সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: আর মাত্র কয়েকমাস পর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্য সরকারকে কার্যত অন্ধকারে রেখে কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহের সঙ্গে বৈঠক কেন্দ্রের। জানা গিয়েছে, বৈঠকে পৃথক কামতাপুর-সহ তিন দাবিতে অনড় কেএলও নেতা। কী কারণে রাজ্যকে না জানিয়ে বৈঠক, স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রশ্ন। তবে কি ভোটমুখী বাংলায় ভোটবাক্সকে মজবুত করতে এবার 'পৃথক কামতাপুর' দাবি সহায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের? রাজনৈতিক মহলে ক্রমশ জোরাল হচ্ছে সে প্রশ্ন।
সোম ও মঙ্গলবার কেন্দ্রের সঙ্গে দু’দিনের শান্তি বৈঠক করেন কেএলও ও কামতাপুরী স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল (কেএসডিএ)-এর নয় সদস্য। যেখানে তাদের তিনটি দাবি নিয়েই মূলতঃ সরব হন তাঁরা। যার প্রধান দাবি ছিল গ্রেটার কোচবিহার বা কামতাপুরী রাজ্যের গঠন। সঙ্গে ছিল কোচ-রাজবংশীদের তফশিলি জনজাতির স্বীকৃতি দেওয়া ও কামতাপুরী (রাজবংশী) ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করা। কেএলও নেতা জীবন সিংয়ের দাবি অনুযায়ী, পৃথক রাজ্যের দাবির বিষয়ে কামতাপুরী স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিলের বক্তব্যে সহমত পোষণ করেছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকরা বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবেই বঞ্চনা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সঠিক জায়গায় রিপোর্ট দিয়ে দেবেন। একইসঙ্গে অসম, উত্তরবঙ্গ ও বিহারের কোচ-রাজবংশীদের তফশিলি জনজাতির স্বীকৃতি দেওয়া ও কামতাপুরী (রাজবংশী) ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি নিয়ে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে, বলেও দাবি জীবনের।
ভারতে ‘নিষিদ্ধ’ কেএলও নেতা জীবন সিং প্রায় তিন বছর মায়ানমারের গোপন ঘাঁটিতে থাকার পর এখন আছেন দিল্লির এক ‘সেফ হাউস’-এ। কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকের পর সেখান থেকেই জীবন বলছিলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত। আমাদের অধিকার একের পর এক কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।” তাঁর দাবি অনুযায়ী, কেন্দ্রকে তাঁরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, নিজভূমেই আজ তাঁরা পরবাসী। জীবনের আশা, দ্বিপাক্ষিক শান্তি বৈঠকে জট অনেকটাই খুলেছে। এই দাবির পরই উঠছে প্রশ্ন। বিষয়টি যেখানে রাজ্যভাগের সেখানে কেন থাকবে না অসম ও বাংলার কোনও প্রতিনিধি। এই বিষয়ে কেএলও ও কেএসডিএ-র বক্তব্য, ১৯৪৯ সালে যে চুক্তির মাধ্যমে তাদের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর কোচবিহারকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন, সেই চুক্তি হয়েছিল মহারাজা ও কেন্দ্রের মধ্যে। সেখানে কোনও রাজ্য ছিল না। তাই আলোচনা যা হওয়ার হবে কেন্দ্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক। এদিনের বৈঠকের পর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বড় ভূমিকা নেওয়ার বিষয়েও আশাবাদী তাঁরা। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পৃথক রাজ্যের পক্ষে যারা থাকবে, তাদেরই সমর্থন করা হবে। তাহলে আসন্ন নির্বাচনে কি হবে তাদের ভূমিকা? কোনও অবস্থাতেই আর বঙ্গভঙ্গ করতে দেওয়া হবে না, এই বক্তব্য অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার সাম্প্রতিক সময়ে একই কথা শোনা গিয়েছে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারির মুখেও। এই প্রসঙ্গে জীবনের বক্তব্য, “কে শুভেন্দু? আমার সঙ্গে ওর বসেদের কথা হয়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করবে তাঁরা কীভাবে রাজ্যস্তরের নেতাদের ঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবেন।”
