সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : শতাব্দী প্রাচীন দ্বীপ। প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণপশ্চিমে চিলি ভূখণ্ডের ইস্টার আইল্যান্ডে মোয়াই উপজাতির মুখ দেওয়া ভাস্কর্যগুলো দেখে মনে হয় যেন জীবন্ত জীবাশ্ম সব। এই ভাস্কর্যই ইস্টার আইল্যান্ডকে ইউনেসকোর তরফে এনে দিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা। কিন্তু এই সৌন্দর্য এবার ভগ্নপ্রায়। পরিবেশের বদলে এই দ্বীপের সুন্দর মূর্তিগুলি ক্ষয়ীভূত হতে হতে স্রেফ চৌকো পাথরে বদলে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভাস্কর্যের গায়ে একধরনের শৈবালের জন্ম পাথুরে কাঠিন্যকে অনেকটা মাটির মতো নরম করে দিচ্ছে। আর তাতেই মূর্তি ভেঙে ভেঙে পড়ছে।
[ইমরান খানকে নোবেল দেওয়ার দাবি পাক নাগরিকদের, বিশ্বজুড়ে হাসির রোল]
বিশাল মুখমণ্ডল, উন্নত কপাল, টিকলো নাক, পুরু ঠোঁট। ১২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপাঞ্চলে বসতি তৈরি করেছিলেন মোয়াই উপজাতির মানুষজন। সেখানেই হাজার হাজার বছর ধরে বসবাস করেছে এই উপজাতি। পরবর্তী সময়ে তাঁরাই এখানকার নুড়ি, পাথর এবং অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে নিজেদের মুখের আদল তৈরি করে। তা এত নিখুঁত যে একঝলক দেখে মনে হয়, জ্যান্ত। এইরকম অন্তত হাজার খানেক মূর্তি আছে। এই ভাস্কর্যগুলোই পাশের বিস্তীর্ণ জলাভূমির কবল থেকে ইস্টার দ্বীপকে এতদিন সুরক্ষিত রেখেছিল। সবুজ পাহাড়ি এলাকায় এমন প্রাকৃতিক ভাস্কর্যের টানে ইস্টার আইল্যান্ড ভূপর্যটকদের এক প্রিয় দর্শনীয় স্থান। কিন্তু পরিবেশ বদলের জন্য সুন্দর স্থাপত্য ক্ষয়ের কবলে পড়েছে। শ্যাওলা খেয়ে ফেলছে কারুকাজ, সূক্ষ্মতা। চিলির জাতীয় উদ্যান কর্পোরেশনের প্রধান তাহিরা এডমন্ডসের কথায়, ‘আমার মনে হয়, আগামী একশ বছরের মধ্যে মোয়াইরা একটা আয়তক্ষেত্র হয়ে যাবে। এই আদলটুকু ছাড়া আর তাদের কোনও স্মৃতিও থাকবে না।’ নৃতত্ত্ববিদ এবং ইস্টার আইল্যান্ডের বাসিন্দা সোনিয়া হাওয়া জানিয়েছেন, ‘ কোনও যুগের উপর সময় এবং পরিবেশের প্রভাব কিছুতেই কাটানো যায় না, এটা স্বাভাবিক। তেমনই সেই যুগকেও নতুন করে ফিরিয়ে আনা যায় না। তার কিছু স্মৃতি ধরে রাখা যায় মাত্র, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের লোকজন ইতিহাসকে এসব দলিল চাক্ষুষ করতে পারেন।’ কিন্তু মোয়াই উপজাতির অনন্য স্থাপত্য কীর্তি চাক্ষুষ করার রোমাঞ্চ থেকে এবার বোধহয় বঞ্চিত হতে হবে সকলকেই।
[বিষ খাইয়ে ভারতীয় জওয়ানদের হত্যার ষড়যন্ত্র আইএসআই-এর!]
মূর্তি এভাবে ক্ষয়ে যাওয়ার কারণ পুরোটাই প্রাকৃতিক। সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধিতে পাহাড়ি জমির সিক্ততা বাড়ছে, দ্বীপের ঘাসজমিতে স্থানীয় জীবজন্তুর চলাচল কমছে, ভূমি ক্ষয় হচ্ছে। দ্বীপে জলের ভাগ বাড়তে থাকায় জন্মাচ্ছে শ্যাওলা। সেই শ্যাওলাই মূর্তির গায়ে সাদা দাগছোপ ফেলছে। সেইসঙ্গে শক্ত পাথরের প্রকৃতি বদল করে তা ভঙ্গুর করে তুলছে। ফলে তার আসল আকৃতি নষ্ট হয়ে, ভেঙেচুরে একটা চৌকো আকৃতি নিচ্ছে।
তবে এভাবে হারিয়ে যাওয়া থেকে এই ইতিহাসকে বাঁচানোর উপায়ও আছে। চিলির প্রকৃতি সংরক্ষকরা বলছেন, একধরণের রাসায়নিক দ্রবণ দিয়ে ওই স্থাপত্যগুলিতে জমা শ্যাওলা পরিষ্কার করা যায়। কিন্তু এটা তো কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। চিলি সরকার এই ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ বাঁচাতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত। আর ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা ইস্টার আইল্যান্ডে বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁরা একেকটি মূর্তি নিয়ে যান নিজের দেশে। সেগুলিকে যথাযথ পরিবেশে রেখে যত্ন করুন। তাহলেই জীবন্ত জীবাশ্ম হয়ে থেকে যাবে মোয়াই উপজাতি। ইতিমধ্যেই দেড়শো বছর আগেকার একটি ব্যাসল্ট পাথরের তৈরি মূর্তি ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানকার সংগ্রহশালায় সেটি রাখা হবে। চিলির গবেষকদের মতে, এভাবে বিশ্বের সেরা স্থাপত্যগুলি না হয় বাঁচানো গেল। কিন্তু প্রকৃতি থেকে সেই তো হারিয়েই যাচ্ছে ইস্টার দ্বীপের আসল আকর্ষণ।
The post ভিলেন পরিবেশ বদল, ক্ষয়ের মুখে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন প্রাকৃতিক স্থাপত্য appeared first on Sangbad Pratidin.