সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে গত ১৬ মার্চ 'রঘু ডাকাত'-এর শুটিং শুরু হয়েছে। সোশল মিডিয়ায় সেই সুখবর ভাগও করে নিয়েছিলেন দেব এবং পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাকাত সর্দার অবতারে ইতিমধ্যেই টলিউড সুপারস্টারের লুক সিনেপ্রেমীদের কৌতূহলের পারদ চড়িয়েছে। তবে জানেন কি, বাংলার এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ ডাকাত ছিলেন কিশোর কুমারের পূর্বপুরুষ?

আজ্ঞে, গঙ্গোপাধ্যায় বংশের সমৃদ্ধ ইতিহাস হয়তো অনেকেরই অজানা। গোটা বাংলায় যে কটি ডাকসাইটে রাজবংশ রয়েছে, যেখানে ঈশ্বরের কৃপায় রূপ, জ্ঞান, বহুমুখী প্রতিভারা হরির লুটের মতো বিরাজমান, সেই ভাগ্যবানদের অন্যতম ভাগলপুরের গঙ্গোপাধ্যায়রা। অশোক কুমার, কিশোর কুমার, অনুপ কুমাররা মাতৃ-পিতৃ উভয়সূত্রেই 'নীল রক্তের' অধিকারী। তাঁরা প্রকৃত অর্থেই খোদ রঘু ডাকাতের নাতির নাতি। রবিনহুড ধাঁচে জমিদারি সামলানোর পাশাপাশি বংশ পরম্পরায় আইনও পড়েছেন গঙ্গোপাধ্যায়রা। মায়ের দিকের দাদু হলেন শিবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সহপাঠী। একসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। ডাকাবুকো সেই মানুষটি পেয়েছিলেন ইংরেজদের তরফে 'রাজবাহাদুর' খেতাব। তবে একটি শর্তে। আইন প্র্যাকটিস করা ছাড়তে হবে। ফেরা যাক রঘু ডাকাত প্রসঙ্গে।
বেশ কয়েক দশক আগে এক সাক্ষাৎকারে খোদ 'দাদামণি' অশোক কুমার বলেছিলেন, "বাবার মুখে শুনেছি, প্রায় দেড়শো বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ বাংলায় ডাকাতি করতেন। ওঁর নাম ছিল রঘু ডাকাত। বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন। বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ডাকাতি করতেন। আর লুঠ করা সমস্ত কিছু বিলিয়ে দিতেন দরিদ্রদের মধ্যে। এইজন্যই উনি ছিলেন দুস্থ মানুষদের কাছে ঈশ্বরসম। এমনকী স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ রঘু ডাকাতকে নিয়ে লিখেছিলেন।" ষাটের দশকের শেষ দিকে 'হাম দো ডাকু' নামে একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন কিশোর কুমার। যেখানে কমেডির মোড়কে তুলে ধরা হয়েছিল ডাকাতির গল্প। যে সিনেমায় কিশোর এবং অনুপ কুমার অভিনয় করেছিলেন ডাকাতের ভূমিকায়। সিনেবিশেষজ্ঞদের অনুমান, কিশোরের সেই ছবি হয়তো পূর্বপুরুষ রঘু ডাকাতের উদ্দেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি ছিল। যদিও সময়ের চোরাবালিতে সেই ছবির নাম তলিয়ে গিয়েছে, তবে কৌতুকরসে মাখা গানগুলি কিন্তু শ্রোতা-অনুরাগীদের মনে রয়ে গিয়েছে। বাংলার সেই দৌর্দণ্ডপ্রতাপ ডাকাতের দুঃসাহসিক কাহিনি এবার পর্দায় তুলে ধরতে চলেছেন ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। মলাট চরিত্রের জন্য ইতিমধ্যেই আদা-জল খেয়ে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন দেব। ঘোড়সওয়ার শিখতে নিত্যদিন নিয়ম করে ঘোড়া ছোটাচ্ছেন। শিখতে হচ্ছে তরবারি যুদ্ধও।
'পাগলু' কিংবা 'দুই পৃথিবী'র সুপারস্টার বছরখানেক ধরে যেভাবে ছক ভেঙে ক্যামেরার সামনে ধরা দিচ্ছেন, তাতে মুগ্ধ হয়েছেন সিনে-সমালোচকরাও। যে কোনও চরিত্র আত্মস্থ করতে কড়া হোমওয়ার্কের যে কোনও বিকল্প নেই, সেকথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন দেব। গোলন্দাজ’ ছবিতে নরেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে দুবেলা নিয়ম করে মাঠে ঘাম ঝরাতেন। ব্রিটিশ জমানায় ভারতীয় ফুটবলের জনকের চরিত্র আত্মস্থ করতে খালি পায়ে ফুটবলও প্র্যাকটিস করতে হয়েছিল দেবকে। যার জেরে পায়েও চোট পেয়েছিলেন তিনি। ‘রঘু ডাকাত’-এর (Raghu Dakat) ক্ষেত্রেও কড়া অনুশীলনের অন্যথা হয়নি। পঁচিশের পুজোয় পর্দায় সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ ডাকাত সর্দারকে দেখার অপেক্ষায় সিনেপ্রমীরা।