দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে পথিকৃৎ বসু পরিচালিত ছবি ‘শাস্ত্রী’ বিষয়ের দিক থেকে বিজ্ঞান বনাম জ্যোতিষের লড়াইয়ের কথা বলবে। উঠে আসবে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে মানুষের গর্জে ওঠার কথাও। মুক্তির আগে আত্মবিশ্বাসী সোহম চক্রবর্তী(Soham Chakraborty)। কথা বললেন শম্পালী মৌলিক।
প্রথমবার পুজোয় নিজের প্রোডাকশনের ছবি নিয়ে আসছেন অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। যা কিছু প্রথম, তাই নিয়ে সকলের মধ্যেই একটা উত্তেজনা থাকে। তবে টেনশনের মাত্রাও অস্বীকার করা যায় না। কী বলবেন?
সোহম: সত্যি বলতে, টেনশন তো খুবই আছে। ‘শাস্ত্রী’(Shastri) এত বড় রেঞ্জের ছবি, বলা যেতে পারে পুজোর সবচেয়ে বড় ছবি। ‘সোহম’স এন্টারটেনমেন্ট হাউস’ থেকে প্রথম পুজো রিলিজ সেটা চাপের, যা চ্যালেঞ্জ ছিল সবটা গ্রহণ করেছি। টেনশন থাকলেও জানি, পরীক্ষাটা ভালো দিয়েছি। সেইখানে আত্মবিশ্বাসী। আরও একটা কনফিডেন্স আছে, ‘সুরিন্দর ফিল্মস’-এর মতো হাউস সঙ্গে আছে। যাদের এত বছরের অভিজ্ঞতা এবং এত সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছে আমাদের, হিরো তৈরি করেছে আমাদের। কাজেই সেটাও জোরের জায়গা।
সোমবারই জানা গিয়েছে, ‘দাদাসাহেব ফালকে’ সম্মান পাচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী। যিনি ‘শাস্ত্রী’র কেন্দ্রচরিত্রে। ঘটনাচক্রে ৮ অক্টোবর এই ছবি রিলিজের দিনই তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেওয়া হবে। যা ছবি মুক্তির আগে কি বাড়তি হাইপ যোগ করবে? মিঠুন চক্রবর্তী-দেবশ্রী রায়ের জুটি থাকা কি বেশি আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে?
সোহম: হান্ড্রেড পার্সেন্ট। এই পুরস্কার ছবিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে। মিঠুন আঙ্কল, চুমকি আন্টি ছাড়াও কৌশিক সেন, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, অম্বরীশদা, কাঞ্চনদা, সৌরসেনী– সকলে রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে দর্শক চূড়ান্ত পছন্দ করে। প্রত্যেকে দারুণ অভিনেতা। প্রযোজক হিসাবে তাঁদের যখনই অ্যাপ্রোচ করেছি, না বলেননি। হাসি মুখে সম্মতি জানিয়েছেন এবং আমরা ভালোভাবে কাজটা করতে পেরেছি।
এবারে পুজোয় তিনটে বাংলা ছবি আসছে, ‘শাস্ত্রী’ ছাড়া বাকি দুটো ছবিও হেভিওয়েট। দেব-সৃজিত জুটিতে আনছে ‘টেক্কা’, অন্যদিকে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির ‘বহুরূপী’ আসছে। সেখানে ‘শাস্ত্রী’ কতটা পাল্লা দিতে পারবে?
সোহম: সেই আত্মবিশ্বাস আছে বলেই, এত বড় দুটো ছবির সঙ্গে পুজোর সময় ‘শাস্ত্রী’ আনছি। কারণ, আমরাও তো কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। স্টারকাস্ট ছেড়ে দাও, ছবির কনসেপ্ট, মেকিং এখনই যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ছবির ট্রেলার যখন বেরোয় তখন থেকেই। ইউটিউবে ছয় নম্বরে ট্রেন্ডিং (রবিবার) আমাদের ছবির ট্রেলার। ট্রেলারটাই এটা, ফলে আশা করব, চেষ্টা করব ছবিটা যাতে আরও ভালো ফল করে।
তোমার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাইব
সোহম: আমার চরিত্র পেশায় অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট। যে শাস্ত্রকে অবজ্ঞা করে না, কিন্তু তুলনায় বিজ্ঞানকে এগিয়ে রাখে। গ্রহ, নক্ষত্র এসব কিছু নয়, বহু যুগের প্রাচীন ধারণা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, এটাই সে মনে করে। যেখানে বিজ্ঞান এতটা এগিয়ে গিয়েছে। আমার চরিত্রের আরও একটা লড়াই, শাস্ত্র নিয়ে যারা মিথ্যাচার করে, যারা মানুষকে ভুল পথে প্ররোচিত করে তাদের বিরুদ্ধেও।
তার মানে মিঠুন চক্রবর্তী বনাম সোহম চক্রবর্তীও ছবির একটা দিক?
সোহম: (হাসি) ৮ তারিখে বাকিটা দেখবে সবাই। ট্রেলারে কিছুটা দেখা যাচ্ছে।
সৌরসেনী মৈত্র আপনার বিপরীতে, জার্নালিস্টের চরিত্রে...
সোহম: আমরা পরস্পরের বিপরীতে অবশ্যই। কিন্তু প্রেম-ভালোবাসার বিষয় নয়, তবে পরস্পরের সাপোর্ট আমরা। বন্ধুত্বের জোর বেশি এখানে।
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? মিঠুন চক্রবর্তী, দেবশ্রী রায়ের মতো তারকার সঙ্গে কাজ। আপনার সঙ্গে তো খুব ভালো সম্পর্ক...
সোহম: (স্মিত হেসে) বহু বছর ধরে দুজনের সঙ্গে এমন সম্পর্ক। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাও খুব ভালো।
এ বছর পুজো অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় আলাদা। শহরের মনমেজাজ ভালো নেই। সেখানে প্রেক্ষাগৃহে ফুটফল-এ প্রভাব পড়তে পারে। কী বলবেন?
সোহম: ঠিকই। আমারও তাই মনে হয়। একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়। যে উন্মাদনা নিয়ে প্রত্যেক বছর আমরা পুজো কাটাই, সেটা নেই। রাস্তাঘাটে সেই ঝলমলে ব্যানার, উজ্জ্বল আলো অনেক কম। কর্পোরেট সেক্টর বা অন্য ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে। তবু তো পুজো। আনন্দের মাত্রা, উন্মাদনা কম থাকতে পারে, কিন্তু পুজোর জন্য সারা বছরের অপেক্ষা থাকে। শুভশক্তির আগমন, মায়ের আরাধনার প্রতীক্ষায় থাকি আমরা। বাড়িতেও খারাপ কিছু হলেও, অন্যভাবে পুজো উদযাপনের চেষ্টা থাকে। আনন্দ না পেলেও, শান্তি পাওয়ার একটা উদ্দেশ্য থাকে। সিনেমা হল সোর্স অফ এন্টারটেনমেন্ট, যেখানে মানুষ কিছুটা আনন্দ, রিলিফ খোঁজে। যখন মানুষের মন খারাপ হয়, আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে রিলিফ দিই মানুষকে। সেটাও এক ধরনের বিনোদন। আর মানুষ তো অফিসে যাচ্ছেন, ব্যবসা করছেন, মানে যাঁর যাঁর কাজ করছেন, এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যাচ্ছেন। হয়তো উন্মাদনা, বা চাকচিক্য কমে গিয়েছে। যখন আমরা খুব খারাপ ফেজের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, সেই সময়েও শহরে প্রায় বিশ কোটির বেশি ব্যবসা করেছে ‘স্ত্রী ২’। সেখানে প্রশ্ন, বাংলা ছবির প্রতি এত অনীহা কেন? অনুরোধ এটাই, কোথাও ঠাকুর দেখতে দেখতে ভালো ছবি দেখতে চাইলে, অবশ্যই দেখবেন।
মা দুর্গার কাছে এবারে কী চাহিদা?
সোহম: শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। অশুভ শক্তি বিলীন হোক, এটাই চাইব।