সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্টারনেটের পৃথিবীতে তার মৃত্যু আসন্নই ছিল। ইমেল, মেসেজ, হোয়াট্সঅ্যাপের মতো 'যুবা'দের যুগে ডেনমার্কে 'প্রয়াত' হল 'প্রবীণ নাগরিক' ডাক ব্যবস্থা। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ডাকযোগে চিঠি পাঠানোর পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিল দেশটি। নতুন বছরে ডেনমার্কে কি মৃত্যু হল সুন্দরী অপেক্ষারও?
মনে করা হয়, প্রাচীন মিশরে ফারাওদের উদ্যোগে ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম ডাক ব্যবস্থা চালু হয়। ভারতে প্রথম আধুনিক ডাক ব্যবস্থা সূত্রপাত ১৭৭৪ সালে। ডেনমার্কে আরও একশো বছরেরও বেশি আগে ১৬২৪ সালে তা চালু হয়েছিল। ২০২৫ সালে যার অবসান হল। অর্থাৎ সে দেশে ৪০১ বছর ধরে পরিষেবা দেওয়ার পর অবসর নিল ডাক ব্যবস্থা। মঙ্গলবার এই মনখারাপ করা ঘোষণা করেছেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পোস্টনর্ড।
পোস্টনর্ডের কর্তাদের বক্তব্য, ডেনমার্কের জনগণ ডিজিটাল যোগাযোগের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। ডাকব্যবস্থার ব্যবহার হয় না বললেই চলে। অফলাইনে কেউ আর প্রিয়জনকে চিঠি লেখেন না। টুকটাক পার্সেল পাঠান বড়জোর। পাশাপাশি অফিস-কাছারির চিঠিপত্রও বহুদিন আগে থেকে ইন্টারনেটে পাঠানো হচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারি ডাক পরিষেবা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডেনমার্ক সরকার।
যুগের দাবিকে মেনে নিয়ে এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছেন পোস্টনর্ডের প্রধান নির্বাহী কিম পেডারসেন। খানিক অভিমানী কণ্ঠে তিনি বলেন, "আমরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চিঠি বিতরণ করেছি। সেটা বন্ধ হল। ডেনমার্কের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ই-কমার্স। যেখানে পার্সেলের সংখ্যা এখন চিঠির চেয়ে অনেক অনেক বেশি।"
২০০০ সালের পর থেকেই গোটা পৃথিবীতেই চিঠি লেখার রেওয়াজ কমতে শুরু করে। নেপথ্যে মোবাইল ফোন তৎসহ ইন্টারনেট পরিষেবা। মেসেজ, ইমেল, হোয়াট্সঅ্যাপে অভ্যস্ত হতে থাকে মানুষ। অন্যদিকে মোবাইল পেমেন্টের কারণে মনি অর্ডারের মতো ডাক পরিষেবাও ধাক্কা খায়। এই অবস্থায় গত ২৫ বছরের মধ্যে ডেনমার্কে চিঠির পরিমাণ ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ফলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিল সে দেশের সরকার। ডেনমার্কের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, মঙ্গলবারই শেষ চিঠি পাঠিয়ে ডাকব্যবস্থার ইতি ঘটিয়েছে দেশ।
