সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুক্তির প্রাক্কালে রাজ্যসভায় প্রদর্শিত হওয়ার সুবাদে নতুন মাইলফলক গড়েছিল 'আমার বস'। তার মাঝেই শহরের অলিন্দে দুটি খ্যাতনামা প্রেক্ষাগৃহে স্লট না পাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তবে রিলিজের পয়লা দিনের অঙ্ক গোটা চিত্রটাই বদলে দিল। ৯ মে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। আর শনিবারই উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার তরফে জানানো হল, প্রথম দিনেই এগারো হাজার দর্শক 'আমার বস' দেখে ফেলেছেন।
নন্দিতা-শিবপ্রসাদের সিনেমা মানেই বাস্তব সমাজের দলিল। নতুন ভাবনাচিন্তা কিংবা সমাজকে নতুন বার্তা দিতে পরিচালকদ্বয়ের জুড়ি মেলা ভার। আর সেই ভাবনায় ভর করেই ভিন্নস্বাদের সিনেমা উপহার দিয়ে বরাবর দর্শকদের মন কেড়ে এসেছেন তাঁরা। 'আমার বস'-এর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বৃদ্ধ মা-বাবাদের জন্য 'ডে কেয়ার হোম' খোলার ভাবনা 'আমার বস' সিনেমাটির গল্পের অন্যতম ইউএসপি। শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে বহু প্রতীক্ষিত এই ছবি। আর রিলিজের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই দারুণ সাড়া ফেলে দিয়েছে রাখি গুলজার, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অভিনীত এই সিনেমা। 'বুক মাই শো'র হিসেব বলছে, মাত্র এক দিনে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। কলকাতা তো বটেই এমনকী শহরতলীতেও প্রেক্ষাগৃহে ভিড় উপটে পড়ছে 'আমার বস' দেখার জন্য। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার নামী ৪ প্রেক্ষাগৃহে হাউসফুল শো। শুধু তাই নয়, শহরতলীর বেশিরভাগ হলেও প্রায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ। পয়লা দিনের অঙ্কই বলে দেয় যে, পুজোর স্লট বুক করলেও গ্রীষ্মকালীন স্লটেও নন্দিতা-শিবপ্রসাদ 'হিট'।
উল্লেখ্য, 'আমার বস'-এর সুবাদেই দীর্ঘ বাইশ বছর বাদে বাংলা সিনেমায় প্রত্যাবর্তন করতে চলেছেন রাখি গুলজার। শেষবার ঋতুপর্ণ ঘোষের 'শুভ মহরৎ' ছবিতে গোয়েন্দা 'রাঙা পিসি'র ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে তার পর দু' দশক কেটে গেলেও সিনেপর্দায় তাঁকে দেখা যায়নি। 'আমার বস' ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজি করিয়ে রাখিকে বাংলার পর্দায় ফেরানোর অসাধ্য সাধন করেছেন নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। যে ছবিতে এক প্রকাশনী সংস্থার রাগী বস অনিমেষ ওরফে শিবপ্রসাদের মা শুভ্রা গোস্বামীর ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে। হলফ করে বলা যায়, এত বছর বাদে বাঙালি দর্শকরা যে তাঁর টানেই হলে ভিড় জমিয়েছেন।
নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ফিল্মোগ্রাফির উপর চোখ রাখলে বোঝা যায় যে, তাঁদের প্রত্যেকেটা ছবিই সমাজের আস্ত বাস্তব দলিল। আর ইউএসপি? সিনেমার জটিল ব্যাকরণের ধাঁধায় না গিয়ে সহজ-সরল ন্যারেটিভই পরিচালকদ্বয়ের সম্বল। অতিনাটকীয়তা, কাকতালীয় বিষয়, যুক্তিবুদ্ধির মারপ্যাঁচ বর্জিত আবেগঘন দৃশ্যায়ণ। যা দেখে বক্সঅফিসের মার্কশিটেও ফুলমার্কস বসিয়ে এসেছেন দর্শকরা। খবরের কাগজে পড়া কোনও প্রতিবেদন হোক কিংবা লোকমুখে প্রচারিত কোনও গল্প, সেসবের মজ্জায় ঢুকে বরাবর কন্টেন্ট সাজিয়ে আসছেন নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। উইন্ডোজ-এর প্রতিটি কাজে কন্টেন্টই আসল ‘কিং’। বাড়ির বা আশেপাশের গল্প যখন রুপোলি পর্দায় ম্যাজিক তৈরি করে, তা উপভোগ করতে যে দর্শকরা বারবার হলমুখো হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাই কলকাতা টু মফঃস্বল সব হলেই হাউজফুল বোর্ড ঝোলাতে সক্ষম তাঁরা বছর খানের ধরে। 'আমার বস'-এর ক্ষেত্রেও যে তার অন্যথা হল না, সেটা পয়লা দিনের অঙ্কই বলে দেয়।
