সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্প্রতি কাছের বন্ধুর দ্বারা প্রতারিত হওয়ার খবর সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন তারকাদম্পতি পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল বর্মা। মুম্বইয়ের বাসিন্দা হলেও অভিনেত্রীর বাংলা যোগ রয়েছে। কারণ টলিপাড়ার একাধিক সুপারহিট সিনেমায় দেখা গিয়েছে পূজাকে। তাঁর মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীর দিকেই আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে আঙুল তুলেছেন প্রযোজক শ্যাম সুন্দর দে এবং তাঁর স্ত্রী মালবিকা দে। এবার সেই প্রেক্ষিতেই সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তারকাদম্পতি।
প্রথমটায় পূজা-কুণালই নাম না করেই আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন। তার দিন দুয়েক যেতেই প্রযোজকপত্নী পালটা আর্থিক প্রতারণা এবং অপহরণ করে তোলাবাজির অভিযোগ আনেন পূজা-কুণালের বিরুদ্ধে। মালবিকা জানান, তারকাদম্পতির তরফে আদতে তাঁরাই প্রতারিত হয়েছেন। এমনকী তাঁর স্বামী প্রযোজক শ্যামসুন্দরকে অপহরণ করে নির্যাতন, খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও তোলেন তিনি পূজা-কুণালের বিরুদ্ধে। যা শুনে রীতিমতো বিনোদুনিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। এবার তারকাদম্পতি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, কেউ তাঁদের দিকের কথা না শুনেই দোষারোপ করা শুরু করেছেন। এমনকী নিত্যদিন শাপ-শাপান্তের শিকারও হতে হচ্ছে তাঁদের। আসছে কুরুচিকর ফোনও!
সাংবাদিক বৈঠকে ঠিক কী জানালেন পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল বর্মা? শ্যাম সুন্দর দে এবং তাঁর স্ত্রী মালবিকা দে'র উদ্দেশে তারকাদম্পতির মন্তব্য, "আপনাদেরই উচিত আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। কারণ আপনারা আমাদের ফোন নম্বর ভাইরাল করে দিয়েছেন। আর তার পর থেকে এমন সব ফোন আসছে, যা বলতেও আমাদের রুচিতে বাধছে! অনুরাগীরা আমাদের ভালবাসেন ঠিকই, কিন্তু কিছু মানুষ আমাদের কথা না শুনেই আমাদের ওপর ঘৃণাবর্ষণ করে চলেছেন। অনেক খারাপ কথা বলা হচ্ছে আমাদের। শুধু তাই নয়, লোকজন প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে কাউকে অপহরণ করতে পারি আমরা? এপ্রসঙ্গে বলে দিই, এটা হয়তো অন্য কারও জন্য সহজ হবে, কিন্তু আমাদের জন্য খুব কঠিন। কারণ আমাদের এক সন্তান আছে। এবং আমরা ওকে ছোট থেকেই ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করছি। ও বড় হয়ে কী শুনবে যে, ওর মা-বাবা অপহরণকারী? এটা তো অন্যায়।" এখানেই থামেননি হিন্দি টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় মুখ কুণাল বর্মা।
অভিনেতার সংযোজন, "মালবিকা দে'র সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা নেই। হয়তো তিনি কারও কথা শুনেই এসব করছেন। কিন্তু একটু ভেবে দেখবেন, আপনি জানেন আপনার স্বামী কেমন। তাই আমাদের উপর এসব চাপানো ঠিক নয়। আমাকে পরীক্ষা করালে সত্যিটাই দেখতে পাবেন। কারণ অনেক পরিশ্রম করে নিজের এই জায়গাটা তৈরি করেছি। কারও কাছে ভিক্ষা করিনি। আমি আপনাদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেব। কারণ যাঁকে আমি তিন বছর ধরে চিনি, তিনি যদি আমার বাড়িতে ঢুকে আমাদের সঙ্গে এমনটা করতে পারেন, তবে আমি কাকে ভরসা করব?"
অন্যদিকে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে প্রযোজক শ্যামসুন্দর দে জানান, "যদি আমার বিরুদ্ধে আনা ওদের অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে যখন সোশাল মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনল তখন আমার নাম কেন বলল না? আমি ওদের ভিডিওটা দেখিনি। যতটুকু শুনেছি তাতে বলতে হয় আমরা প্রত্যেকটা অভিযোগের প্রমাণ দিয়েছি। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টাকার লেনদেন অবশ্যই হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মানেই এমন ঘটনা ঘতবে তা একেবারেই কাম্য নয়। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে ওদের কেন একমাসের বেশি সময় লাগল? আসলে এই সময়টাতে ওরা ওদের প্রভাব খাটিয়ে মুম্বইতে ওই অভিযোগের বিরুদ্ধে ও আমার বিরুদ্ধে একটা কেস সাজিয়ে সেটা নিয়ে এগোচ্ছে। কারণ ওরা জানে অপহরণ ও তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে ওদের বিরুদ্ধে। তাই ওরা জানে আগামীতে কী ঘটতে চলেছে ওদের সঙ্গে। তাই যে কোনও উপায়ে বাঁচার জন্য এমন উপায় অবলম্বন করেছে। এটা খুব ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে। ওরা এই বিষয়টা তাহলে আগেই করতে পারত। আমাকে অপহরণ করার কী প্রয়োজন ছিল? সবথেকে বড় বিষয় আমাকে অপহরণ কয়ার পর আমাকে আমার পরিবারের কেউ বা কোনও বন্ধু উদ্ধার করেনি। উদ্ধার করেছে গোয়া পুলিশ। সবটাই রেকর্ড রয়েছে। সবটাই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা রয়েছে। কাজেই এক্ষেত্রে অত্যুক্তি একেবারেই করছি না।"
এপ্রসঙ্গে, সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, "আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সত্য-মিথ্যা বুঝতে পারছে ও সেভাবেই তদন্ত করছে। তার থেকেও বড় বিষয় ঘটনাটা নিয়ে তিনটি রাজ্যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরেই টাকা চেয়ে পাইনি। ওনাকে এই নিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করার পরও প্রযোজকের তরফে বিন্দুমাত্র চেষ্টা দেখিনি টাকা ফেরত দেওয়ার। পুলিশের সামনে এই নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি কুণালকে জড়িয়ে ধরেন। বলেন তুমি আমার ভাইয়ের মতো। কিন্তু তারপরেই ওনার অন্য ভাবমূর্তি দেখছি। কোনও টাকা উনি এখনও ফেরত দেননি। উলটে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। শুধু তাই নয় আমাদের এই ঘটনার জেরে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমাদের কাজ পাওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনতা হলে আমরা কীভাবে চলব?"
