সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধু হলিউড নয়, যে ছবি গোটা ব্রহ্মাণ্ডের চলচ্চিত্র ইতিহাসের খোলনলচে বদলে দিয়েছিল, যে ছবি কানটি আচ্ছা করে মলে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, ‘এভাবেও সিনেমা হয়’, যে ছবি আপামর ‘থ্রিলারপ্রেমী’ দর্শকের শৈশবের স্মৃতি-সিন্দুকের আসল কোহিনুর, যে ছবি দুনিয়াজোড়া দর্শককে ‘স্পিলবার্গ’ নামের অত্যাশ্চর্য প্রতিভার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল–মুক্তির পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৯ আগস্ট সেই ‘জ’স’ ছবিটি আরও একবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে স্বমহিমায়। তিন-তিনটি অস্কারজয়ী, আক্ষরিক অর্থেই সিনেমার ‘মাইলস্টোন’ হিসাবে চিহ্নিত, এই ছবির স্ক্রিনিং হতে চলেছে বাছাই করা ফরম্যাটে যেমন আইম্যাক্স, রিয়েলডি থ্রিডি, ফোরডিএক্স এবং ডি বক্স-এ।
কী? জিয়া নস্টাল হয়ে পড়ল তো? আবেগের স্ফূরণ খুবই স্বাভাবিক। ১৯৭৫ সালের ২০ জুন মুক্তি পেয়েছিল ‘জ’স’। পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের এটি দ্বিতীয় ছবি। শোনা যায়, নেহাতই কাকতালীয়ভাবে ছবিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিংবদন্তি এই পরিচালক। এক প্রযোজকের ডেস্কে পিটার বেঞ্চলির একই নামে বিখ্যাত উপন্যাসটি পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। কৌতূহলবশত হাতে তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করেন। পড়া শেষ হলে ঠিক করেন, এই কাহিনি নিয়েই তৈরি করবেন ছবি। এতেই শেষ নয়, জনশ্রুতি এটাও বলে যে, উপন্যাসের মলাট এবং নাম (জ’স) দেখে প্রথমটায় স্পিলবার্গের মনে হয়েছিল, এ বুঝি কোনও দাঁতের ডাক্তারের অভিজ্ঞতার গল্প। না হলে কখনও গল্পের শীর্ষক ‘চোয়াল’ (জ’স) হয়? আবার শুটিং শুরুর পরও বারবার বিভিন্ন কারণে তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল বলে শোনা যায়। কখনও বাজেট অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, কখনও সিনেমায় ব্যবহৃত নৌকা ফুটো হয়ে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হওয়া, কখনও পরিচালকের অসুস্থতা, আবার কখনও ছবির প্রয়োজনে তৈরি যান্ত্রিক হাঙর নিয়ে শুটিং করতে অসুবিধার মুখে পড়া। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব প্রতিকূলতা সামলেই মুক্তি পেয়েছিল ইউনিভার্সাল স্টুডিওজের এই ছবি। যার পর বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেয় ঘাতক হাঙর শিকার-কাহিনি নিয়ে তৈরি রোমাঞ্চকর এই ‘মাস্টারপিস'।
এ ছবির সম্পদ ছবির কাহিনি, উপস্থাপনা, অভিনয়–এক কথায় সব কিছুই! ‘ইউ’র গোনা নিড এ বিগার বোট’-এর মতো ‘আইকনিক’ সংলাপ যেমন আজও দর্শক ভোলেনি, তেমনই মনের মণিকোঠায় চিরকাল থেকে যাবে জন উইলিয়ামসের গায়ে কাঁটা ধরানো সংগীত। পাঁচ দশক আগে মুক্তি পাওয়া এই ছবি আমেরিকার ১০০ ‘গ্রেটেস্ট অফ অল টাইমস’ ছবির তালিকাভুক্ত। ১৯৭৬ সালের অ্যাকাডেমি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এটি সেরা এডিটিং, সেরা অরিজিনাল স্কোর এবং সেরা সাউন্ড বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। এর পরে এই ছবির বেশ কয়েকটি সিকুয়েল তৈরি হয়। যেমন ‘জ’স ২’ (১৯৭৮), জ’স (থ্রিডি) (১৯৮৩) এবং জ’স : দ্য রিভেঞ্জ (১৯৮৭)। কিন্তু এদের মধে্য কোনওটিই প্রথমটির মতো আকাশছোঁয়া সাফল্য পায়নি। পরের তিনটি ছবির সঙ্গে স্পিলবার্গ যুক্ত ছিলেন না। পরিচালনা ছিল অন্য হাতে। তবে প্রথম ছবিটির একটি ডকুমেন্টরি প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে ছবির সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল বিশদে।
