'যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা'--- ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে পাশ করার পরও ছোটখাটো চরিত্রই জুটত সুনীতা রাজওয়ারের। কিন্তু এখন তিনি অস্কারে শর্টলিস্ট হওয়া 'সন্তোষ' ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র গীতা শর্মা। সাহানা গোস্বামীর সঙ্গে মিলে দুরন্ত অভিনয় করেছেন। সন্ধ্যা সুরি পরিচালিত ছবি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের দোরগোড়ায়। ব্রিটেনের তরফ থেকে পাঠানো হয়েছে। তাতেই যদি জোটে সোনালি পুতুল, কী করবেন? সুপর্ণা মজুমদারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন সুনীতা। কথা বললেন 'স্ত্রী ২'র সাফল্য নিয়েও।
২০২৪ সাল আপনার খুব ভালো গিয়েছে। 'স্ত্রী ২' বক্স অফিসে সফল। 'সন্তোষ' অস্কারে শর্টলিস্টেড।
যেকোনও সাফল্যই ভালো লাগে। তবে কি জানেন তো, একটা বয়সে চলে এলে, জীবনের অনেকটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে রেজাল্ট না দেখা পর্যন্ত শান্তি নেই। এখন শুধুই ক্রসিং দ্য ফিঙ্গার ফিলিং। ভাবতেই পারছি না এত কিছু আমি পাচ্ছি।
'সন্তোষ'-এর মতো ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মের এতটা যাওয়াই অনেক বড় ব্যাপার।
একদমই। আর এর অঙ্গ হতে পারাই আমার মতো অভিনেত্রীর কাছে একটা বড় ব্যাপার। কারণ আমি তো মূলধারার ছবির অভিনেত্রী নই। যখন সন্ধ্যা সুরি কাস্টিংয়ের জন্য এসেছিলেন, মুকেশ ছাবড়ার মাধ্যমে কাস্টিং হয়েছিল। তাঁরা অনেক বড় বড় মানুষদের অডিশনের জন্য ডাকা হয়েছিল। হ্যাঁ, অবশ্যই বম্বে (মুম্বই) ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও বড় চরিত্রের জন্য কেউ কখনও আমার কথা ভাববে না। সন্ধ্যাজি হয়তো 'পঞ্চায়েত'-এ আমার কাজ দেখেছেন। তিনি বলেছিলেন যে এঁকে ডাকুন। পরিচালক কারও মধ্যে গীতা চরিত্রকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। আমার প্রথম অডিশনেই বলে দিয়েছিলেন আমি সিলেক্টেড। এটা একটা অদ্ভূত অনুভূতি ছিল। যেন সবকিছু অসাড় হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে, এত বড় ছবি আমি পেয়ে গেলাম?
আপনি ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে পাশ করেছেন। সিরিয়াল, সিনেমায় এতদিন ধরে কাজ করেছেন। কখনও কোনও বড় চরিত্র কেন এল না?
একসময় খারাপ লাগত। কিন্তু আমার ও আমার বোনের বড় হওয়া, পড়াশোনা, ব্যক্তিত্ব এতটাই আলাদা ছিল যে ছোটবেলা থেকেই আমি জানতাম যে আমি কেমন, আর এদুনিয়া কেমন। দেখুন হিরো বলুন বা হিরোইন, তার একটা ইমেজ হয়, আমিও তো তেমন ইমেজই ভাবি। 'এ তো নায়িকার মতো দেখতে লাগছেই না', এমনটাই বলা হয় তাই না? তাই আমি নিজের বাস্তব জানতাম। আমার লুক কেমন, আমি সেটা জানতাম। ফলে আমার কখনও খারাপ লাগেনি। যেভাবে আমার সফর এগিয়েছে আমি তাতে খুশি। বোধহয় এই কারণেই আমার বন্ধু, শুভাকাঙ্খী কমেনি, বরং বেড়েছে। কারণ আমার মধ্যে কখনও হীনমন্যতা আসেনি, ঈর্ষাও কখনও হয়নি।
তবুও অভিনেতার জীবনে তো রিজেকশন তো আসেই...
এ তো আমার রুজিরুটি। আমার কাছে আর কোনও রাস্তাই ছিল না। আমি তো ঝুঁকি নিয়ে বম্বে চলে এসেছিলাম, আমার ফিরে যাওয়ার কোনও পথই ছিল না। এমনকী, যখন আমি ভালো কাজ পাচ্ছিলাম না। তখনও মনে হয়েছিল, এনএসডি থেকে পাশ করেছি মানে এ তো নয় যে কোনও ডাক্তার বলে দিয়েছে অভিনয় না করলে মরে যাব। আমি অন্য কাজ করেছি। আমি পাঁচ বছর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি, কাস্টিং ডিরক্টর হিসেবেও কাজ করেছি, কস্টিউম করেছি। নীনা গুপ্তাজির জন্য ক্রিয়েটিভেরও কাজ করেছি। যা যা এনএসডিতে শিখেছিলাম, সব প্রয়োগ করেছি। আমার একটাই মাথায় ছিল, আমায় বম্বেতে থাকতে হবে নিজের খরচে, যা ক্ষমতা, প্রশিক্ষণ আমার রয়েছে আমি তার ফায়দা তুলব। এমন কোনও ব্যাপার ছিল না যে পেটে পাথর বেঁধে অভিনয় করতে হবে।
অভিনেতারা প্রায়শই অবসাদে ভোগেন। সে বিষয়ে কী বলবেন?
দেখুন আমার সঙ্গে তো এমন কিছু হয়নি। আপনাকে বললামই, ভালো কাজ যখন পাইনি, অন্যান্য কাজ করতে শুরু করে দিই। নিজেকে লিমিটেড রাখা উচিত নয়। জানতে হবে তোমার দায়িত্ব, কর্তব্য কী? একটা জেদের পিছনে ছোটা কি এতটাই প্রয়োজনীয়?
'সন্তোষ' বিষয়ভিত্তিক ছবি, তা তো সারা ভারতের ঘটনা।
শুধু ভারতবর্ষ কেন সারা বিশ্বে এমনটা হয়। আমার একটা জেরার দৃশ্য রয়েছে সেটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। মানসিকভাবে ক্লান্ত করে দিয়েছিল। আরেকটা সিন আছে যখন আমি মামলাটা নিয়ে এক মন্ত্রীর কাছে যাই। সেটাও বুকে মোচড় দেয়। এই দুটো সিন দুরন্ত।
এতদিন ধরে অভিনয় করছেন। কার সঙ্গে কাজ করে সবেচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছেন?
আমার সবার সঙ্গেই দারুণ সম্পর্ক। রাস্তায় গেলে অচেনা মানুষের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমার 'পঞ্চায়েত' টিম খুব ভালো। এই ছবিতে সাহানার সঙ্গে দারুণ মজা করেছি। যেহেতু আমরাই মুখ্য চরিত্র ছিলাম। লোকেশনে যাওয়া-আসা একসঙ্গে, হোটেলে বসে আড্ডা, সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করা। সাহানা একেবারে মাটির মানুষ।
ছবিটি ব্রিটেনের তরফ থেকে অস্কারে না গিয়ে যদি ভারতের পক্ষ থেকে যেত, তাহলে কি বেশি খুশি হতেন অভিনেত্রী?
না না, তাতে কি আসে যায়? আমার কাজ ভালো লাগছে, মানুষ প্রশংসা করছেন, এত বড় বড় মনোনয়ন পাচ্ছে ছবিটা, এটা একটা বিশাল ব্যাপার।
'লাপাতা লেডিজ'-এর সময় অনেকে তো বলেন পায়েল কাপাডিয়ার 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট' গেলে ভালো হত...
কী জানেন তো...সবারই নিজ নিজ পছন্দ থাকে। কেউ সিনেমা পছন্দ করেন, কেউ তথ্যচিত্র। সবার পছন্দ আলাদা।
ঈশ্বরের কৃপায় যদি 'অস্কার' পেয়ে যায় 'সন্তোষ'। তাহলে কী করবেন?
সে তো ছবি পাবে, পরিচালক পাবেন। আমি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে সেলিব্রেট করে নেব। আর ঈশ্বরকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাব। নিজেকে আরও ভালো কাজের জন্য তৈরি রাখব। হয়তো আমার কাছে এই অপশন থাকবে যে নিজের জন্য ভালো কিছু বেছে নিতে পারব। হয়তো মানুষজন আমাকে ভালো কাজ দেবেন।