আসন্ন ছবি 'পুরাতন', আগামী কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়া নিয়ে স্পষ্ট কথায় ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। শুনছেন শম্পালী মৌলিক।
অনেক দিনের বন্ধুত্ব আপনার সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর। 'পুরাতন'-এ কাজ কি বন্ধুর ডাকে?
- ঋতু আমার বন্ধু ঠিকই। তবে ছবিটা আমাকে প্রথমে অ্যাপ্রোচ করেছে সুমন ঘোষ। তারপর গল্পটা শুনেছি। নিজের চরিত্রটা কেমন জানার পর ভালো লাগে। ছবিটার বিষয়টাও শুনলাম। সুমন আমাকে একটা বইও পড়তে বলে। ওই বইটা বোধহয় শর্মিলা ঠাকুরকেও উপহার দিয়েছিল সুমন। প্রথমে চরিত্র আর স্ক্রিপ্ট টানে আমাকে। আর সুমন ঘোষের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। এরপর ঋতুপর্ণা, ও এই ছবির প্রযোজকও। তারও পরে জানি শর্মিলা ঠাকুর করছেন। সবকটা ফ্যাক্টর আমাকে আকর্ষণ করেছে। ছবিতে আমি আর ঋতুপর্ণা স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে। ঋতুর সঙ্গে কাজ সবসময় আনন্দের।
শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
- খুবই ভালো। আমি খুব বেশি কথা নিজে থেকে বলতে পারি না। সেখানে দেখলাম, শর্মিলা ঠাকুর খুবই ওয়ার্ম পার্সন। যে পরিবেশ উনি তৈরি করেছিলেন, আমরা কাজ করার সময়, নিজে নিজে কথা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভীষণ সফিসটিকেটেড। একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে। কাছ থেকে দেখে তো আমার আরও ভালো লেগেছে ওঁকে।
'পুরাতন' একদম অন্য ধারার ছবি। এই সময়ে দাঁড়িয়ে ছবিটা নিয়ে কতটা আশাবাদী?
- আমার সব সময় অন্য ধারার ছবিই বেশি ভালো লাগে। কমার্শিয়াল ছবি কী খুব ভালো বুঝি না। কখনও-সখনও অন্য ধারার ছবিও কমার্শিয়ালি ভালো চলে যায়। কনভেনশনালি কমার্শিয়াল ছবি, যেখানে নাচ-গান-মারামারি আছে, সেই ধরনের ছবি এখন আমাকে টানে না। কম বয়সে টানত। এখন যে ধরনের কাজ করতে চাই, বা দেখতে ভালো লাগে, 'পুরাতন' সেই ধরনের কাজ। আমি খুশি যে এই ধরনের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি।
বম্বের কাজের পাশাপাশি কলকাতার কাজ ক্রমশ বেড়েছে আপনার। কেমন লাগছে?
- নিশ্চয়ই খুশি। তার দুটো কারণ আছে, মাঝে কলকাতায় কাজ করাটা, নিজেই কমিয়ে এনেছিলাম। পোস্ট 'ফেলুদা' আমি এখানে বেশি কাজ করছি, সুযোগও পাচ্ছি। তাছাড়া আমার যে এজ ব্র্যাকেট সেটার সঙ্গে ফিজিক্যাল অ্যাপিয়ারেন্স কার্যকর হচ্ছে। অনেক অন্য রকম চরিত্রে কাস্ট করা যাচ্ছে। (হাসি)
দাম্পত্য জীবনে যে ওঠাপড়া গিয়েছে, সেটা কি ভালো কাজের দিকে এগিয়ে দিয়েছে না ক্ষতি করেছে?
- আমার মনে হয় না, কাজের দিকে অতটা প্রভাব ফেলেছে। তবে বলতে পারি, এটা ব্যক্তি হিসেবে আমাকে প্রভাবিত করেছে। আর এই অভিজ্ঞতা পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, মানুষ হিসেবে সমৃদ্ধ করেছে আমাকে। খারাপ অভিজ্ঞতা থেকেও মানুষ শেখে, সেইটা প্রফেশনালি আমাকে সাহায্য করেছে। চার বছর ধরে যে ক্রাইসিস দিয়ে গিয়েছি নিজেকে অনেকটা খুঁজে পেয়েছি। এখন অনেক সহজে নিজেকে প্রকাশও করতে পারি। সেই সব কিছু, হ্যাজ হেল্পড মি ইন মাই আর্ট।
বরখার সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে আপনি কোনও আলোচনা করেন না বা মিডিয়াতে বক্তব্য রাখেন না। রাখলে হয়তো অনেক কিছু পরিষ্কার জানতে পারত লোকজন। সেটা কি মনে করেন না?
- সেটা এই জন্য মনে করি না, প্রথমত, এটা দুটো মানুষের সমস্যা। আর যদি কোনও থার্ড পার্টিকে যুক্ত করি, সেটা হবে আইন। পাবলিক ট্রায়ালে বিশ্বাস করি না। ব্যক্তিগত জীবনের সব কিছু সবার সামনে খুলে কথা বলে কী পাব। সিমপ্যাথি পাওয়ার ইচ্ছে নেই, ওতে কিছু হবে না। ফ্যাক্টস আই নো, দ্য ইনভলভড পার্টিস নো। আর যদি কারও জানার প্রয়োজন থাকে সেটা হল, বিচার ব্যবস্থা। তোমাকেও যদি খুলে বলি, হয়তো সিমপ্যাথাইজই করতে পারবে, তার বেশি নয়। মনে করি না, দল বড় করে কোনও লাভ আছে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বরখা আপনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন চিটিং-এর। কী বলবেন?
- আমি এক্ষুনি এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে শিগগিরই জানাব।
এই সেপারেশন প্রসেসে আপনাদের মেয়ে মীরা কতটা কমফর্টেবল?
- আমার চেষ্টা ছিল, সেপারেশন বিষয়টা সেপারেশনের জায়গায় থাকবে, আর সন্তান তার জায়গায়। সন্তান যেন অ্যাফেক্টেড না হয়। ছোট বাচ্চার চাহিদা একদম বেসিক থাকে। মাথাটাও এত জটিল হয় না। কাজেই মীরার চাহিদাগুলো পূরণ হলে সে খুশি থাকবে, সেটাই আমার ধারণা। সেই চেষ্টাই করেছি, করিও। আমার তরফ থেকে এমন কিছু বলি না বা করি না, যেটা ওর সহজ মনটাকে জটিল ভাবতে বাধ্য করে। এখানে দুটো মানুষ যুক্ত, ফলে কিছু জিনিস ও জানবে, এবং অন্যভাবে বিশ্বাসও করবে, সেটার ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই।
আরও কয়েকমাস পরে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবির শুটিং শুরু করবেন। যেখানে আপনি এবং ইশা সাহা কাজ করছেন পরস্পরের বিপরীতে। আপনাদের নিয়ে তো অনেক কথা শোনা যায়। তার পরেও একসঙ্গে কাজ করতে চলেছেন, পেশাদারের মতো। অনেক কথা উঠবে, কীভাবে সামলাবেন?
- তাতে কী করতে পারি। আই অ্যাম অ্যাপ্রোচিং দিস অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টর। আমি নিশ্চিত ইশাও তাই। যদি বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়, আমরা অংশ নেব না, তার চেয়ে বেশি কী করতে পারি? আমাদের কাজ করব, চরিত্রটা ভালোভাবে করব। যেটা করলে ছবিটাকে ভালো কিছু দেওয়া হয়, ব্যস।
আপনারা তো দু'জনের বিপরীতে...
- দেখো, আমার গল্পে কিন্তু পার্নোও আছে। এটা মজার যে, কেউ কিন্তু বলছে না, আমার সঙ্গে পার্নোও আছে। শুধু ইশার কথাই কেন! তা হলে পার্নোর ব্যাপারেও বলো (হাসি)। এই ভাবেই রিউমার ছড়ায়। যেখানে আমি কনট্রিবিউট করব না। আর সত্যি বলতে, সৃজিত ভালো পরিচালক। ওর সঙ্গে আগে দুটো ছবি করেছি। দুটোই সফল। লেখে খুব ভালো। ওর সঙ্গে কোলাবরেট করতে ভালো লাগে। একটা প্রশ্ন ছিল যে, ওর সঙ্গে খুব বেশি কাজ করা হয়নি। যদিও, 'অটোগ্রাফ' করেছি বা 'মিশর রহস্য'। মনে হত, আরও ফ্রিকোয়েন্টলি কাজ করব। সেটা না হলেও, এবারে হচ্ছে। আই অ্যাম হ্যাপি।
বাংলায় আর কোনও কাজ?
- ইন্দ্রাশিস আচার্যর সঙ্গে একটা ছবি করেছি, আমি আর ঋতু, সেটা জুন মাসে
মুক্তির কথা। আর ‘পুরাতন’ ১১ এপ্রিল আসছে। ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিটা ইন্টারেস্টিং, জুনে আমার শুটিং। হিন্দিতে ‘মা’ আছে অজয় দেবগণ প্রোডাকশনের, কাজলের সঙ্গে। জুনে আসবে। আর তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় একটা ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি করেছি। এছাড়া 'চোর নিকলকে ভাগা'র পার্ট টু হবে।