যাটের আশেপাশেই লুকিয়ে ছিল। ১ তারিখ নাকতলায় রেড করে ওরা। আচ্ছা বলুন তো, একজনের বাড়িতে রেড হবে, আর সেই জানবে না? আমার তো মনে হয়, সিআইডি অফিসাররাই আমার বাড়িতে এভিডেন্স লুকিয়ে রেখেছে। এরা পুলিশ না ডাকাত?’ তল্লাশির সময় তাঁর মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভারতীর আইনজীবী পিনাকি ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘পুলিশ আইন মানছে না। আমার মক্কেলকে একটা ঘরে আটকে রেখে, মোবাইল কেড়ে তল্লাশি হয়েছে। ভারতী ঘোষের দাবি তিনি এই মুহূর্তে রাজ্যে নেই। ফিরে এসে তিনি আইনি পদক্ষেপ করবেন।
[ভারতী ঘোষের বাড়িতে সিআইডি অভিযান, গ্রেপ্তার বেলদার ওসি প্রদীপ রথ]
অন্যদিকে, প্রাক্তন ওই আইপিএস অফিসারের স্বামীর পাশাপাশি এবার গোয়েন্দা নজরে তাঁদের ছেলের উপরেও। স্থানীয় থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাত থেকেই ভারতী ঘোষের ফ্ল্যাটের সামনে নজরদারিতে রয়েছেন গোয়েন্দারা। তালা বন্ধ থাকায় ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে তল্লাশি চালাতে পারছেন না। গোয়েন্দা নজরে রয়েছেন ভারতীয় ঘোষের প্রাক্তন নিরাপত্তা কর্মী সুজিত মণ্ডলও। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার পর্যন্ত ভারতী ঘোষের স্বামী এম ভি রাজুর নাকতলা ও মুকুন্দপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিআইডি। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিআইডির গোয়েন্দা কর্তারা। ভবানী ভবনে ডিআইজি-সিআইডি (অপারেশন) নিশাদ পারভেজ জানান, “এম ভি রাজুর উপর কোনওরকম অত্যাচার চালানো হয়নি। প্রাক্তন আইপিএস অফিসারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা আমরা জানতাম না। ওই বাড়িতেই যে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার থাকতেন তাও জানা ছিল না আমাদের। আমরা শুধু জেনেছিলাম, ওই বাড়ি থেকে তদন্তের প্রচুর নথি পাওয়া যেতে পারে। তাই দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।” এম ভি রাজুর দু’টি বাড়ি থেকে জমির নথি ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটরের হার্ড ডিস্ক। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত প্রাক্তন আইপিএস অফিসারের কোনও যোগ খুঁজে পাননি সিআইডির কর্তারা। খুঁজে পেলে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
নিশাদ পারভেজ আরও জানান, “এই কাণ্ডের তদন্তে মোট ১২টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিতে বাজেয়াপ্ত হয়েছে নগদ ৬০ লক্ষ টাকা এবং ২ কেজি সোনা। এই মামলায় মধ্যস্থতাকারী বিমল ঘোড়ুই ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুরে চারজন পুলিশ কর্তার এফআইআরে নাম ছিল। পরে তদন্তে জানা গিয়েছে, এই কাণ্ডে আরও তিনজন জড়িত। তাঁদের সকলকেই জেরা করা হয়।” নাম উঠে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ কর্মী সুজিত মণ্ডলেরও। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার যখন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন, তখন সুজিত মণ্ডল ছিলেন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে। শুক্রবার রাতে সুজিতের সোনারপুরের বাড়িতেও গোয়েন্দা তল্লাশি চলে। সেখান থেকেও প্রচুর সোনা মিলেছে বলে সিআইডির দাবি।
[১০০ টাকা কিলো, তবুও এই বেগুন চাই মালদহবাসীর]
The post এরা পুলিশ না ডাকাত? মাদুরদহের ফ্ল্যাটে তল্লাশিতে ক্ষুব্ধ ভারতী appeared first on Sangbad Pratidin.