সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিগত দু বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। যেখানকার আকাশে বাতাসে বারুদের গন্ধ। যেখানে ঘুম ভাঙে গোলাগুলির আওয়াজে। বাস্তুচ্যূত কত মানুষ। কেউ বা আবার বাড়ির ধ্বংসাবশেষেই ঠাঁই নিয়েছেন শুধুমাত্র ভিটেমাটি আঁকড়ে রাখার জন্য। গাজায় শান্তি ফেরাতে এবার অস্কারমঞ্চেই সুর চড়ালেন মধ্যপ্রাচ্যের চার পরিচালক। আমেরিকা গাজার দখল নেবেই। এমন দাবি আগেই করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লার সঙ্গে সাক্ষাতের পরই সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলতে শোনা যায়, "আমরা গাজার দখল নেব। ওই জায়গা আমাদের কিনতে হবে না। ওখানে কেনার মতো কিছুই নেই। আমরা গাজা নিয়ে নেব... নিতে চলেছি।" ট্রাম্পের দাবি, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তবে মার্কিন বিদেশনীতি অনুযায়ী রণক্লান্ত গাজা অধিবাসীদের মাথা গোজার আশ্রয় নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে প্যালেস্তানীয়দের। এবার সেই প্রেক্ষিতেই অস্কার মঞ্চ থেকে সুর চড়ালেন 'নো আদার ল্যান্ড' পরিচালকরা।
সোমবার লস অ্যাঞ্জেলসের অস্কার মঞ্চে চার পরিচালক ইউভাল আব্রাহামস বাসেল আদ্রা, হামদান বল্লাল এবং ব়্যাচেল জোর পুরস্কার গ্রহণ করার পরই গাজা যুদ্ধের 'রাজনৈতিক সমাধানে'র আহ্বান জানালেন। প্যালেস্টাইনের সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী বাসেল আদ্রার মন্তব্য, "গোটা বিশ্বের কাছে আমাদের আর্জি, জাতিগতভাবে প্যালেস্তানীয়দের উৎখাত করার এই অন্যায় বন্ধ হোক।" প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ওভালে নিজের অফিসে বসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, "শেষমেশ গাজা দখলের কাজ শুরু করতে চলেছি। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের জন্য এর ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে।" কিন্তু সেক্ষেত্রে গাজার অধিবাসীদের ভবিষ্যৎ কী হবে? এবিষয়ে আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রণক্লান্ত ওই অঞ্চল 'সাফ' করতে সেখানকার ২২ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়কে মধ্যপ্রাচ্যের ওই ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মিশর, জর্ডনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিকে অনুরোধও করেন ট্রাম্প। অন্যদিকে অস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে এদিন কাতর কণ্ঠে প্যালেস্তানীয় পরিচালক বাসেল আদ্রার মন্তব্য, "দু মাস আগেই বাবা হয়েছি। আশা করি, আমি যেভাবে জীবনযাপন করছি, আমার মেয়েকে ভবিষ্যতে এভাবে বাঁচতে হবে না। বিগত কয়েক দশক ধরে যা আমরা সহ্য করে আসছি এবং এখনও লড়াই করে যাচ্ছি, 'নো আদার ল্যান্ড' ছবিতে সেই কঠোর বাস্তবতাকেই দেখানো হয়েছে।"
অন্যদিকে ইজরায়েলি সাংবাদিক আব্রাহামের মন্তব্য, "প্যালেস্তাইনীয় এবং ইজরায়েলি হিসেবে আমরা এই ছবিটি তৈরি করেছি কারণ আমাদের বিশ্বাস, একসঙ্গে আমাদের কণ্ঠস্বর অনেক শক্তিশালী। আমরা একে অপরকে দেখি। গাজা এবং সেখানকার জনগণের এহেন ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি অবশ্যই শেষ হওয়চা উচিত। ৭ অক্টোবর, হামাসের আক্রমণে ইজরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি করে দিতে হবে।" মার্কিন বিদেশনীতির সমালোচনা করে তাঁর সংযোজন, "কেন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না যে আমরা একে অপরের সাথে জড়িত, বাসেলের জনগণ যদি সত্যিই স্বাধীন এবং নিরাপদ হয় তবে আমার জনগণ সত্যিই নিরাপদ থাকতে পারে।"
ট্রাম্প দাবি করেন, প্যালেস্তিনীয়রা গাজা ছাড়তে পারলে খুশিই হবেন। কেননা সেখানে এই মুহূর্তে তাঁরা যে জীবন কাটাচ্ছেন তা ভয়াবহ। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলতে শোনা গিয়েছে, ”একবার ভেবে দেখুন ওঁরা কেমনভাবে বেঁচে আছেন। গোটা বিশ্বে এমনভাবে কেউ বেঁচে নেই। যে বাড়িগুলি ভেঙে পড়েছে বা ভেঙে পড়ছে এখনও সেগুলিরই তলায় বা আড়ালে আশ্রয় নিতে হচ্ছে ওঁদের। এর ফলে রোজই মানুষ মারা যাচ্ছেন। ভয়াবহ পরিস্থিতি। বেঁচে থাকার জন্য গাজা ভূখণ্ডের চেয়ে খারাপ জায়গা বর্তমানে পৃথিবীতে কোথাও নেই।” এদিকে হামাস-ইজরায়েলের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই, যেন বারুদের স্তূপের উপরে রয়েছে সবটাই। যে কোনও মুহূর্তে ফের ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই অবস্থায় পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ফেরাতে আসরে অবতীর্ণ ট্রাম্প।