এই মুহূর্তে বলা যায়, অভিনেতা সোহম মজুমদার অনেকটাই মুম্বইয়ের। পর পর হেভিওয়েট হিন্দি প্রোজেক্টে কাজ করে ফেলেছেন। তা সত্ত্বেও বাংলা ছবির আকর্ষণে, শিকড়ের টানে বারে বারে এই শহরে কাজ করতে চান। শুক্রবারই আসছে সোহম মজুমদার অভিনীত ‘পাটালীগঞ্জের পুতুলখেলা’। মুম্বইয়ে পর পর কাজ, সঙ্গে নতুন বাংলা ছবি, দারুণ ব্যালান্স করছেন অভিনেতা। কথা বললেন শম্পালী মৌলিক।
অনেকদিন পরে আবার বাংলা ছবিতে, এই ছবিটা করতে রাজি হলেন কেন, জিজ্ঞেস করতে সোহমের সহজ উত্তর, "প্রথমত, পরিচালক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। কারণ, আমি ছোটবেলা থেকে ‘মীরাক্কেল’ দেখে বড় হয়েছি। আমরা যেহেতু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তাম, সবসময় বাংলা সিরিয়াল বা বাংলা কনটেন্ট সেভাবে আমাদের ছুঁয়ে যেত না। ‘সিঁধেল চোর’, ‘হাঁউ মাউ খাঁউ’ বা ‘জনতা এক্সপ্রেস’ দেখেছি। বিশেষ করে ছুঁয়ে গিয়েছিল ‘মীরাক্কেল’, যার পরিচালক ছিলেন শুভঙ্করদা। ওটার ব্র্যান্ড অফ কমেডি, মীর স্যরের ইন্টেলিজেন্স, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রজতাভ স্যর, শ্রীলেখাদি সকলের কাজ খুব ভালো লাগত, ভীষণ এন্টারটেনিং ছিল শোটা। তাই যখন শুভঙ্করদা আমাকে ফোন করে, খুব খুশি হয়েছিলাম। তার উপর জেনুইনলি ভালো লেগেছে গল্পটা। এখানে পুতুল খেলার দুটো স্তর আছে। ছবিতে আমি একজন পুতুল নাচিয়ে। বেলি পুতুলের নাচ দেখাই। আরেকটা স্তর হচ্ছে, আমরা কীভাবে অন্যের হাতের পুতুল হয়ে যাই। ফলে রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করেছে যেমন, ছবিতে রোম্যান্স-যোগও আছে তেমন। খুব মজার চিত্রনাট্য, এটাও ছবিটায় সম্মতি দেওয়ার কারণ।"
'ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি' আর ‘দিলখুশ’-এর পর বাংলায় সেভাবে আর কাজ করেননি, বা করলেও সেগুলো এখনও সামনে আসেনি। বাংলায় এই বিরতি নেওয়া কি ইচ্ছে করেই? "কিছুটা ইচ্ছাকৃত। রাহুলদাকে খুবই ভালোবাসি। তাহলেও বলছি, মনে হয়েছিল ‘দিলখুশ’ যে ছবিটা আমরা বানাতে চেয়েছিলাম, সেখান থেকে সরে গিয়েছিল। হিট-ফ্লপটা ব্যাপার নয়। রাহুলদার সঙ্গে কথা বলেও এটা মনে হয়েছিল। এটা আমাদের সকলের সামগ্রিক ব্যর্থতা। তখন ভাবলাম একটু সময় নিই। চিত্রনাট্য পড়ি, দেখে কাজ করি। হয়তো আগে চাকচিক্য বা ব্র্যান্ডিং বেশি দেখছিলাম। আর হ্যাঁ, মুম্বইয়ে লম্বা সময়জুড়ে কাজ হয়। ২০২৩-এ ‘সিটাডেল’ এবং ‘স্কাইফোর্স’-এর শুট পর পর হয়েছিল। দুটোই ছ-সাত মাস করে। ফলে তখন বাংলায় অন্যকিছু করা সম্ভব ছিল না", বললেন সোহম।
'সিটাডেল হানিবানি' তো দারুণ সফল, কেমন লাগছে? সোহমের জবাব, "ভালোই লাগছে (হাসি)। এটা প্রথম ভারতীয় শো যেটা আমেরিকান আমাজন চার্টস-এও শীর্ষে ছিল। তবে নম্বরের থেকে বেশি ম্যাটার করে আমার কাছে যে কী বলা হচ্ছে। রাজ এন ডিকে, রুশো ব্রাদার্স– এ সব বড় বড় নাম আছে, ফলে শোটা হয়তো দেখবে লোকে, কিন্তু দেখার পর কী বলছে সেটাই ম্যাটার করে। তবে সত্যি, এই কাজের জন্য যত প্রশংসা পেয়েছি, এতটা আশা করিনি।”
শাহিদ কাপুর, বরুণ ধাওয়ান, অক্ষয় কুমার, ইশান খট্টর প্রমুখের সঙ্গে কাজ করে ফেলার পরেও মুম্বইয়ে অডিশন দিতে কেমন লাগছে? "হ্যাঁ, অডিশন দিচ্ছি, অনেকের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়। অনেকেই ভীষণ প্রতিভাবান। জানি বড় বড় কিছু কাজ করে ফেলেছি কিন্তু আমি পিআর স্কিল ল্যাক করি। শুধু এই কারণে নয়, বম্বেতে কাজের ধরনই এমন। এই পদ্ধতিটা আমার ডেমোক্র্যাটিক লাগে। অডিশন দিয়ে কাজ পেলে সত্যি তৃপ্তি হয়", স্পষ্ট বললেন অভিনেতা। ২৪ জানুয়ারি আসছে অক্ষয় কুমার, বীর পাহাড়িয়ার অভিনীত ‘স্কাই ফোর্স’। সেই ছবিরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সোহম। এছাড়া আরও কটা বাংলা ছবি আসবে তাঁর চলতি বছরে। যেমন, ‘গোপনে মদ ছাড়ান’ (পরিচালনা তথাগত মুখোপাধ্যায়), ‘মায়া সত্য ভ্রম’ (পরিচালনা শমীক রায়চৌধুরি), আরও একটা বাংলা ছবির কথাও চলছে।
‘পাটালীগঞ্জের পুতুলখেলা’-য় সোহম জুটি বেঁধেছেন দিতিপ্রিয়া রায়ের সঙ্গে। একেবারে ফ্রেশ জুটি। এই মুহূর্তে কেউ যদি সোহম-শোলাঙ্কিকে জুটি করে ছবি করেন, সেটাও ফ্রেশ পেয়ার হবে। কতটা খুশি হবেন? যদিও সৌরভ চক্রবর্তীর ওয়েব সিরিজ ‘সাড়ে সাঁইত্রিশ’-এ সোহম-শোলাঙ্কি আগে কাজ করেছেন, যেটা লোকে এখনও দেখেনি। সেই প্রসঙ্গ তুলতে সোহম বললেন, "আমরা দুজনেই পেশাদার অভিনেতা। প্রথমে আমি স্ক্রিপ্টটা কেমন দেখব। শোলাঙ্কির বিপরীতে কেউ অফার করল, কিন্তু স্ক্রিপ্ট খারাপ, আমি করব না। স্ক্রিপ্ট ভালো হলে, টিম ঠিকঠাক হলে নিশ্চয়ই খুশি হয়ে কাজ করব ওর সঙ্গে। কারণ, ওকে ‘সাড়ে সাঁইত্রিশ’-এ দেখেছি, আর রিসেন্টলি ‘বোকা বাক্সতে বন্দি’ শোতে দেখলাম, নিজেকে ও অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। এমন অ্যাক্টরের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভালো লাগবে।"
দুজনের ছবিই আজ একইদিনে রিলিজ, কী বলবেন? সোহম বললেন, "জেনুইনলি চাইব ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ ভালো করুক। ইনফ্যাক্ট ‘অপরিচিত’-ও সফল হোক চাইব, ইশা, ঋত্বিকদা রয়েছে। কিন্তু আমি একটু কমপিটিটিভ। চাইব বাকি দুটোর থেকে ‘পাটালীগঞ্জের পুতুলখেলা’ একটু এগিয়ে থাকুক। যারা অন্য কথা বলছে, তারা মিথ্যে বলছে (হাসি)।" এই সোশাল মিডিয়ার বিস্ফোরণের যুগে নিজের জীবন প্রাইভেট রাখেন কীভাবে বা কেন? সোহমের স্পষ্ট কথা, "কিছু জিনিস আমরা না চাইতেও পাবলিক হয়ে যায়, কারণ আমাদের জীবনটাই তাই। জীবন প্রাইভেট তখন রাখা যায় যখন সীমারেখাটা মান্যতা দেয় লোকজন। আমি বাড়তি চেষ্টা করি না। প্রাইভেট লাইফ পাবলিক করতে আমার অসুবিধা নেই, কিন্তু কাজের থেকে ব্যক্তিগত জীবনকে প্রাধান্য দিলে অসুবিধা আছে।"